Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Astronomy

চোখ মহাবিশ্বের অসীমে, চর্চায় জ্যোতির্বিজ্ঞান

জ্যোতির্বিজ্ঞান-চর্চার গোড়ার দিকে কথা দিয়ে শুরু করেন সুবীর। জানান, খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম শতকে মানুষের মনে প্রশ্ন ছিল, পৃথিবীর শেষ প্রান্তে গিয়ে যদি একটা বর্শা ছোড়া হয়, সেটা কোথায় পড়বে?

astronomy

—প্রতীকী ছবি।

সায়ন্তনী ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:৩৪
Share: Save:

এই মহাবিশ্ব ঠিক কত দূর বিস্তৃত? কোথায় এর শেষ, কোথায় শুরু? ব্রহ্মাণ্ড কি সীমাহীন? মানুষ যুগ যুগ ধরে এর উত্তর খুঁজে চলেছে। কিছু উত্তর মিলেছে, অজানা এখনও অনেকটাই। যা জানা গিয়েছে, তার সূত্র ধরেই কলকাতার ‘ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্স’ (আইসিএসপি)-এর জেএনসি অডিটোরিয়ামে ‘মহাকাশের মানচিত্র’ তৈরি করলেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কণা পদার্থবিদ সুবীর সরকার। সদ্য অনুষ্ঠিত এই বিজ্ঞান-আলোচনার প্রথমার্ধের নাম ছিল ‘সিইং দ্য এজ অব দ্য ইউনিভার্স’। দ্বিতীয়ার্ধে আইসিএসপি-র অধিকর্তা বিজ্ঞানী সন্দীপ কুমার চক্রবর্তী শোনালেন মহাবিশ্বের রাসায়নিক বিবর্তনের কাহিনি— ‘কেমিক্যাল ইভোলিউশন অব দ্য ইউনিভার্স সিনস বিগ ব্যাং অ্যান্ড দ্য অরিজিন অব লাইফ’।

জ্যোতির্বিজ্ঞান-চর্চার গোড়ার দিকে কথা দিয়ে শুরু করেন সুবীর। জানান, খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম শতকে মানুষের মনে প্রশ্ন ছিল, পৃথিবীর শেষ প্রান্তে গিয়ে যদি একটা বর্শা ছোড়া হয়, সেটা কোথায় পড়বে? কোনও দেওয়ালে গিয়ে ধাক্কা খাবে, নাকি খাদে গিয়ে পড়বে? সে সময়ে বিশ্বাস করা হত, মহাকাশের কোনও এক শেষ প্রান্ত আছে। ক্রমে সেই ধারণা বদলায়। ধাপে ধাপে পৃথিবীর আকার সম্পর্কে জানতে পারেন বিজ্ঞানীরা। ক্রমে মাপা হয় পৃথিবীর আয়তন, পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব, সূর্যের দূরত্ব। কিন্তু অসীম শূন্য নিয়ে প্রশ্ন, পাল্টা প্রশ্ন চলতে থাকে। সুবীরের কথায় উঠে আসে শেক্সপিয়র। ‘হ্যামলেট’-এ তিনি লিখেছিলেন, ‘‘আই কুড বি বাউন্ডেড ইন আ নাটশেল অ্যান্ড কাউন্ট মাইসেল্ফ আ কিং অব ইনফাইনাইট স্পেস।’’

সেই সঙ্গে এই প্রশ্ন ওঠে, আকাশে তাকালে যে তারা-রাশি দেখা যায়, তার বাইরেও কি আরও নক্ষত্র রয়েছে? ১৬৭২ সালে বিজ্ঞানী অটো ফন গেরিক বলেন, যদি সাদা গাছের গুঁড়ির জঙ্গলের দিকে তাকিয়ে দেখি, তা হলে একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব পরে একটা সাদা দেওয়াল আছে বলে চোখে ভ্রম তৈরি হবে। আকাশেও হয়তো এমনই ‘তারাদের জঙ্গল’ রয়েছে, যা আমাদের চোখে একটা শেষ সীমা তৈরি করে। কিন্তু সেটাও আমরা কত দূর দেখতে পাই? অঙ্ক কষে এর পরিধি মাপা হয়েছে। কয়েকশো বছরের গবেষণায় ক্রমশ জানা গিয়েছে সৌরপরিবারে সদস্যদের আকার, তাদের দূরত্ব, তাদের গতিপ্রকৃতি।

সুবীর জানান, এডউইন হাবল ১৯২৩ সালে ‘অ্যান্ড্রোমেডা নেবুলা’র সন্ধান পান। কিন্তু পরে বুঝতে পারেন, অ্যান্ড্রোমেডা আসলে আমাদের মিল্কিওয়ের মতোই একটি গ্যালাক্সি বা ছায়াপথ। পৃথিবী থেকে প্রায় ২২ লক্ষ আলোকবর্ষ দূরে আছে সে।

অক্সফোর্ডের প্রবীণ বিজ্ঞানীর কথায় এ-ও উঠে আসে, আকাশের দিকে তাকিয়ে যা আমরা দেখছি, তা কিন্তু ‘অতীত’। সূর্যের দিকে তাকালে যা আমরা দেখতে পাই, তা ৮ মিনিট আগের দৃশ্য। সৌরজগতের সবচেয়ে কাছের নক্ষত্র ‘প্রক্সিমা সেঞ্চুরি’। তার দিকে তাকালে যা আমরা দেখতে পাই, সেটা ৪ বছর আগের ছবি। টেলিস্কোপে চোখ রেখে যে অ্যান্ড্রোমেডাকে দেখেছিলেন হাবল, তা-ও ২০ লক্ষ বছর আগের দৃশ্য।। সুবীর বলেন, ‘‘যত দূরের জিনিস আমরা দেখছি, ততটাই অতীতে চোখ রাখছি।’’ তিনি জানান, পরবর্তী কালে মহাবিশ্বের সীমানা প্রসঙ্গে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন বিজ্ঞানী ম্যাক্স টেগমার্ক। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমরা কেন্দ্রে রয়েছি। আমাদের চারপাশে ১৩৩০ কোটি আলোকবর্ষ পরিধির মধ্যে দৃশ্যমান মহাবিশ্ব। এই বৃত্তের বাইরেও স্পেস রয়েছে, কিন্তু অস্বচ্ছ হাইড্রোজেন প্লাজ়মায় আড়াল হয়ে রয়েছে তা।’’

বিজ্ঞানী সুবীর সরকারের কথার সূত্র ধরেই শুরু হয় অনুষ্ঠানের পরবর্তী অধ্যায়। বিজ্ঞানী সন্দীপ কুমার চক্রবর্তী জানান, যে ভাবে মহাকাশ রহস্য ক্রমশ উদ্‌ঘাটন হচ্ছে, সে ভাবেই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ রাসায়নিক বিবর্তন ঘটছে তার চরিত্রের। তিনি বলেন, ‘‘এক অনন্ত সম্ভাবনার মধ্যে সঠিক সময়ে সঠিক হারে লক্ষ লক্ষ ঘটনা ঘটার ফলে মানুষের সৃষ্টি হয়েছে। দ্য প্রোবাবিলিটি অব দ্য প্রোবাবিলিটি অব দ্য প্রোবাবিলিটি...’’ সন্দীপের কথায়, ‘‘একটা সুবিশাল কারখানায় দীর্ঘকাল ধরে কোটি কোটি ট্রায়াল অ্যান্ড এররে আমরা তৈরি হয়েছি। এক প্রচণ্ড জটিল বিক্রিয়া-শৃঙ্খলের অনিবার্য ফলাফল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Astronomy Science
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE