সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে ফের হুমকির সুর পাকিস্তানের প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী তথা বেনজ়ির ভুট্টোর পুত্র বিলাবল ভুট্টো জ়ারদারির গলায়। সোমবার সে দেশের সিন্ধু প্রদেশে একটি সরকারি কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধের ডাক দিলেন তিনি। ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, “যুদ্ধে (নরেন্দ্র) মোদীকে মোকাবিলা করার ক্ষমতা পাকিস্তানিদের রয়েছে। ভারতের সঙ্গে আর এক দফা চুক্তি হলে পাকিস্তান সিন্ধু এবং তার পাঁচটি উপনদীরই দখল নেবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
রবিবারই আমেরিকা থেকে ১০টি মিসাইল বা ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ভারতে হামলার হুমকি দিয়েছিলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান তথা ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। বলেছিলেন, ‘‘আমরা একটি পরমাণু শক্তিধর দেশ। যদি মনে হয় আমরা ধ্বংসের পথে এগোচ্ছি, তবে অর্ধেক বিশ্বকে সঙ্গে নিয়ে ধ্বংস হব।’’ এমনকি ভারতকে আক্রমণ করতে গিয়ে ঝকঝকে মার্সেডিজ় গাড়ি এবং নুড়ি ভর্তি ট্রাকের তুলনা টেনেছিলেন তিনি। বলেছিলেন, ‘‘ভারত হাইওয়ের উপর দিয়ে আসতে থাকা ঝাঁ-চকচকে একটা মার্সেডিজ়, ঠিক ফেরারির মতো। কিন্তু আমরা নুড়ি ভর্তি ট্রাক। গাড়িটাকে যদি ট্রাক ধাক্কা দেয়, পরাজয় কার হবে?’’ ঘটনাচক্রে, তার পরের দিনই ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিলেন বিলাবল।
এর আগেও অবশ্য একাধিক বার সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন বিলাবল। গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলার ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করে ১৯৬০ সালের সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে দিয়েছিল ভারত। সিন্ধু এবং তার পাঁচ উপনদীর জল কী ভাবে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে বণ্টিত হবে, এই চুক্তির শর্ত তা স্থির করে। সিন্ধু, বিতস্তা এবং চন্দ্রভাগা— এই তিন নদী পাকিস্তানের উপর দিয়ে প্রবাহিত। ভারত চুক্তির শর্ত না-মানলে শুখা মরসুমে পাকিস্তানে জলের সঙ্কট তৈরি হতে পারে। সোমবার বিলাবল বলেন, “যদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সিন্ধুর উপর যুদ্ধ ঘোষণা করে থাকেন, তা হলে তিনি আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং সভ্যতার উপর আক্রমণ হানছেন।”
রবিবার মার্কিন মুলুকে সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে নয়াদিল্লিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে মুনির বলেছিলেন, ‘‘ভারত বাঁধ তৈরি করুক, আমরা অপেক্ষা করব। যখন বাঁধ তৈরি করা হয়ে যাবে, আমরা ১০টি মিসাইল ছুড়ে সেই বাঁধ ধ্বংস করে দেব।’’ সিন্ধু চুক্তি নিয়ে মুনিরের দাবি, ‘‘সিন্ধু নদ ভারতের পৈতৃক সম্পত্তি নয়। আমাদের কাছে ক্ষেপণাস্ত্রের কোনও অভাব নেই।’’ মুনিরের এই মন্তব্যের পরেই কড়া বার্তা দেয় ভারত। বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়, “আমেরিকা থেকে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের কিছু মন্তব্য আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। পরমাণু অস্ত্র নিয়ে হট্টগোল করা পাকিস্তানের প্রধান চালিকাশক্তি। এই ধরনের মন্তব্যে যে দায়িত্বজ্ঞানহীনতা প্রকাশ পেয়েছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এমন একটা দেশের হাতে পরমাণু অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ থাকায় যে সন্দেহগুলি দানা বেঁধেছিল, সেগুলিই আরও জোরদার হচ্ছে। সেখানে সামরিক বাহিনী সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে হাত মিলিয়েছে।’’ ভারত যে পরমাণু হুমকির সামনে মাথা নত করবে না, তা-ও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়।