মোগল স্থাপত্যশৈলীর প্রথম উদাহরণ হিসাবে তাকে চিহ্নিত করতেন পুরাতত্ত্ববিদেরা, শুক্রবার বিকেলে আচমকাই ভেঙে পড়ল দক্ষিণ দিল্লির পূর্ব নিজামুদ্দিন এলাকায় অবস্থিত মোগল সম্রাট হুমায়ুনের সেই সমাধিক্ষেত্রের (যা ‘হুমায়ুন টুম্ব’ নামে পরিচিতি) একাংশ! দুর্ঘটনায় অন্তত পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। সমাধিক্ষেত্র চত্বরের দরগার ছাদ ও সংলগ্ন প্রাচীরের একটি অংশ ভেঙে পড়েই এই দুর্ঘটনা ঘটে।
দিল্লির দমকল বিভাগকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা পিটিআই প্রথমে জানায় , ধ্বংসস্তূপের নীচে অন্তত আট জন চাপা পড়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর পরে উদ্ধারকারী দল পাঁচটি দেহ উদ্ধার করে। প্রকাশিত খবরে জানানো হয়েছে, বিকেল ৪.৩০ টার দিকে একটি গম্বুজের একাংশ ধসে পড়ে। তার তলায় চাপা পড়েন আট থেকে ন’জন। ফলে এখনও কয়েক জন চাপা পড়ে আছেন বলে আশঙ্কা। ছুটির দিন হওয়ার সে সময় সমাধিক্ষেত্রের অন্দরে অনেক পর্যটক ছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। দমকলের মোট পাঁচটি বাহিনী উদ্ধারের কাজ শুরু করেছে।
আরও পড়ুন:
ইউনেস্কোর ‘হেরিটেজ স্থাপত্যে’র তালিকায় রয়েছে দ্বিতীয় মোগল সম্রাট হুমায়ুনের সমাধিক্ষেত্র। ১৫২৬ থেকে ১৮৫৮, এই ৩৩২ বছরের মোগল শাসনকালে ভারত জুড়ে গড়ে উঠেছিল বহু স্থাপত্য। তার বড় অংশের মধ্যেই হুমায়ুনের সমাধিক্ষেত্রের ‘প্রভাব’ রয়েছে। ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে পানিপথের যুদ্ধে ইব্রাহিম লোদিকে হারিয়ে বাবর দিল্লি দখল করেছিলেন। কিন্তু পুরো পাঁচ বছরও রাজত্ব করতে পারেননি তিনি। বাবরের পুত্র হুমায়ুনকে শের শাহ সুরির কাছে যুদ্ধে হেরে গিয়ে ভারত ছেড়ে পালাতে হয়েছিল। তবে শের শাহের অকালমৃত্যুর পরে নিজের শক্তি বাড়িয়ে, নতুন উদ্যমে ফিরে এসে ফের মোগল সাম্রাজ্যের সিংহাসন দখল করেছিলেন তিনি। দিল্লির ‘পুরানা কিলা’য় শের মণ্ডল, আর আগরায় কাচপুরার মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন তিনি। ১৫৩৩ সালে যে দিনা-পানাহ বা ‘পুরনো কেল্লা’ হুমায়ুন নির্মাণ করেছিলেন, তার কাছেই এই সমাধিসৌধটি অবস্থিত। ১৫৫৬ সালে হুমায়ুন মারা যান। ১৫৬২ সালে তাঁর স্ত্রী হামিদা বানু বেগম বুখারার স্থপতি মির্জা গিয়াসকে দিয়ে বেলেপাথরের ওই সমাধিক্ষেত্র নির্মাণ করিয়েছিলেন। মোগল ইতিহাসে এটিই প্রথম উদ্যান সমাধিক্ষেত্র।