দশ হাজার কোটি টাকার দেনা কাঁধে নিয়ে পথচলা শুরু বিজেপি-অগপ-বিপিএফ তথা অসমের এনডিএ জোট সরকারের। অর্থমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা এই তথ্য-সহ রাজকোষের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে আজ বিধানসভায় একটি শ্বেতপত্র পেশ করলেন। তাঁর দাবি, পরিকল্পনা-বহির্ভূত ব্যয় বৃদ্ধি ও রাজস্ব আদায়ে বিদায়ী গগৈ সরকারের চূড়ান্ত ব্যর্থতার ফলেই রাজকোষের এই হাল। অবশ্য প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ, প্রাক্তন পূর্তমন্ত্রী অজন্তা নেওগ ও প্রাক্তন গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী রকিবুল হুসেন হিমন্তের মন্তব্যের বিরোধিতা করেন।
শপথ গ্রহণের পরেই শ্বেতপত্র প্রকাশের কথা জানিয়েছিলেন হিমন্ত। প্রকাশের দিন হিসেবে বেছে নিলেন চলতি বিধানসভা অধিবেশনের শেষ দিনটিকে। যে সৌহার্দ্যমূলক পরিবেশে বিধানসভা অধিবেশন এতদিন চলেছে, শ্বেতপত্র প্রকাশ হতেই সেই ছবিটা বদলে গিয়েছে। বিতর্কের জেরে স্পিকারকে অধিবেশনের সময়ও বাড়াতে হয়।
হিমন্ত হিসেব দিয়েছেন, ২০০০-২০০১ সালে কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায় আসার সময় সন্ত্রাস ও দারিদ্রে জর্জরিত রাজ্যেও রাজস্ব আদায়ের হার ছিল ১৫.৯৮ শতাংশ। কিন্তু সেই রাজস্ব আদায়ের মাত্রাই ২০১৪-১৫ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ১.৩৯ শতাংশ। যা রাজ্যে সর্বকালের রেকর্ড। এই অবস্থার জন্য কংগ্রেস সরকারকে দায়ী করে নতুন অর্থমন্ত্রীর প্রশ্ন, ‘‘রাজ্যে এত বিকাশের কথা বলা সরকার কেন কর আদায়ে ব্যর্থ হল?’’
অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেলের (এজি) দফতর থেকে পাওয়া তথ্য উল্লেখ করে শ্বেতপত্রে দেখানো হয়েছে, ২০১১-১২ সালে রাজ্যে বাজেট বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৩৮ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা। তার মধ্যে খরচ হয়েছিল ৭৮.৪৯ শতাংশ। অথচ ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪৯.৮০ শতাংশ। তাঁর অভিযোগ, টাকা কোথা থেকে আসবে তার নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়াই যথেচ্ছ ব্যয় মঞ্জুর করার ফলে কংগ্রেস সরকারের এই অবস্থা হয়েছিল। রাজনৈতিক ফায়দার দিকে লক্ষ্য রেখে অনুৎপাদনশীল ক্ষেত্রে খরচ বাড়ানো হয়েছে।
শ্বেতপত্র উদ্ধৃত করে হিমন্ত দেখান, পর্যাপ্ত টাকা না দেওয়ার জন্য কেন্দ্রের এনডিএ সরকারের বিরুদ্ধে কংগ্রেস যে অভিযোগ করেছে, তা ভুল। রাজ্যের সাংসদ মনমোহন সিংহ প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় ২০০৯-১০ অর্থবর্ষে অসম কেন্দ্র থেকে ১২,১৪৪ কোটি টাকা পেয়েছিল। ২০১৩-১৪ সালে তা হয়েছিল ২০,৫১২ কোটি টাকা। অর্থাৎ পাঁচ বছরে কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত অর্থের পরিমাণ বাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা। অন্য দিকে, ২০১৪-১৫ সালে মোদী সরকার রাজ্যকে দেয় ২৬,৩১৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে বাড়ানো হয় ৬ হাজার কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে সেই পরিমাণ ২৯,৬০৯ কোটি টাকা। মনমোহন পাঁচ বছরে যা দিয়েছেন, মোদী দু’বছর দিয়েছেন তার চেয়েও এক হাজার কোটি টাকা বেশি। হিমন্তের অভিযোগ, কিন্তু গগৈ সরকার গোটা সরকারি ‘ডেলিভারি সিস্টেম’-কেই পঙ্গু করে ফেলেছিলেন। রাজ্য পুরোপুরি কেন্দ্র নির্ভর হয়ে পড়েছে। হিমন্তের অভিযোগ, ‘‘ভোটমুখী রাজনীতি করতে গিয়ে গগৈ যে সুতো-কম্বল বিলি করেছেন তার বকেয়া টাকাও এখন আমাদেরই মেটাতে হবে।’’
হিমন্তের আরও অভিযোগ, ত্রয়োদশ পরিকল্পনা কমিশনে যখন উত্তর-পূর্বের অন্য রাজ্যগুলি রাজস্ব ঘাটতি দেখিয়ে ১০ থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা পায়, তখনই অসম ৩০০ কোটি টাকার পুরস্কারের লোভে নিজেদের রাজস্ব উদ্বৃত্ত দেখিয়ে কেন্দ্র থেকে মাত্র ৩৩৭৯ কোটি টাকা পেয়েছে। রাজ্যের বকেয়া ১১,৮৩৪ কোটি টাকার ‘ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট’ নিয়েও শ্বেতপত্রে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ বলেন, রাজ্যের ব্যাঙ্ক এ্যাকাউন্টে ৩৫০০ কোটি টাকা রয়েছে। রাজ্য মোটেই দেউলিয়া নয়। হিমন্ত পাল্টা হিসেব দিয়ে দেখান, ওই টাকা আসলে বিভিন্ন প্রকল্পের খরচ বাবদ পাঠানো কেন্দ্রেরই টাকা। অজন্তা নেওগ কেন্দ্র থেকে কম টাকা আসা, পরিকল্পনা কমিশন উঠিয়ে দেওয়াকে দায়ী করে বলেন, ‘‘ক্ষমতায় আসার পর থেকে
কংগ্রেসকে ১৯৯৬ সাল থেকে জমা বকেয়া মেটাতে হয়েছিল। নী তি আয়োগ তৈরি হওয়ার পর কেন্দ্রীয় বরাদ্দের কোনও আগাম হিসেব থাকছে না। তাই আন্দাজেই বাজেট তৈরি করতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে জনকল্যাণ ও সামাজিক ক্ষেত্রে পরিকল্পনা বহির্ভূত ব্যয় অসমের মতো রাজ্যে বরাবরই বেশি। নতুন সরকারও একই সমস্যায় পড়বে বলে ভবিষ্যগ্বাণী করেন নেওগ।
হিমন্ত বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর বিভিন্ন বিশেষ প্রকল্প, বকেয়া মহার্ঘ্যভাতা, বকেয়া বর্ধিত হারে বেতন, রাজ্যের তরফে প্রদেয় টাকা ও পূর্ত দফতরের বিভিন্ন থমকে থাকা প্রকল্প মিলিয়ে যে দশ হাজার টাকার ঘাটতি নতুন সরকারের কাঁধে রয়েছে কয়েক মাসের মধ্যে তা কাটিয়ে ওঠার উপায় বের করা হবে। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে রাজ্যকে ফের উন্নয়নের পথে নিয়ে যাওয়ার ভরসা দিয়েছেন সর্বানন্দ সোনোয়াল সরকারের সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy