Advertisement
E-Paper

Arjun Namasudra: লড়ে জয়ী আত্মঘাতী অর্জুনের অশীতিপর মা

আকলরানির আর ঘোর কাটে না। নানা প্রশ্ন তাঁর মনে। বলেন, মৃত্যুর এত বছর পর অর্জুন যে ন্যায়বিচার পেল, এতেই তাঁর শান্তি। কিন্তু তাঁরা তো ভারতীয়ই ছিলেন। এর পরও কেন ছেলেটাকে হারাতে হল তাঁকে, বুড়ো বয়সে কেন এত আইন-আদালত করতে হল? কে নেবে এর দায়?

উত্তম সাহা

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০২২ ০৭:২০
আকলরানি নমঃশূদ্র। নিজস্ব চিত্র

আকলরানি নমঃশূদ্র। নিজস্ব চিত্র

অর্জুন নমঃশূদ্র ভারতীয়।

তাঁর মা আকলরানি নমঃশূদ্র ভারতীয়।

অর্জুনের বোন অঞ্জলি নমঃশূদ্র ভারতীয়।

২২ বছর শুনানির পরে বুধবার এই রায় দিলেন শিলচরের ফরেনার্স ট্রাইবুনালের সদস্য-বিচারক ধর্মানন্দ দেব। তার পরে ধরা গলায় ৮৩ বছরের আকলরানির প্রশ্ন— “আমরা তো ভারতীয়ই ছিলাম, ভারতীয়ই আছি। তবে আমাদের এই হেনস্থা কেন?”

এনআরসি নিয়ে যখন তুমুল চর্চা, কাছাড় জেলার কাটিগড়া থানার হরিটিকর গ্রামে গরিব দিনমজুর অর্জুন মা-কে জিগ্যেস করেন, “আমাদের কোনও সমস্যা হবে না তো?”

আশ্বাস দিতেন মা, “সেই ১৯৬৫ সাল থেকে ভোট দিচ্ছি আমি। কীসের সমস্যা?”

তার পরেও এক দিন সরকারি নোটিস ধরিয়ে দিয়ে গেল পেয়াদা— অর্জুন নমঃশূদ্র বিদেশি।

তাকে তুলে নিয়ে জেলে ভরলে বৃদ্ধা মা ও ছোট বোনের কী হবে? হেনস্থা, জেলখানা, অনিশ্চিত জীবন— সব কিছু থেকে রেহাই পেতে আত্মঘাতী হলেন দিনমজুর অর্জুন। সেটা ২০১২-র ৮ জুন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০১৪ সালে শিলচরে এসে লক্ষাধিক জনতার সমাবেশে অর্জুন নমঃশূদ্রের কথা উল্লেখ করেন। খোঁজ খবর করে অসমের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল অর্জুনের বাড়িতে গিয়ে দেখা করলেন আকলরানির সঙ্গে।

কিন্তু আশ্বাসই সার। এর পরে প্রতিদিন সঙ্কট বেড়েছে এই নমঃশূদ্র পরিবারের। দু’বেলা দুমুঠো খাবারও জুটছিল না। কেউ নেই পাশে। ছেলের মৃত্যুর পর রাষ্ট্রের সন্দেহের নজর পড়ে আকলরানির ওপর। বিদেশি সন্দেহে নোটিস যায় তাঁর নামেও। কিন্তু ছেলের পথ না-বেছে আইনি লড়াইয়ে নামলেন অশাতিপর মা। নিজের নাগরিক মর্যাদা তো বটেই, যে কারণে ছেলেটা মরল— অর্জুনও যে ভারতীয়, সেটা প্রমাণ করাও দায় সেই অসম লড়াইয়ের।

আকলরানি এ দিন মামলার উদাহরণ টেনে বলেন, ২০০০ সালে এক পুলিশ অফিসারের সন্দেহ হয় বাংলাভাষী অর্জুন আদতে বাংলাদেশি। কোনও তথ্যপ্রমাণ ছাড়া ওই পুলিশ রিপোর্টে লিখে দেন, ১৯৭১-র পরে ভারতে এসেছেন অর্জুন। সেই রিপোর্টের জেরে মামলা শুরু। তিনি নিজে বা কোনও পুলিশ অফিসার কখনও আকলরানির কাছে কোনও নথি দেখতে চাননি। ২০০০ সালের ওই মামলা আইএমডি ট্রাইবুনাল হয়ে ২০১১ সালে ফরেনার্স ট্রাইবুনালে যায়। অথচ এর বিন্দুবিসর্গ জানতে পারেননি অর্জুন বা আকলরানি। হঠাৎ এক দিন নোটিস— অর্জুন বিদেশি।

আকলরানির পক্ষে আদালতে সওয়াল করেন শিলচরের চার আইনজীবী অনিলচন্দ্র দে, অমরেন্দ্র পাল, চম্পক দে ও সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী। অনিলচন্দ্র সওয়ালে বিদেশি সন্দেহের গোটা ব্যবস্থাটাকেই দোষারোপ করেন। তিনি বলেন, পুলিশের খামখেয়ালিপনার কারণে অর্জুনের মত বহু মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

অবশেষে ২২ বছরের লড়াইয়ে জিত। শিলচরের ফরেনার্স ট্রাইবুনালের সদস্য-বিচারক ধর্মানন্দ দেব আজ আকলরানি নমঃশূদ্রকে ভারতীয় নাগরিক বলে ঘোষণা করলেন। বিচারক তাঁর রায়ে বলেন, ‘আকলরানি ১৯৬৫, ১৯৭০, ১৯৭৭ ও ১৯৮৫ সালের ভোটার তালিকার কপি জমা দিয়েছেন। ওই সব কপি সার্কল অফিসারের অফিসে পাঠানো হলে তাঁরা সেগুলো খতিয়ে দেখে যথার্থ বলে জানিয়েছেন। এর পরে আকলরানি ও তাঁর ছেলেমেয়েদের ভারতীয় নাগরিকত্ব নিয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই।’

আকলরানির আর ঘোর কাটে না। নানা প্রশ্ন তাঁর মনে। বলেন, মৃত্যুর এত বছর পর অর্জুন যে ন্যায়বিচার পেল, এতেই তাঁর শান্তি। কিন্তু তাঁরা তো ভারতীয়ই ছিলেন। এর পরও কেন ছেলেটাকে হারাতে হল তাঁকে, বুড়ো বয়সে কেন এত আইন-আদালত করতে হল? কে নেবে এর দায়?

NRC Assam Arjun Namasudra
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy