ত্রিপুরার গোমতী জেলা হাসপাতালের সামনে এখন প্রায়ই এসে দাঁড়ায় সুসজ্জিত কোনও না কোনও গাড়ি। অনেক সময়ে গাড়ির সঙ্গে থকে ব্যান্ডপার্টি। এই দৃশ্য প্রায় প্রতিদিনের। হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এক জন বললেন, ‘‘এটা আসলে নবজাতক মেয়েদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য। বহু পরিবারএখন এই ভাবে মেয়েদের স্বাগত জানায় পৃথিবীতে।’’
গত বুধবার যেমন আমতলীর লিটন এবং সুস্মিতার পরিবার ফুল আর বেলুন দিয়ে গাড়ি সাজিয়ে এনেছিল হাসপাতালে। কন্যাসন্তানকে বাড়ি নিয়ে গেলেন ওঁরা। গোমতী জেলা হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপারিন্টেনডেন্ট তথা হাসপাতালের স্ত্রী ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ কাজলকুমার দাস বলেন, ‘‘এই ধরনের দৃশ্য জেলা হাসপাতালের সামনে প্রায়ই দেখা যাচ্ছে। বাবা-মা এবং আত্মীয়-স্বজনেরা যে ভাবে উদ্যাপন করছেন, তা সত্যিই আশ্চর্য জনক এবং দেখতে খুব ভাল লাগছে।’’
হাসপাতালের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন লিটনের মা শিপ্রা দেবী। বললেন, ‘‘আমরা চেয়েছিলাম একটি কন্যাসন্তান আমাদের মাঝে আসুক। এখন সেই মুহূর্ত। এখন শুধু বাড়ি যাওয়ার অপেক্ষা। বাড়িতে সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।’’
নার্সিং অফিসার উমা দাস জানালেন, মানুষের মানসিকতায় পরিবর্তন তাঁদের চোখে পড়ছে। তিনি বলেন, ‘‘অভিভাবকদের একাংশ তো ওয়ার্ডের মধ্যেই অনুষ্ঠান করতে চান। হাসপাতালের নিয়ম মেনে তাঁদের বারণ করা হয়।’’ তিনি জানান, গত চার মাসে এই হাসপাতালে জন্মানো মোট ৪৭০টি সুস্থ শিশুর মধ্যে ২৫১টি ছিল কন্যাসন্তান। বেশির ভাগ বাবা-মা এবং তাঁদের আত্মীয়-স্বজনেরা সেই মেয়েদের জাঁকজমকের সঙ্গে, আনন্দ করে বাড়িতে নিয়ে গিয়েছেন। হাসপাতালের কর্মীরাও শামিল হয়েছেন সেই আনন্দে।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কমল রিয়াং এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, গোমতী জেলায় ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’-এর মতো সামাজিক সংস্কারমূলক প্রকল্পগুলির প্রভাব সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রতিফলিত হচ্ছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)