ভিড়ের চাপে একটি ইস্পাতের রেলিং ভেঙে গিয়েছিল অন্ধ্রপ্রদেশের বেঙ্কটেশ্বর মন্দিরে। তার ফলেই ভক্তেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। শুরু হয় হুড়িহুড়ি। পদপিষ্ট হয়ে ১০ জনের মৃত্যুর পর এমনটাই জানিয়েছে সে রাজ্যের পুলিশ। উপস্থিত ভক্তেরা গোটা ঘটনার জন্য দায়ী করেছেন মন্দির কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাকে।
অন্ধ্রের শ্রীকাকুলাম জেলার বেঙ্কটেশ্বর মন্দিরে প্রতি শনিবার দেড় থেকে দু’হাজার ভক্তের সমাগম হয়। এই মন্দির বেসরকারি ভাবে নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু ১ নভেম্বর, শনিবারের সঙ্গে ছিল একাদশী। কার্তিক মাসের একাদশী উপলক্ষে মন্দিরে ভিড় কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছিল। অভিযোগ, ভিড় সামাল দেওয়ার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা সেখানে ছিল না। পুলিশকেও আগে থেকে ভক্তসমাগম সম্পর্কে কোনও খবর দেওয়া হয়নি। মন্দিরে প্রবেশ এবং প্রস্থানের জন্য একটিমাত্র সঙ্কীর্ণ দরজা ছিল বলে জানিয়েছেন সিনিয়র পুলিশ কর্তা কেভি মহেশ্বর রেড্ডি। ভিড়ের চাপে ইস্পাতের রেলিং আচমকা ভেঙে যায়। ওই রেলিংটি আগে থেকেই বেশ দুর্বল ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। রেলিং ভেঙে পড়ার শব্দে নিমেষের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়।
আরও পড়ুন:
রেলিং ভেঙে যাওয়ায় ছ’ফুট উচ্চতায় দাঁড়িয়ে থাকা ভক্তেরা নীচে পড়ে যান হুড়মুড়িয়ে। অধিকাংশই ছিলেন মহিলা। তাঁদের হাতে ছিল পুজোর ডালি। নীচে যাঁরা দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁদের ঘাড়ের উপর পড়ে যান অনেকে। এর পর আর পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়নি। বেশ কিছু ক্ষণ পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সমাজমাধ্যমে ঘটনাস্থলের একাধিক ছবি এবং ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছিল। তাতে দেখা গিয়েছে, মন্দির চত্বরে ছড়িয়েছিটিয়ে রয়েছে একাধিক নিথর দেহ। যদিও ওই ছবি বা ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম।
পুলিশ জানিয়েছে, বেঙ্কটেশ্বর মন্দিরের মালিক মুকুন্দ পণ্ডা ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই মন্দির স্থাপন করেছিলেন। তার জন্য প্রশাসনের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতিও নেননি। প্রত্যেক মন্দির কর্তৃপক্ষের কর্তব্য, কোনও ধর্মীয় সমাগম থাকলে পুলিশকে নিরাপত্তার স্বার্থে বিষয়টি আগে থেকে জানানো। এ ক্ষেত্রে তা-ও করা হয়নি। আগে থেকে জানা থাকলে ওই মন্দিরে পৃথক ভাবে নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করতে পারত পুলিশ। অন্ধ্রপ্রদেশের মন্ত্রী নারা লোকেশ হাসপাতালে জখমদের দেখতে গিয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের তরফে নিহতদের পরিবারকে ১৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া, আহতদের চিকিৎসার জন্য দেওয়া হবে তিন লক্ষ টাকা করে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী, অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডুরা শনিবারই এই ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে শনিবার জানানো হয়েছে, নিহতদের পরিবার কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে দু’লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য পাবে। আহতেরা পাবেন ৫০ হাজার টাকা।
যে হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসা চলছে, সেখানকার এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, অন্তত ৩০ জন ভর্তি রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশের শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে। অনেকের হাড় ভেঙে গিয়েছে। এ ছাড়া, কয়েক জনের ছোটখাটো অন্য আঘাত রয়েছে।