দেশের সাংসদদের নীরোগ পরমায়ু দেওয়ার জন্য খাদ্যতালিকায় ঘটছে ‘স্বাস্থ্য বিপ্লব’। সংসদের ক্যান্টিনে এ বার থাকবে রাগি, জোয়ার, বাজরার উপমা-রুটি, মুগ ডালের চিল্লা, গ্রিল করা মাছ, মুরগির মাংস, আনাজ। থাকবে ফাইবার সমৃদ্ধ স্যালাড, শ্রীঅন্নের খিচুড়ি, প্রোটিন-ভরা স্যুপ।
লোকসভা সূত্রে বলা হচ্ছে, নতুন খাদ্যতালিকায় কার্বোহাইড্রেট, সোডিয়াম থাকবে সামান্য পরিমাণে, অথচ শরীরের জন্য উপকারী উপাদান এবং ক্যালোরিতে তা হবে সমৃদ্ধ। প্রতিটি খাবারের পাশে লেখা থাকবে ক্যালোরির পরিমাণ।
কিছু নমুনা ইতিমধ্যেই সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়েছে। যেমন সম্বর এবং চাটনি-সহ রাগি মিলেট ইডলি (২৭০ কিলো ক্যালোরি), জোয়ার উপমা (২০৬ কিলো ক্যালোরি) চিনিহীন মিলেটের ক্ষীর (১৬১ কিলো ক্যালোরি)। থাকবে জনপ্রিয় খাদ্য চানা চাট, মুগ ডালের হালুয়াও।
অধিবেশনের ফাঁকে বেরিয়ে ২৯৪ কিলো ক্যালোরির রঙ বার্লি অথবা জোয়ারের স্যালাড, গার্ডেন ফ্রেশ স্যালাড (১১৩ কিলো ক্যালোরি), রোস্টেড টোম্যাটো, বেসিল শোরবা, ভেজিটেবল ক্লিয়ার স্যুপ খেতে পারবেন সাংসদরা। পানীয়ের ক্ষেত্রেও অধুনা প্রখ্যাত গ্রিন টি বা ভেষজ চা তো থাকবেই। এ ছাড়া, গুড়গন্ধী আম পান্না শরবত রাখা হবে চিনিতে চোবানো সোডা সরিয়ে।
এই নতুন খাদ্যতালিকার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল প্রধানমন্ত্রী মোদীর সাম্প্রতিক ‘মন কি বাত’ বক্তৃতায়। ভোজ্য তেলের পরিমাণ কমিয়ে মেদবৃদ্ধি কমানোর ব্যাপারে দেশে সচেতনতা বাড়ানোর কথা বলেছিলেন তিনি। ইতিমধ্যেই লোকসভা স্পিকার ওম বিড়লা সংসদ চলাকালীন নিময়িত স্বাস্থ্যপরীক্ষার আয়োজন করেন সাংসদদের জন্য। সুষম খাদ্যাভাস গড়ে তোলার জন্য বিশেষজ্ঞদের বক্তৃতার ব্যবস্থাও করা হয়।
নতুন প্রজন্মের সাংসদেরা নিঃসন্দেহে এই খাদ্য তালিকাকে স্বাগত জানাবেন— এমনই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তাঁদের অনেকেই নিয়মিত জিমে যান। ধূমপানের অভ্যাসও গত বিশ বছরে উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে। সেই সঙ্গে রসিক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা একটি প্রশ্নও তুলছেন। আজ সংসদে থাকলে এই মেনু কী চোখে দেখতেন প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সী, অটলবিহারী বাজপেয়ী, অরুণ জেটলির মতো ভোজনরসিকরা? জেটলির জন্য তেল গড়ানো ছোলে-বাটোরে আসত অমৃতসর থেকে! প্রিয়রঞ্জন দুপুরে বসতেন এক থালা চিকেন কাটলেট নিয়ে। বাজপেয়ী কড়া চিনির জলেবি আর ক্ষীর না খেলে বক্তৃতার আমেজ পেতেন না!
নতুন জমানায় এই ‘অনাচার’ আর ভাবতেও পারবেন না সাংসদরা।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)