Advertisement
E-Paper

শিক্ষিকা শুভ্রাদেবীর স্মরণে ছুটি স্কুলে

স্কুলে তখন ক্লাস চলছিল। হঠাৎ একটা খবর যেন সবকিছু ওলটপালট করে দিল। সংবাদমাধ্যমের দৌলতে তখন সবাই জেনে গিয়েছে, ভারতের ‘ফার্স্ট লেডি’ তথা দেশের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী শুভ্রা মুখোপাধ্যায় প্রয়াত। খবরটা শোনা মাত্রই বন্ধ হয়ে যায় ঘাটালের বীরসিংহ বিদ্যাসাগর বালিকা বিদ্যাপীঠ।

অভিজিৎ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৫ ১৮:৫৪
শুভ্রা মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে নীরবতা পালন স্কুলে। —নিজস্ব চিত্র।

শুভ্রা মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে নীরবতা পালন স্কুলে। —নিজস্ব চিত্র।

স্কুলে তখন ক্লাস চলছিল। হঠাৎ একটা খবর যেন সবকিছু ওলটপালট করে দিল। সংবাদমাধ্যমের দৌলতে তখন সবাই জেনে গিয়েছে, ভারতের ‘ফার্স্ট লেডি’ তথা দেশের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী শুভ্রা মুখোপাধ্যায় প্রয়াত। খবরটা শোনা মাত্রই বন্ধ হয়ে যায় ঘাটালের বীরসিংহ বিদ্যাসাগর বালিকা বিদ্যাপীঠ। এই স্কুলেই একসময় শিক্ষকতা করেছেন শুভ্রাদেবী। স্কুলের আনাচে-কানাচে এখনও তাঁর প্রবল উপস্থিতি। অধুনা শুভ্রাদেবী কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে রাইসিনা হিলসের বাসিন্দা হলেও তাঁর সঙ্গে স্কুলের আত্মিক যোগ এখনও অটুট।

স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মীরা রায়ের কথায়, “স্কুলে আসার পর আমি ওঁর সম্পর্কে অনেক গল্প কথা শুনেছি। ওঁকে নিয়ে আমাদের গর্বও ছিল। আজকের এই খবর শুনে প্রথমে কী করব বুঝতে পারছিলাম না। পরে সকলের সঙ্গে আলোচনা করে স্কুলে ছুটি দিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।’’ স্কুলের প্রাক্তন সহ-শিক্ষিকা শুভ্রাদেবীর মৃত্যুর খবরে শোকে বিহ্বল বীরসিংহ গ্রামও। স্ত্রীর চাকরির সূত্রে প্রণববাবুও বহুবার গ্রামে এসেছেন। আজ সে সব ছবি যেন চোখের সামনে ভাসছে বীরসিংহবাসীর। বিদ্যাসাগর বালিকা বিদ্যাপীঠে মঙ্গলবার শুভ্রাদেবীর স্মরণে নীরবতা পালন করেন ছাত্রছাত্রী, শিক্ষিকারা। তারপরই স্কুলে ছুটি ঘোষণা করা হয়।

তখন ১৯৭১ সাল। অশিক্ষার আঁধার কাটাতে বীরসিংহ গ্রামে মেয়েদের এই স্কুলটি তৈরি হয়। ওই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতিহাসের শিক্ষিকা হিসেবে স্কুলে যোগ দেন শুভ্রাদেবী। স্কুলের এক শিক্ষিকা তথা শুভ্রাদেবীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু সরস্বতী রায় বলেন, “টিভিতে শুভ্রাদেবীর মৃত্যুর খবর প্রথম পাই। একসঙ্গে আমরা যখন স্কুলে শিক্ষকতা করতাম, তখন উনি আমার খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ওঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।’’ সরস্বতীদেবী আরও বলে চলেন, ‘‘শুভ্রাদি পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রীদের গানও শেখাতেন। তাঁর গলায় রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনলে মন ভরে যেত। মাত্র ছ’মাস উনি স্কুলে ছিলেন। এই অল্প সময়েই তিনি বীরসিংহ গ্রামকে নিজের করে নিয়েছিলেন।’’

স্কুল সূত্রে খবর, সেই সময় স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন রমা চক্রবর্তী। বীরসিংহ গ্রামে কৃষ্ণপদ ঘোষের বাড়িতে রমাদেবী থাকতেন। প্রথমে শুভ্রাদেবীও থাকতেন কৃষ্ণপদবাবুর বাড়িতেই। সরস্বতীদেবী বলেন, “শুভ্রাদি তখন মেয়ে শর্মিষ্ঠা (মুন্নি)কে নিয়ে একাই থাকতেন। মাঝে-মধ্যে ছেলে অভিজিৎ ও প্রণববাবুও আসতেন।’’ তিনি জানান, পরে কৃষ্ণপদবাবুর বাড়ি ছেড়ে শুভ্রাদেবীরা গ্রামেরই রাধানাথ চক্রবর্তীর বাড়িতে চলে যান।

টিভিতেই এ দিন শুভ্রাদেবীর মৃত্যুর খবর শুনেছেন রাধানাথবাবু ও তাঁর স্ত্রী রেখাদেবী। রেখাদেবীর কথায়, ‘‘প্রথমে ওঁরা নিজেরা রান্না করে খাচ্ছিল। পরে তাঁরা আমাদের এতটাই কাছের হয়ে যায় যে একসঙ্গেই রান্না হত। শুভ্রাদেবীর ছেলে-মেয়ে ও প্রণববাবুও আমাদের বাড়িতে রাত কাটিয়ে গিয়েছেন।’’ তিনি বলেন, ‘‘আমার ননদের সঙ্গে শুভ্রাদেবীর খুব ভাল সম্পর্ক ছিল। ওঁরা একসঙ্গে শাক, গেঁড়ি-গুগলি তুলতেও যেতেন। এ রকম কত যে স্মৃতি রয়েছে বলে শেষ করা যাবে না। সবই আজ শুধুই ইতিহাস হয়ে গেল।’’

suvra mukherjee pranab mukherjee president india school ghatal abhijit chakroborty
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy