Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Calcutta Pavlov Hospital

ভাষা না বুঝে দেড় দশক পার, অবশেষে ঘরের পথে

শুক্রবার দুপুরে দেড় দশক বাদে সেই নারী নাগমণিকে পাভলভ মানসিক হাসপাতাল থেকে তাঁর স্বামী বাড়ি নিয়ে গেলেন। স্রেফ কন্নড় ছাড়া অন্য ভাষা বোঝেন না বলে মানসিক হাসপাতালে পড়েছিলেন মহিলা।

পাভলভে নাগমণি ও সুরেন্দ্র।

পাভলভে নাগমণি ও সুরেন্দ্র। —নিজস্ব চিত্র।

ঋজু বসু
শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:৪০
Share: Save:

নতুন বছরের গোড়ায় মেয়ের বিয়ে। নেমন্তন্নের চিঠিতে মায়ের নামের আগে ‘লেট’ বা স্বর্গত লেখা হয়েছিল। সেই শব্দটি এখন কালিতে ঢাকছেন আত্মীয়েরা। হবু কুটুমবাড়িকে বলাও হয়েছে, মেয়ের ১৬ বছর আগে হারানো মা ফিরে আসছেন!

শুক্রবার দুপুরে দেড় দশক বাদে সেই নারী নাগমণিকে পাভলভ মানসিক হাসপাতাল থেকে তাঁর স্বামী বাড়ি নিয়ে গেলেন। স্রেফ কন্নড় ছাড়া অন্য ভাষা বোঝেন না বলে মানসিক হাসপাতালে পড়েছিলেন মহিলা। স্ত্রীকে এত বছর বাদে দেখে এখন প্রবীণ, সুরেন্দ্র কুমার বলছেন, “গডস গিফ্‌ট!”

স্ত্রী ফিরবেন না ভাবলেও দ্বিতীয় বিয়ে করতে চাননি তিনি। রাতের উড়ানে নাগমণিকে নিয়ে তাঁর দিদি বিজয়লক্ষ্মী, জামাইবাবু কেশব চন্দ্র এবং সুরেন্দ্র শহর ছেড়ে বেঙ্গালুরু উড়ে গিয়েছেন।

পাভলভে সুস্থ হয়েও বছরের পর বছর পড়ে থাকা আবাসিকদের মানসিক স্বাস্থ্য আইন (২০১৭) মেনে বাড়ি ফেরাতে তৎপর হয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাতেই নজরে আসে ২০১৫ থেকে পড়ে থাকা নাগমণির দিকে। কোর্টের নির্দেশে ২০১২-য় তাঁকে প্রথমে বাঘাযতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতালে রেখে আসে পুলিশ।

নাগমণির পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ থেকে তিনি নিখোঁজ। পাভলভের সুপার মাসুদ হাসান আলি, হাসপাতালের আধিকারিক, মনোবিদেরা নাগমণির ভাষা এক বর্ণও বুঝছিলেন না। একটি অ্যাপ মারফত বোঝা যায়, নাগমণি কন্নড় ভাষায় তর্জমা করা প্রশ্নে সাড়া দিচ্ছেন।

হাসপাতালে মনোরোগীদের অধিকার নিয়ে সক্রিয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধি শুক্লা দাস বড়ুয়া এর পরে তাঁদের সঙ্গে যুক্ত মনোবিদ অদিতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সাহায্য নেন। অদিতি তাঁর বন্ধু বেঙ্গালুরুর নিমহ্যানস-এর কাউন্সেলর তথা চিকিৎসক অরুণাকে বিষয়টি জানান। অরুণার সঙ্গে ভিডিয়ো কলেই দেড় দশক বাদে মাতৃভাষায় কথা বলেন নাগমণি। ভাষার দূরত্বে পাথর হওয়া নারী যেন হঠাৎ সজীব হয়ে ওঠেন। এর পরে স্থানীয় পুলিশ মারফত শুক্লারা বেঙ্গালুরুর গ্রামীণ এলাকায় নাগমণির পরিজনের খোঁজ পান।

তাঁর ছেলে, মেয়েরা ১৫ বছর আগে নিখোঁজ মাকে এখন ছবিতেই চেনেন। সেই পারিবারিক ছবি হাতে নিয়ে বসেছিলেন নাগমণি। ভিডিয়ো কলে পরিবারকে দেখে তাঁর খানিক চোখে জল এলেও এ দিন কিছুটা জড়সড় পঞ্চাশোর্ধ্ব মহিলা। ঠিক কী ভাবে কলকাতায় এলেন, গল্পটা স্পষ্ট নয়। তবে দ্বিতীয় সন্তানের জন্মের পর থেকে অবসাদে ভুগছিলেন তিনি। পাভলভ সূত্রের খবর, অনেক বছর পড়ে থাকা তামিল এবং মালয়ালমভাষী দু’জন আবাসিকেরও খোঁজ মিলেছে। তাঁদেরও ফেরানোর চেষ্টা হবে।

সংশ্লিষ্ট সবাই অভিভূত, মেয়ের বিয়ের আগেই তাঁর হারানো মাকে ফেরাতে পিছপা হয়নি সুদূর কর্নাটকের পরিবারটি। জামাইবাবু কেশবের কথায়, “হয়তো নতুন করে মানিয়ে নিতে নাগমণির সময় লাগবে। কিন্তু আপনজনকে কী করে ফেলে রাখি!” নাগমণি কি কোনও দিনও বাড়ি ফিরবেন আশা করেছিলেন? জামাইবাবুর মাধ্যমে করা প্রশ্নে মিতভাষী কন্যার কন্নড়ে জবাব, “ইল্লা (না)!” সব থেকে বেশি দেখতে ইচ্ছে করছে কাকে? “তাই (মা)!” মা নেই তখনও নাগমণিকে বলা হয়নি। সন-তারিখ গুলিয়ে ফেলা বোনকে হাসপাতাল থেকে বেরনোর আগে টিপ পরালেন দিদি। নাগমণি বললেন, “বাড়ি ফিরে রাঁধব। অনেক দিন রাঁধিনি তো!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Calcutta Pavlov Hospital woman Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE