Advertisement
E-Paper

সে দিনও ছিল মঙ্গলবার! ৬ বছর আগের বালাকোট থেকে এই বারের ‘অপারেশন সিঁদুর’, মিল মোদীর ‘নিস্পৃহ’ ২৪ ঘণ্টাতেও

রাফাল উড়ল আর এক মঙ্গলবার রাতে— পুলওয়ামা কাণ্ডের ৬ বছর পরে পহেলগাঁও জঙ্গিহানার জবাব দিতে। এ বার পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীরের ৯টি জায়গায় জঙ্গি পরিকাঠামো লক্ষ্য করে ‘প্রিসিশন স্ট্রাইক’ হয়েছে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০২৫ ১৪:১১
PM Narendra Modi

বালাকোট অভিযান থেকে ‘অপারেশন সিঁদুর’, ২৪ ঘণ্টা আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শরীরী ভাষা কেমন থাকে? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। পুলওয়ামায় সিআরপিএফ কনভয়ে জঙ্গিহামলায় প্রাণ গিয়েছিল ৪০ জন জওয়ানের।

২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল। পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিহামলায় প্রাণ হারান ২৬ জন। যাঁদের মধ্যে ২৫ জন পর্যটক এবং এক জন কাশ্মীরি ‘গাইড’।

পুলওয়ামা কাণ্ডের পর পাকিস্তানের বালাকোটে প্রত্যাঘাত করা হয়েছিল এক মঙ্গলবার। কাকতালীয় ভাবে, পহেলগাঁও কাণ্ডের পর পাক ভূখণ্ডে প্রত্যাঘাত করা হল আর এক মঙ্গলবারে। ঘটনাচক্রে এই দু’টি প্রত্যাঘাতের ২৪ ঘণ্টা আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জনতার উদ্দেশে ভাষণ দেন। কিন্তু সেই ভাষণে তাঁর উচ্চারিত শব্দে কোথাও কোনও ভাবে ঘুণাক্ষরেও টের পাওয়া যায়নি, কী হতে চলেছে দেশে।

ছ’বছর আগে পুলওয়ামা কাণ্ডের পর জঙ্গিহানার জবাব দিতে ভারত সময় নিয়েছিল ১২ দিন। ওই বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি পাক অধিকৃত কাশ্মীরের বালাকোটে জঙ্গিপ্রশিক্ষণ শিবিরে প্রত্যাঘাত করে ভারতীয় বায়ুসেনা। বায়ুসেনার মিরাজ ২০০০ যুদ্ধবিমান থেকে জইশ-ই-মহম্মদ জঙ্গিগোষ্ঠীর ডেরায় ফেলা হয়েছিল ‘স্পাইস বোমা’। পুলওয়ামা কাণ্ডের ছ’বছর পর পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় মৃত্যু হয় ২৬ জনের। সেই হামলার ১৫ দিন পরে পাক অধিকৃত কাশ্মীর এবং পাকিস্তানে ঢুকে সন্ত্রাসবাদের কড়া জবাব দিয়ে এল ভারত।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পূর্বঘোষণামতো দেশ জুড়ে মক্ ড্রিল প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল মঙ্গলবার। মূলত বিমানহানার সময়েই কাজে লাগে এই মহড়া। অর্থাৎ, পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান যদি ভারতের লোকালয়ে বোমা ফেলতে আসে, তা হলে সাধারণ মানুষ কী করবেন, মহড়ায় সে সবই শেখানো হয়। এই ধরনের হামলার ক্ষেত্রে ঘরের বা মহল্লার সমস্ত আলো তো আগেই নেবাতে হয়, যাতে পুরো জনপদ অন্ধকার হয়ে থাকে। কিন্তু কারও কাছে কোনও খবরই ছিল না যে মঙ্গলবার রাতেই পাকিস্তানের মাটিতে সন্ত্রাসবাদীদের জবাব দিতে চলেছে ভারতীয় সেনা।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন দিল্লিতে এবিপি নেটওয়ার্ক সামিটে। সেখানে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার কথা বলেন তিনি। পাকিস্তানের সঙ্গে জলচুক্তি স্থগিতের কারণও ব্যাখ্যা করেন। সেখানে খানিক হাসিঠাট্টাও করেছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর কোনও ইঙ্গিত? নৈব নৈব চ।

