১১এ!
এই আসনেই ছিলেন বিশ্বাসকুমার রমেশ— এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানের একমাত্র বেঁচে যাওয়া যাত্রী। আমদাবাদ থেকে সেই দুর্ঘটনা-পরবর্তী খবর করার পর সেই আসন বরাদ্দ হল আমার জন্যও!
সোমবার ইন্ডিগোয় আমদাবাদ থেকে বিকেল ৪টে ৫০ মিনিটের বিমান ছিল আমাদের। অফিস যে টিকিট পাঠিয়েছিল, সেটা দেখেই চমকে উঠলাম। আমারও সিট ১১এ! সহকর্মী চিত্রসাংবাদিকের আসন ১১সি। মনে প্রশ্নগুলো ভিড় করল দ্রুত। এটা তো জানলার ধারের সিট। বাঁ দিকেই কি? বিমান দুর্ঘটনার খবর করতে গিয়ে জেনেছি, বিশ্বাস বসেছিলেন বিমানের বাঁ দিকেই। তাঁর সামনে ছিল খানিকটা জায়গা। বাঁ পাশেই বিমানের আপৎকালীন দরজা। বিশ্বাস নিজে আমাকে বলেছেন, ভেঙে পড়ার আগে বিমানটি পেট থেকে দু'টুকরো হয়ে যায়। সেই ভাঙা অংশ দিয়ে হড়কে নীচে পড়েন তিনি। কিন্তু আমাদের যাত্রা স্বস্তির হবে তো? গত কয়েক দিনে আতঙ্ক বেড়েছে কয়েক গুণ। মনে হচ্ছিল, বাড়িতে যে সব কথা দিলাম, তা সবটা করতে পারব তো?
বিমানবন্দরে বাসে উঠে বিমানে যাওয়ার সময় অপেক্ষা করতে হল কিছুক্ষণ। তার মধ্যেই এক জন খবর নিয়ে এলেন, কিছু গোলযোগে বাস আসতে দেরি হচ্ছে। এক যুবক বলতে শুরু করলেন, ‘‘বাস দেরিতে আসুক, বিমান ঠিকঠাক উঠতে পারলেই হল!’’ তাঁর সঙ্গী হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘কলকাতায় তেমন কিছু হবে না। ওটা প্রাণের শহর।’’
বিমানে ঢুকে এক, দুই, তিন করে গুনে পৌঁছলাম ১১এ আসনের সামনে। মনের ভিতরে তোলপাড় নিয়েই কেটেছে বাকি যাত্রা, নির্বিঘ্নেই। আমি আর সহকর্মী চিত্রগ্রাহক ক্যামেরা তাক করে বসে ছিলাম, যদি এই আসন থেকে বিমান ভেঙে পড়ার জায়গাটা দেখা যায়! কিন্তু বিমান এমন ভাবে উড়েছে, ভেঙে পড়ার জায়গাটা কেন, আমদাবাদের কিছুই আলাদা করে ঠাওর করা যায়নি।
১১এ আসন ছেড়ে ওঠার সময় মনে পড়ল আরও এক নম্বরের কাহিনি। গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণী একাধিক দিন টিকিট বাতিল করে কেটেছিলেন ১২ জুন। পরিবার সূত্রের খবর, রূপাণী ভাবতেন ১২ জুন অর্থাৎ ১২০৬ তাঁর জন্য ভাল। আর সেই ১২ জুনেই মৃত্যু হল তাঁর।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)