মূল রাস্তার ধারে প্রাসাদোপম একটি বাড়ি। আর বাড়ির বাইরে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে একের পর এক বিলাসবহুল বিদেশি গাড়ি। এক ঝলক দেখলে মনে হতেই পারে, সেটি হয়তো কোনও ধনী ব্যবসায়ীর আবাসস্থল। তবে স্থানীয় মানুষজন থেকে শুরু করে উত্তরপ্রদেশের গাজ়িয়াবাদের বাসিন্দাদের একাংশ বাড়িটিকে চিনতেন পৃথিবীর কুমেরু প্রদেশের ছোট রাষ্ট্র ‘ওয়েস্ট আর্কটিকা’র দূতাবাস হিসেবে। আর সেই ভুয়ো দূতাবাসের আড়ালে চলত হাওয়ালা-সহ বিভিন্ন বেআইনি কাজকর্ম। সম্প্রতি তদন্তে নেমে এমনই তথ্য জানতে পেরেছে উত্তরপ্রদেশের বিশেষ টাস্ক ফোর্স। ওই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে হর্ষবর্ধন জৈন নামের এক ব্যক্তিকেও।
জানা গিয়েছে, বিদেশে কাজ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে মানুষজনের কাছ থেকে মোটা টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে হর্ষবর্ধন জৈন নামে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এ ক্ষেত্রে তিনি নিজেকে ওয়েস্ট আর্কটিকার ‘কনসাল জেনারেল’ হিসেবে দাবি করতেন বলে অভিযোগ। তাঁর আরও দাবি ছিল— তিনি নাকি ভারতে পলভিয়া, লডোনিয়ার মতো একাধিক ‘ভুয়ো’ দেশের প্রতিনিধি।
জানা গিয়েছে, হাওয়ালা পদ্ধতি আর্থিক লেনদেন এবং ভারত সরকারের বিভিন্ন গোপন নথি এবং তথ্য বিদেশে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে পাচারের অভিযোগ রয়েছে হর্ষবর্ধনের বিরুদ্ধে। উত্তরপ্রদেশের বিশেষ টাস্ক ফোর্সের আধিকারিকদের দাবি, বেআইনি কার্যকলাপকে আড়াল করতেই নিজেকে কনসাল জেনারেল হিসেবে প্রচার করেছিলেন হর্ষবর্ধন। ওয়েস্ট আর্কটিকার দূতাবাস তথা হর্ষবর্ধনের দফতরে হানা দিয়ে নগদ ৪৪ লক্ষ টাকা-সহ ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের একাধিক শিলমোহর, মোটা অঙ্কের বিদেশি মুদ্রা, অন্তত ১৪টি গাড়ির ভুয়ো নম্বর প্লেট (কূটনৈতিক) এবং একটি বহুমূল্য ঘড়ির সংগ্রহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে খবর।
জানা গিয়েছে, গাজ়িয়াবাদের একটি ভাড়া বাড়িতেই চলছিল এই ভুয়ো দূতাবাস। প্রাসাদোপম সেই গাড়ির প্রাঙ্গণে উড়ত ভারত এবং ওয়েস্ট আর্কটিকার পতাকা। সেই সঙ্গে বাড়ির ভিতরে ছিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে হর্ষবর্ধনের ভুয়ো ছবি। ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ছবিও।
প্রসঙ্গত, ওয়েস্ট আর্কটিকা হল পৃথিবীর দক্ষিণ-মেরু তথা কুমেরু প্রদেশের একটি এলাকা। ২০০১ সালে আমেরিকার নৌবাহিনীর এক আধিকারিক ট্র্যাভিস ম্যাকহেনরি ‘ওয়েস্ট আর্কটিকা’ নামের একটি দেশের প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সঙ্গে তিনি নিজেকে দেশটির স্বঘোষিত প্রধান হিসেবেও দাবি করেন। যদিও পৃথিবীর কোনও দেশই ট্র্যাভিসের এই দাবি তথা ওয়েস্ট আর্কটিকাকে স্বীকৃতি দেয়নি। আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী, পৃথিবীর কোনও দেশ কুমেরুকে নিজেদের ভূখণ্ড হিসেবে দাবি করতে পারে না। আর আন্তর্জাতিক আইনের এই সুযোগটিই নিয়েছিলেন ট্র্যাভিস।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)