Advertisement
E-Paper

বিকল এসি, পচা খাবার, রাজধানীতে দুঃস্বপ্ন-যাত্রা

বাতানুকূল কামরায় বসে ভ্যাপসা গরমে সেদ্ধ হতে হতে ওঁরা ভাবছিলেন, আর কত দুর্ভোগ কপালে আছে। ভোগান্তির ভাঁড়ার পূর্ণ হল, যখন হাতে পেলেন পচা খাবারের প্যাকেট! শনিবার দিল্লি থেকে ছাড়া শিয়ালদহ রাজধানী এক্সপ্রেসের যাত্রীদের এই অভিজ্ঞতা হয়েছে। এবং দেশের অন্যতম ‘অভিজাত’ ট্রেনে পরিষেবার হাল দেখে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে রেল-বাজেটে ঘোষিত বিবিধ উচ্চাকাঙ্খী পরিকল্পনার ভবিষ্যৎ নিয়ে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৪ ০৩:৫৮

বাতানুকূল কামরায় বসে ভ্যাপসা গরমে সেদ্ধ হতে হতে ওঁরা ভাবছিলেন, আর কত দুর্ভোগ কপালে আছে। ভোগান্তির ভাঁড়ার পূর্ণ হল, যখন হাতে পেলেন পচা খাবারের প্যাকেট! শনিবার দিল্লি থেকে ছাড়া শিয়ালদহ রাজধানী এক্সপ্রেসের যাত্রীদের এই অভিজ্ঞতা হয়েছে। এবং দেশের অন্যতম ‘অভিজাত’ ট্রেনে পরিষেবার হাল দেখে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে রেল-বাজেটে ঘোষিত বিবিধ উচ্চাকাঙ্খী পরিকল্পনার ভবিষ্যৎ নিয়ে।

শনিবার বিকেলে ট্রেন ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিপত্তির সূত্রপাত। এসি কামরায় গরম হাওয়ার দাপটে বেজায় অস্বস্তি। যাত্রীদের অভিযোগ: বারবার বলা সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ গোড়ায় আমল দেননি। ঘণ্টাখানেক বাদে কয়েক জন রেলকর্মী আসেন। যাত্রীদের শয্যায় চাদর বিছিয়ে তাঁরা কামরার ছাদে বসানো বাতানুকূল যন্ত্র পরীক্ষা করেন। হাওয়া পাইপের ভিতর থেকে টেনে বার করেন এক ঝুড়ি কালো ঝুল। গলদঘর্ম যাত্রীদের আশ্বাস দিয়ে যান, ‘‘এ বার ঠান্ডা পাবেন।’’

কোথায় কী? এক ঘণ্টা কেটে গেলেও অবস্থা বদলায়নি। যাত্রীরা চেঁচামেচি জুড়ে দেন। কেউ কেউ ডায়াল করেন কামরায় লেখা ‘হেল্পলাইন’ নম্বরে। ফের কর্মীরা আসেন। অভিযোগ, এ-দিক ও-দিক কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে বিদায় যাওয়ার আগে তাঁরা জানিয়ে যান, ‘কারশেডেই গোলমাল হয়েছে। রানিং ট্রেনে আর কিছু করা যাবে না।’

অগত্যা বি-১১ ভ্যাপসা গরমে হাঁসফাঁস করতে থাকে। ইতিমধ্যে রাতের খাবার আসে। বিধ্বস্ত যাত্রীরা প্যাকেট খুলে আঁতকে ওঠেন। ওঁদের অভিযোগ, খাবারের অধিকাংশই মুখে তোলা যায়নি। ভাত, ডাল, মাংস গরমে সব নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। “শুধু আইসক্রিমটা ঠিকঠাক ছিল। অন্য কিচ্ছু খেতে পারিনি।” বলেন যাত্রী অঞ্জু অধিকারী। দ্বিতীয় দফায় হট্টগোল শুরু হয়। কামরার যাত্রীরা একজোট হয়ে ট্রেন সুপারকে ঢেকে পাঠান। যাবতীয় অব্যবস্থা সম্পর্কে সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তাঁরা।

তাতে অবশ্য সুরাহা বিশেষ হয়নি। উল্টে সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ এসি মেশিন পুরোপুরি জবাব দিয়ে দেয়। গরম বাতাসটুকুও বন্ধ হয়ে যায়। বি-১১ কামরায় তখন দম বন্ধ হওয়ার জোগাড়। যাত্রী সুভাষ অগ্রবালের কথায়, “আমাদের পাশে ছিলেন এক জন ডায়ালিসিসের রোগী। ওঁর অবস্থা দেখে তো রীতিমতো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম!” হেল্পলাইনে খবর পেয়ে কর্মীরা আবার আসেন। বিস্তর চেষ্টাচরিত্র করে বাতানুকূল যন্ত্র চালুও করেন। কিন্তু তখনও ঠান্ডা হাওয়া মেলেনি। গরম বাতাসেই ‘প্রাণ জুড়োতে’ হয়েছে।

রেল-কর্তারা কী বলছেন?

এত কাণ্ডের পরে রবিবার পূর্ব রেলের শিয়ালদহ ডিভিশনের অফিসারদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা বলেছেন, এমন ঘটনা তাঁদের আদৌ জানা নেই। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্রের দাবি, এই জোনের কোনও কর্তার কাছে অন্তত এমন খবর নেই। তবে অন্য কোনও জোনে কিছু ঘটে থাকলে তাঁরা জানেন না। অন্য দিকে যাত্রীদের বক্তব্য: পূর্ব রেলের আওতাধীন ট্রেনটি থেকে শনিবার রাতে তাঁরা হেল্পলাইনের যে সব নম্বরে যোগাযোগ করেছিলেন, সব ক’টিতে শিয়ালদহ ডিভিশনের পরিচিতি ছিল। তা হলে বিভ্রাটের খবর কর্তাদের কানে পৌঁছল না কেন?

কর্তাদের তরফে ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। রেল-যাত্রায় হয়রানির ইতিবৃত্তেও দাঁড়ি পড়েনি। শনিবারই যেমন দানাপুর-হাওড়া এক্সপ্রেসের একটি কামরায় বাতানুকূল যন্ত্র বিগড়ে যায়। যাত্রীরা চুড়ান্ত দুর্ভোগে পড়েন। পরে রেল-কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি ঘোষণা করেন, ওই কামরার (এ-১) যাত্রীদের বাতানুকূলের ভাড়া ফেরত দেওয়া হবে। রেল-সূত্রের খবর, কামরাটিতে মোট ২৬ জন যাত্রী ছিলেন। এসি-বিভ্রাটের দরুণ ট্রেনটি এ দিন তিন ঘণ্টা দেরিতে হাওড়ায় পৌঁছেছে।

পরিকাঠামোর এ হেন রুগ্ণ দশা না-কাটলে ‘সেমি বুলেট’ ট্রেনই বা কত দূর সফল হবে, সে প্রশ্নও উঠে পড়েছে।

rotten food ac out of order rajdhani express
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy