ভারত কাতার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে একটি নতুন অধ্যায় রচনা হল আজ। নয়াদিল্লিতে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বৈঠকের পর দু’দেশের সম্পর্ককে কৌশলগত সম্পর্কের পর্যায়ে উন্নীত করার জন্য একটি চুক্তি সই করা হল। এর ফলে অদূর ভবিষ্যতে দু’দেশের মধ্যে নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সমঝোতা জোরালো হবে বলেই জানিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক।
পাশাপাশি বাণিজ্য, জ্বালানি, বিনিয়োগ, উদ্ভাবন, প্রযুক্তির উপর জোর দিয়ে একাধিক সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) বিনিময় হয়েছে দু’দেশের মধ্যে। প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং কাতারের আমির প্রতিনিধি পর্যায়ের আলোচনা করেছেন এবং উভয় দেশ আয়করের উপর দ্বৈত কর আরোপ এড়ানো এবং আর্থিক ফাঁকি রোধ সংক্রান্ত সংশোধিত চুক্তিতেও সই করেছেন। পরে বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ বৈঠকে স্থির হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপক্ষিক বাণিজ্যের মাত্রা যাতে ২৮০০ কোটি ডলারে পৌঁছয়, তার জন্যসক্রিয়তা শুরু করা হচ্ছে।প্রসঙ্গত এই পরিমাণ এখন ১৫০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি।
আজ ভারত-কাতার বাণিজ্য ফোরামে দেওয়া বক্তৃতায় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল জানিয়েছেন, ভারত এবং কাতার তাদের সম্পর্ককে জ্বালানি নির্ভরতা থেকে এগিয়ে কৃত্রিম মেধা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, সাইবার নিরাপত্তার মতো নিত্যনতুন প্রযুক্তির স্তরে নিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর। তাঁর কথায়, “আমার মতে, কাতার এবং ভারত একে অন্যের প্রতিযোগী নয় বরং একে অন্যের পরিপূরক হিসেবেই কাজ করছে।”
বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, এ দিন মোদী ও আমির শেখের মধ্যে আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়েও কথা হয়েছে। ইজ়রায়েল-প্যালেস্টাইন প্রসঙ্গ নিয়েও দীর্ঘক্ষণ কথা বলেনতাঁরা। উল্লেখ্য, কুয়েত, ওমান,সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, সৌদি আরবের সঙ্গেও কৌশলগত অংশীদারিত্ব রয়েছে ভারতের। এ দিনের বৈঠক প্রসঙ্গে জানানো হয়েছে, পশ্চিম এশিয়া নিয়ে যেমন কথা হয়েছে, তেমনই কথা হয়েছে ইজ়রায়েল-হামাস নিয়েও।
প্রসঙ্গত গত বছর প্রধানমন্ত্রী মোদীর দোহা সফরের সময়েই, প্রযুক্তি, বিনিয়োগ, জ্বালানি, বাণিজ্য-সহ নানা দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছিল ভারত। তখনই কৌশলগত সম্পর্কের ভিত গড়া হয়। তৎকালীন পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রা ২০২৪-এর ফেব্রুয়ারিতে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘‘এই সফর ভারত ও কাতারের মধ্যে একটি শক্তিশালী, গভীর, আরও বিস্তৃত, বিস্তৃত অংশিদারিত্বের ভিত্তিস্থাপন করবে।’’
এ’টি কাতারের আমিরের দ্বিতীয় ভারত সফর। এর আগে ভারতে এসেছিলেন ২০১৫ সালের মার্চে। প্রায় এক দশক পরে নয়াদিল্লিতেপা রাখলেন তিনি। বরাবরইকাতার ও ভারতের মধ্যে সুসম্পর্কই থেকেছে। কিন্তু মোদী জমানায় সেই সম্পর্কের আরও উন্নতি হয়েছে বলে দাবি বিদেশ মন্ত্রকের। ভারত চায় পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করতে। উদ্দেশ্য, দেশের জ্বালানির বিপুল চাহিদা পূরণ করা। সে ক্ষেত্রে কাতারেরভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দেশ থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসপায় নয়াদিল্লি।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)