ছবি পিটিআই।
লোকসভার ট্রেজারি বেঞ্চের প্রথম সারিতেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বসে। তাঁর সামনেই দিল্লির হিংসা রুখতে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকে শাহকে হটানোর দাবি তুলল কংগ্রেস। লোকসভায় দিল্লির হিংসা নিয়ে আলোচনায় আজ কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরীর দাবি, অমিত শাহ ইস্তফা দিন। হিংসার কারণ হিসেবে তাঁর ব্যাখ্যা, দিল্লির ভোটে যেখানে বিজেপি কম ভোট পেয়েছে, সেখানেই গোষ্ঠী সংঘর্ষ হয়েছে।
দিল্লির হিংসা নিয়ে সংসদে জবাবদিহি করতে গিয়ে কংগ্রেসকেই তুলোধোনা করলেন শাহ। ১৯৮৪-র শিখবিরোধী দাঙ্গার প্রসঙ্গ টেনে তিনি রাজীব গাঁধীকে কটাক্ষ করেন। ইন্দিরা গাঁধীর মৃত্যুর পর শিখবিরোধী দাঙ্গা নিয়ে রাজীব গাঁধীর প্রতিক্রিয়া তুলে ধরে অমিত বলেন, ‘‘অনেকে বলছেন দিল্লিতে হিংসা চলাকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এক বারও শান্তির আবেদন জানাননি। আমি শান্তির আবেদন জানিয়েছি। যদি না-ও জানিয়ে থাকি, তা হলে এটাও অন্তত বলিনি যে, বড় গাছ পড়লে মাটি কাঁপে।’’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাম না-করে পাল্টা সনিয়া গাঁধী, প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরার দিকে দিল্লির হিংসার আগে উস্কানির অভিযোগ তুলেছেন। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাম না করলেও, বিজেপি সাংসদ মীনাক্ষী লেখি সরাসরি সনিয়া-প্রিয়ঙ্কার নাম টানেন। দু’জনেরই অভিযোগ, রামলীলা ময়দানে সনিয়া ‘এসপার-ওসপারের লড়াই’-এর ডাক দেন। প্রিয়ঙ্কা রাস্তায় বেরিয়ে আসার ডাক দেন। তার পরেই শাহিন বাগে পথ আটকে আন্দোলন শুরু হয়। অধীর কটাক্ষ করেছিলেন, সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা কেশব বলিরাম হেগড়েওয়ারের গুরু বি এস মুঞ্জে ইটালির স্বৈরশাসক মুসোলিনির সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। মীনাক্ষী জবাবে রাহুলের সামনের সারিতে বসা অধীরকে বলেন, ‘‘আপনার পিছনে যিনি বসে, তাঁর দাদু মুসোলিনির সেনায় কাজ করতেন।’’
অমিতের অর্ধেক বক্তৃতার মধ্যেই কংগ্রেস সাংসদরা ‘ওয়াক আউট’ করেন। তবে অধীর বলেন, ‘‘আমরা ওয়াক আউট করিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বয়কট করেছি। বিভ্রান্ত করার বক্তৃতা শুনতে আসিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অন্তত নিজের দায়িত্বের প্রতি অবহেলা, ব্যর্থতা স্বীকার করা উচিত।’’
প্রধানমন্ত্রীর দিকেও আঙুল তুলছেন অধীর। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালকে মাঠে নামানো শাহের প্রতি মোদীর অনাস্থা প্রকাশ কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধেও আমাদের অভিযোগ রয়েছে। আপনারা দু’জনেই দিল্লির হিংসা চলতে দিয়েছেন। তিন দিন পরে ঘুম ভেঙেছে। প্রধানমন্ত্রীও এই আলোচনায় অংশ নিন।’’ মোদী অবশ্য আলোচনার সময় লোকসভামুখো হননি। অধীরের প্রশ্ন, ‘‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে কেন ডোভালকে নামতে হল? উনি তো সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর দফতরকে রিপোর্ট করেন। প্রধানমন্ত্রী কি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপর ভরসা রাখছেন না? প্রধানমন্ত্রীর দফতর, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দফতর— দু’টি ক্ষমতার ভরকেন্দ্র তৈরি হয়েছে।’’ মোদী কিংবা অমিত, কেউই কেন হিংসাপীড়িত এলাকায় গিয়ে মানুষকে ভরসা দিলেন না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন কংগ্রেস নেতা।
অমিতের অভিযোগ, সিএএ নিয়ে বিরোধীরা মানুষকে ভুল পথে চালিত করেছে। সিএএ-তে মুসলিমদের কেন বাদ দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে অন্য বিরোধী দল প্রশ্ন তুললেও বিজু জনতা দল সমর্থন করেছিল। কিন্তু সেই দলের নেতা পিনাকী মিশ্র বলেন, ‘‘আমরা সিএএ-কে সমর্থন করেছি। কিন্তু আশি বছর বয়সি মহিলারা শাহিন বাগে প্রতিবাদে বসে রয়েছেন। এ বার বোধহয় অন্য দেশে যেখানে মুসলিমরা সংখ্যালঘু, তাদের সিএএ-র আওতায় নিয়ে আসার কথা ভাবার সময় হয়েছে। এতে বার্তা যাবে যে সরকার তাদের জন্য চিন্তা করে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy