সবই ভগবানের ইচ্ছা। এই ঘটনার জন্য কেউ দায়ী নন। ঈশ্বর চেয়েছেন, তাই হয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশের বেঙ্কটেশ্বর মন্দিরে শনিবার পদপিষ্টের ঘটনায় এমনই দাবি করলেন মন্দিরের নির্মাণকারী বছর চুরানব্বইয়ের হরিমুকুন্দ পান্ডা। ওড়িশার বাসিন্দা হরিমুকুন্দ। এই ঘটনার পর যখন তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগে আঙুল উঠতে শুরু করেছে, পাল্টা পান্ডা বলেন, ‘‘আমার ব্যক্তিগত জমিতে এই মন্দির বানিয়েছি। কেন আমি পুলিশ বা প্রশাসনকে জানাতে যাব? সবই ভগবানের ইচ্ছা। এই ঘটনার জন্য কেউ দায়ী নন।’’
শুধু তা-ই নয়, পান্ডা আরও বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে যত খুশি মামলা করুন। তাতে কোনও সমস্যা নেই।’’ মন্দিরের নির্মাতা পান্ডা আরও বলেন, ‘‘মন্দিরে পুণ্যার্থীদের সংখ্যা কমই থাকে। বিগ্রহ দর্শনের পর ভক্তেরা প্রসাদ গ্রহণ করে চলে যান। আমি কারও কাছে কিছু চাই না। আমি নিজেই ঠাকুরের ভোগ রান্না করি। নিজের টাকা খরচ করি।’’
মন্দিরটি নির্মাণের পর চার মাস আগে সেটি পুণ্যার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল। মন্দিরে পুণ্যার্থীদের যাতায়াত লেগেই থাকত। কিন্তু শনিবার কার্তিক একাদশী এবং বিশেষ তিথি উপলক্ষে একসঙ্গে ২০ হাজার পুণ্যার্থী হাজির হয়েছিলেন শ্রীকাকুলামের ওই মন্দিরে। আর তার জেরেই পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় বলে দাবি প্রশাসনের।
স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, অন্য শনিবারগুলিতে বেঙ্কটেশ্বর মন্দিরে তিন হাজারের মতো পুণ্যার্থী যাতায়াত হয়। কিন্তু কার্তিক একাদশী উপলক্ষে সাত গুণ বেশি পুণ্যার্থী হাজির হয়েছিলেন। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না থাকায় পরিস্থিতি আরও বিগড়ে যায়। প্রশাসনের দাবি, মন্দির কর্তৃপক্ষ এই বিপুল সমাগমের জন্য আগে থেকে কোনও অনুমতি নেননি। একে সাত গুণ বেশি পুণ্যার্থীর আচমকা হাজির হওয়ায় সমস্যা তো বেড়েই ছিল। তার মধ্যে মন্দিরের প্রবেশ এবং বেরোনোর একটি পথ একটি হওয়ার কারণে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছিল। আচমকা হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় ন’জনের। তাঁদের মধ্যে আট জন মহিলা এবং এক কিশোর রয়েছে। আহত হয়েছেন ২৫ জন। তবে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন প্রশাসন। ফলে মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শ্রীকাকুলামের কাসিবুগ্গার পলাশ মণ্ডলে তিরুমালার আদলে বেঙ্কটেশ্বর মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়।চার মাসে আগে মন্দিরটি পুণ্যার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল। শ্রীকাকুলাম পুলিশের প্রধান কেভি মহেশ্বর রেড্ডি জানিয়েছেন, ২০টি সিঁড়ি উঠে বিগ্রহের সামনে পৌঁছোনো যায়। সিঁড়ির দু’পাশে রেলিং দেওয়া। তবে প্রবেশ এবং বাইরে বেরোনোর পথ একটাই। ভিড়ের চাপে স্টিলের রেলিং ভেঙে যেতেই আতঙ্কে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। আর তার জেরেই পদপিষ্টের ঘটনা ঘটে। মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডু ঘটনা প্রসঙ্গ বলেন, ‘‘যদি পুলিশকে আগে জানানো হত, তা হলে হয়তো এই ঘটনা এড়ানো যেত। যাঁরা এই ঘটনার জন্য দায়ী, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ এক পুণ্যার্থী জানান, সকাল ৯টা পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। তার পর থেকেই পুণ্যার্থীদের ভিড় বাড়তে থাকে। মন্দিরে প্রবেশের পথ সঙ্কীর্ণ হওয়ায় দমবন্ধের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। তাঁর কথায়, ‘‘আমি রেলিংয়ের ধারেই দাঁড়িয়েছিলাম। হঠাৎ সিঁড়ির উল্টো দিকের রেলিং ভেঙে পড়ল। সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজন হুমড়ি খেয়ে এক জন আর এক জনের উপর পড়লেন। এই পরিস্থিতিতে আতঙ্ক আরও ছড়াল। ফলে পুরো ভিড় বেসামাল হয়ে পড়ে। তখনই পদপিষ্টের ঘটনা ঘটে।’’