ঘরের মাঠে সাফল্যের স্বাদ পেয়েছিলেন। তারপর ঘর থেকে বাইরের মাঠে ভাগ্যপরীক্ষায় সামিল হওয়া। সেখানে পর্যুদস্ত হওয়ার পরে এ বার ঘরের জমিও খোয়ালেন অরবিন্দ কেজরীবাল।
এ বারের দিল্লি পুর নির্বাচনে শুধু আসন সংখ্যা নয়, আম আদমি পার্টির শতকরা ভোটও অনেক কমে গিয়েছে। রাজনীতিকদের মতে, সামগ্রিক ভাবে কেজরীবাল বা আম আদমি পার্টি নামক যে রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য দু’বছর আগে যত দ্রুত উঠে এসেছিল, তত দ্রুতই সেটি মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে।
অণ্ণা হজারের দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলন থেকে আম আদমি পার্টি নামক রাজনৈতিক দলের জন্ম। কেজরীবাল অণ্ণা হজারেকে দূরে সরিয়ে রেখে দিল্লিতে যখন নতুন দল গঠন করলেন তখন তাঁর পক্ষে ছিল সহানুভূতির হাওয়া। গোটা দেশে ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদীর ঝড় থাকা সত্ত্বেও, ২০১৫ সালে শীলা দীক্ষিতকে সরিয়ে বিজেপি ক্ষমতা দখল করতে পারেনি। উল্টে অরবিন্দ কেজরীবাল দাপট দেখিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদীকে। এরপর গত দু’বছরে কেজরীবালের জনপ্রিয়তার রেখচিত্র নীচে নেমেছে। দুর্নীতির অভিযোগে দলের বহু নেতা জেলে গিয়েছেন। দিল্লির পুর সমস্যার সমাধান হয়নি। কেজরীবালের ঘনিষ্ঠ এক মন্ত্রী বলেন, ‘‘রাজ্যের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে মুখ্যমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ইচ্ছে হয়। দিল্লির বদলে ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে মোদী বিরোধী ফ্রন্ট গঠনে তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সঙ্গী করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও।’’ সে ক্ষেত্রেও কংগ্রেস-বিরোধিতা করে তিনি মস্ত ভুল করেছেন বলে মত অনেক রাজনীতিকের। বস্তুত আজ কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘সব আঞ্চলিক দলেরই এ বার বোঝা উচিত যে অন্ধ কংগ্রেস-বিরোধিতা পথ নয়।’’ রণদীপ যে আপকে বার্তা দিচ্ছেন তা নিয়ে কারও সন্দেহ নেই।
আরও পড়ুন: ৩টি মন্ত্রে দিল্লি জয় বিজেপির
পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে দলের অর্ধেকের বেশি বিধায়ক প্রকাশ্যে না হলেও, দলের ভিতরে কেজরীবালের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করছেন। এমনকী অনেকে মণীশ সিসৌদিয়াকে মুখ্যমন্ত্রী করার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু করে দিয়েছেন। চাপ বাড়ছে কেজরীবালের উপর। যাতে তিনি মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেন।
পঞ্জাবের কেজরী ঘনিষ্ঠ ভগবন্ত মান বেসুরো গেয়ে বলেছেন, ‘‘হেরে যাওয়ার পরে ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন তোলা অনুচিত।’’ অলকা লম্বার মতো নেত্রী গতকালও বলেছিলেন, বিজেপি তাঁকে আপ ছেড়ে বিজেপির হয়ে লোকসভায় প্রার্থী হওয়ার জন্য টোপ দিচ্ছে। সেই অলকাই আজ নির্বাচনী বিপর্যয়ের পরে দল থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। সরব কেজরীবালের গুরু অণ্ণাও। তিনি তাঁর প্রাক্তন শিষ্য সম্পর্কে বলেছেন, ‘‘সরকারে আসার আগে এরাই বলেছিল গাড়ি, বাংলো বা বেতন নেবে না। অথচ, কোনও প্রতিশ্রুতি রাখেনি।’’
অতিরিক্ত ক্ষমতার লোভ আর ব্যক্তিপুজোর মনোভাবই দিল্লির পুরভোটে আপ-কে ডোবাল বলে মনে করছেন দলের প্রাক্তন নেতা ময়ঙ্ক গাঁধী। কেজরীবালকে এক খোলা চিঠিতে তিনি বলেছেন, ‘‘শুধু ক্ষমতার লোভেই আপনি এত প্যাঁচালো ও কুৎসিত হয়ে গিয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy