বৃহস্পতিকে ছাড়িয়ে শনির উদ্দেশে উড়ে চলেছে মহাকাশযান ভয়েজ়ার-২। এমন সময় তার চোখে পড়ল বৃহস্পতির লেজ যেন শনিকে ছুঁয়ে ফেলেছে! এমন দৃশ্য আগে দেখা যায়নি। কিন্তু সত্যিই কি বৃহস্পতির লেজ আছে? সত্যিই কি শনিকে ছুঁয়ে থাকে? বৃহস্পতির এই লেজের মতো বস্তুটি আসলে ঠিক লেজ নয়। সূর্য থেকে নির্গত তড়িদাহত কণা বৃহস্পতির প্রবল চৌম্বকীয় ক্ষেত্রে আটকে পড়ে লেজের মতো বস্তু তৈরি করে। সে লেজের বিস্তার বহুদূর।
সোমবার যখন একই আকাশে বৃহস্পতি ও শনিকে সব থেকে কাছাকাছি দেখা গিয়েছে, তখন এই ১৯৮২ সালের ভয়েজ়ার-২ থেকে ধরা পড়া দৃশ্যের কথা কেন বললাম, তা ব্যাখ্যা করার আগে কতগুলি তথ্য জানানো প্রয়োজন। এই প্রথম টেলিস্কোপের দৃশ্যপটে একইসঙ্গে বৃহস্পতি ও শনি ধরা দিল। ১২২৬ সালের ৫ মার্চ যখন এই ঘটনা ঘটেছিল। ১৬১০ সালে গ্যালিলিয়ো টেলিস্কোপ আবিষ্কারের ১৩ বছর পরে ১৬২৩ সালের ১৬ জুলাই দুটি গ্রহ কাছাকাছি এলেও সূর্যের খুব কাছে থাকায় দেখা যায়নি। তাই এ বারই প্রথম। তবে এই নান্দনিক দৃশ্যের পাশাপাশি বিজ্ঞানীদের আরও যে আগ্রহটি রয়েছে তা বলতেই ভয়েজ়ারের ঘটনাটি বললাম।
১৯৮২ সালে ভয়েজ়ার বৃহস্পতির লেজের খবর দেওয়ার পর থেকেই তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছিল এবং সেটাও বোঝা গিয়েছিল, বৃহস্পতির ওই লেজ তখনই শনির কাছে যাবে যখন সূর্য, বৃহস্পতি এবং শনি একই সরলরেখায় থাকবে। বৃহস্পতির ওই বহুদূর বিস্তৃত তড়িদাহত লেজ শনিকে ছুঁয়ে ফেলতে পারে। সেই পুচ্ছ শনিকে ছুঁয়ে ফেললে কী ঘটে, তা জানার চেষ্টা বহু দিন আগেই শুরু হয়েছিল। কিন্তু এই মহাজাগতিক পরীক্ষা তো গবেষণাগারে সম্ভব নয়। এ ধরনের ঘটনার সময়েই তা জানা সম্ভব। কিন্তু একই সরলরেখায় তিন জনের আগমন দুই দশক পরে একবার ঘটে। সেই হিসেবে ২০২০ সালেও দুজনে একই সরলরেখায় এসেছিল। কিন্তু তখনও তেমন টেলিস্কোপ ছিল না যা এই দৃশ্য ধরে বিজ্ঞানীদের দিতে পারে। সময়ের সঙ্গে প্রযুক্তি উন্নত হয়েছে। তাই এ বার সেই পরীক্ষা হয়েছে। গত ২৩ নভেম্বর সূর্য, বৃহস্পতি ও শনি একই সরলরেখায় এসেছিল। নাসার চন্দ্র নামে কৃত্রিম উপগ্রহ সেই দৃশ্য ধরেছে। তবে গবেষণার ফল এখনও অজানা। হয় তো ভবিষ্যতে তা জানা যাবে, বৃহস্পতির ‘হৃদয়ের কথা’ আদৌ শনি শুনতে পেল কিনা!