২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার ভোররাতে খাইবার পাখতুনখোয়ার বালাকোট শহরের অদূরে জঙ্গি গোষ্ঠী জইশ-ই-মহম্মদের ডেরায় হানা দেয় ভারতীয় বায়ুসেনা। ভোর ৩টে ৩০ মিনিট নাগাদ ১২টি যুদ্ধবিমান পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বালাকোটে আকাশপথে হামলা চালায়। হামলায় ব্যবহার করা হয়েছিল প্রায় ১০০০ কেজির বিস্ফোরক। পরে দাবি করা হয়, ওই আক্রমণে মারা গিয়েছে প্রায় ৩৫০ জঙ্গি। এ-ও দাবি করা হয় যে, নিহত জঙ্গিদের মধ্যে জইশ প্রধান মাসুদ আজ়হারের শ্যালক মৌলানা ইউসুফ আজ়হার রয়েছে। তার ৪৮ ঘণ্টা আগে কী করেছিলেন মোদী?

কুম্ভে স্নান করে পাঁচ সাফাইকর্মীর পা ধুয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। পরের দিন মঙ্গলবার জাতীয় যুদ্ধ স্মারকের উদ্বোধনে উপস্থিত হন মোদী। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে যে সেনা-জওয়ানেরা দেশরক্ষায় জীবন দিয়েছেন তাঁদের স্মৃতিতেই দিল্লিতে ইন্ডিয়া গেট চত্বরে তৈরি হয় ‘ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়াল’। বিরোধীরা কটাক্ষ করে বলেন, পুলওয়ামা হামলার জেরে দেশে অনেকে যুদ্ধের উন্মাদনায় হাওয়া দিচ্ছেন। ওই সুযোগে জাতীয়তাবাদের পালে হাওয়া তুলতে চায় বিজেপি। তত দিনে রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তিতে শিল্পপতি অনিল অম্বানীকে ফায়দা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলে ক্রমাগত মোদীকে আক্রমণ শানাচ্ছেন বিরোধীরা। রাহুল গান্ধী-সহ বিরোধীদের আক্রমণের জবাবে সেই মঙ্গলবার মোদী বলেছিলেন, ‘‘আগের সরকারের কাছে প্রতিরক্ষাচুক্তি মানেই ছিল মুনাফা ও দুর্নীতি। বফর্স থেকে কপ্টার কেনা— সব তদন্তে একটি পরিবারের দিকেই আঙুল ওঠে।’’ আর রাফালের আক্রমণের পাল্টা জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘‘এ বার ওঁরা পুরো শক্তি কাজে লাগাচ্ছে যাতে এ দেশে রাফাল বিমান আসতে না পারে। কিন্তু সব চেষ্টা জলে যাবে। কয়েক মাসের মধ্যেই দেশের আকাশে রাফাল উড়বে।’’

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

ঘটনাচক্রে রাফাল উড়ল আর এক মঙ্গলবার রাতে— পুলওয়ামা কাণ্ডের ছ’বছর পরে পহেলগাঁও জঙ্গিহানার জবাব দিতে। এ বার পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীরের ৯টি জায়গায় জঙ্গি পরিকাঠামো লক্ষ্য করে ‘প্রিসিশন স্ট্রাইক’ হয়েছে। নয়াদিল্লিতে রাত জেগে যে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর উপর কড়া নজর রেখেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। কিন্তু তার কয়েক ঘণ্টা আগেও প্রধানমন্ত্রীকে এবিপি সামিটে দেখে বোঝা যায়নি কী হতে চলেছে। তিনি বলেছেন, ভারতের হকের জল আগে বাইরে যাচ্ছিল। এ বার শুধু ভারতের জল ভারতেরই কাজে আসবে। পুরো অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের নাম উল্লেখ না করেও প্রতিবেশী দেশকে বার্তা দেন তিনি। নয়াদিল্লি-ইসলামাবাদ চাপানউতর পর্বে প্রধানমন্ত্রীর এ মন্তব্য যথেষ্ট ইঙ্গিতপূর্ণ বলেই মনে করা হয়েছিল। কিন্তু এ বারও কী হতে চলেছে, সেই ইঙ্গিত দেননি প্রধানমন্ত্রী। অপারেশনের ২৪ ঘণ্টা আগে গত বারের মতো এ বারও নিস্পৃহ এবং নিরুদ্বেগ দেখিয়েছে মোদীকে।

Pahalgam Terror Attack Operation Sindoor PM Narendra Modi Balakot Strike India Pakistan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy