Advertisement
E-Paper

রাজপথেই আটকে গেল ভোটার তালিকা নিয়ে নির্বাচন সদনে বিরোধীদের অভিযান! অসুস্থ হয়ে পড়লেন আটক মহুয়া-মিতালিরা

পুলিশ মিছিল আটকাতেই ব্যারিকেডের উপর উঠে পড়েন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া, সাগরিকা ঘোষ, সুস্মিতা দেবরা। অখিলেশ ব্যারিকেড টপকে অপর প্রান্তে চলে যান। বাকি সাংসদেরা রাজপথেই বসে পড়ে স্লোগান দিতে থাকেন। স্লোগান ওঠে ‘মোদী সরকার হায় হায়’, ‘এসআইআর বাতিল করো’।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২৫ ১৭:০২
(উপরে) অসুস্থ মহুয়া মৈত্র। চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আরামবাগের সাংসদ মিতালি বাগকে। সোমবার নয়াদিল্লিতে।

(উপরে) অসুস্থ মহুয়া মৈত্র। চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আরামবাগের সাংসদ মিতালি বাগকে। সোমবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

সকাল সাড়ে ১১টার কিছু পরে সংসদ চত্বর থেকে নির্বাচন কমিশনের দফতর অভিমুখে কিছুটা এগোনোর পরেই পুলিশের ব্যারিকেড‌ে আটকে যায় বিরোধী সাংসদদের মিছিল। বাধা পেয়ে সেখানেই অবস্থানে বসে পড়েছিলেন রাহুল গান্ধী, অখিলেশ যাদব, মহুয়া মৈত্রেরা। পরে পুলিশ সব সাংসদকে আটক করে বাসে তোলে। ধস্তাধস্তিতে অসুস্থ হয়ে পড়েন মহুয়া, আরামবাগের তৃণমূল সাংসদ মিতালি বাগ এবং সমাজবাদী পার্টি (এসপি)-র এক সাংসদ। দুপুর ৩টে নাগাদ আটক সাংসদদের মুক্তি দেয় দিল্লির পার্লামেন্ট স্ট্রিট থানার পুলিশ। তৃণমূল-সহ বেশ বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণাধীন দিল্লি পুলিশ মহিলা সাংসদদের উপর বলপ্রয়োগ করেছে, চুল ধরে টেনেছে।

ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে সোমবার দিল্লিতে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের দফতর ঘেরাওয়ের কর্মসূচি নিয়েছিল বিরোধী দলগুলি। কিন্তু সংসদ ভবন থেকে প্রায় ৩০০ জন সাংসদের মিছিল শুরু হওয়ার পর রাজপথ ধরে কিছুটা এগোতেই আটকে দেয় পুলিশ। রবিবারই দিল্লি পুলিশের তরফে জানানো হয়েছিল, এই কর্মসূচির জন্য কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি। তবে বিরোধী সাংসদদের কর্মসূচির কথা জেনে রাত থেকেই আঁটসাঁট নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছিল সংলগ্ন এলাকা।


ব্যারিকেডে উঠে প্রতিবাদ তৃণমূল সাংসদ সুস্মিতা দেবের।

ব্যারিকেডে উঠে প্রতিবাদ তৃণমূল সাংসদ সুস্মিতা দেবের। ছবি: সংগৃহীত।

রণকৌশলগত পরিকল্পনা অনুসারে, সকাল ১১টায় লোকসভা এবং রাজ্যসভার অধিবেশন শুরু হওয়ার পরেই এসআইআর-এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বিরোধী সাংসদেরা। হইচইয়ের জেরে সংসদের দুই কক্ষেই দুপুর ২টো পর্যন্ত অধিবেশন মুলতুবি করে দেওয়া হয়। তার পর মকর দ্বারের সামনে জড়ো হন সকলে। সেখান থেকে নির্বাচন কমিশনের সদর দফতর, নির্বাচন সদনের উদ্দেশে মিছিল শুরু হয়। মিছিলে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র ঐক্যবদ্ধ চেহারাই দেখা গিয়েছে। কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম, এসপি, আরজেডি-সহ বিরোধী জোটের সব সদস্য দলের সাংসদরাই কর্মসূচিতে ছিলেন। মিছিলে ছিলেন মল্লিকার্জুন খড়্গে, শরদ পওয়ারের মতো প্রবীণ সাংসদেরাও। বর্তমানে ‘ইন্ডিয়া’-তে না-থাকলেও কর্মসূচিতে শামিল হয়েছিল অরবিন্দ কেজরীওয়ালের দল আম আদমি পার্টি (আপ)।

বিরোধীদের নির্বাচন সদন অভিযান থেকে কমিশনের বিরুদ্ধে নানা ভাষায় স্লোগান ওঠে। দেখা যায় নানা ভাষায় লেখা পোস্টার এবং ব্যানারও। কমবেশি প্রতিটি পোস্টারেই ছিল ‘ভোট চুরি’ বন্ধ করার দাবি। কোনও কোনও পোস্টারে আবার এসআইআর-এর বিরুদ্ধে তোপ দাগা হয়। তৃণমূল সাংসদদের হাতে থাকা ব্যানার এবং পোস্টারে নির্বাচন কমিশনকে বিঁধে লেখা হয়েছিল, ‘চুপি চুপি ভোটের কারচুপি’। পুলিশ মিছিল আটকাতেই ব্যারিকেডের উপর উঠে পড়েন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া, সাগরিকা ঘোষ, সুস্মিতা দেবরা। অখিলেশ ব্যারিকেড টপকে অপর প্রান্তে চলে যান। বাকি সাংসদেরা রাজপথেই বসে পড়ে স্লোগান দিতে থাকেন। স্লোগান ওঠে ‘মোদী সরকার হায় হায়’, ‘এসআইআর বাতিল করো’। দলীয় সাংসদদের সঙ্গে স্লোগান দিতে দেখা যায় প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরাকেও। দিল্লি পুলিশের হেফাজত থেকে ছাড়া পেয়েই রাহুল লেখেন, “ওরা আমাদের আটক করতে পারে। কিন্তু ভারতের কণ্ঠস্বরকে কণ্ঠস্বরকে রুদ্ধ করতে পারবে না। আমরা রাজনীতির জন্য লড়াই করছি না। আমরা আপনার ভোট, আপনার অধিকারকে সুরক্ষিত করতে এই লড়াইটা করছি।” দিল্লি পুলিশের হেফাজত থেকে ছাড়া পেয়েই রাহুল সমাজমাধ্যমে লেখেন, “ওরা আমাদের আটক করতে পারে, কিন্তু ভারতের কণ্ঠস্বরকে দমিয়ে দিতে পারবে না। এই লড়াই রাজনীতির জন্য নয়। আপনার ভোট, আপনার অধিকারকে সুরক্ষিত করার জন্য।”

সাংসদদের প্রথমে উঠে যাওয়ার অনুরোধ করে পুলিশ। তার পর তাঁদের প্রত্যেককে আটক করে বাসে তোলা হয়। বাস থেকেও স্লোগান দিতে থাকেন সাংসদেরা। রাহুল বলেন, “এটা কোনও রাজনৈতিক লড়াই নয়, সংবিধান বাঁচানোর লড়াই। স্বচ্ছ ভোটার তালিকা চাই।” পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েন মহুয়া, মিতালি, এসপি-র এক সাংসদ। মহুয়া কিছু সময়ের জন্য সংজ্ঞা হারান। পরে খানিকটা ধাতস্থ হন তিনি। জল এগিয়ে দেন রাহুল এবং অন্য সাংসদেরা। মিতালিকে অবশ্য হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। সাংসদেরা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন শুনেই তাঁদের কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল। বাস থেকে নেমে এসপি-র অসুস্থ সাংসদকে গাড়ি করে হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা করিয়ে দিয়ে ফের বাসে ওঠেন তিনি। এসআইআর এবং ‘ভোট চুরির’ বিরুদ্ধে বিরোধী শিবির যে এককাট্টা, সোমবারের কর্মসূচিতে তার ইঙ্গিত মেলে। এমনকি গত কয়েক দিন ধরেই বেসুরো বেজে যাওয়া শশী তারুরকেও সোমবারের মিছিলে দেখা যায়। রাহুল গান্ধীর তোলা ‘জরুরি প্রশ্ন’গুলির উত্তর কেন নির্বাচন কমিশন দেবে না, সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখতে এবং মানুষের মনে দেখা দেওয়া ধন্দগুলি কাটাতে কমিশনের এগুলির উত্তর দেওয়া উচিত বলে জানান তারুর। সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক বার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর সরকারের প্রশংসা শোনা গিয়েছে কেরলের তিরুঅনন্তপুরমের কংগ্রেস সাংসদ তারুরের গলায়।

রাজপথে বসেই স্লোগান মহিলা বিরোধী সাংসদদের। রয়েছেন প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা, সায়নী ঘোষ, ডিম্পল যাদব, মিতালি বাগরা।

রাজপথে বসেই স্লোগান মহিলা বিরোধী সাংসদদের। রয়েছেন প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা, সায়নী ঘোষ, ডিম্পল যাদব, মিতালি বাগরা। ছবি: সংগৃহীত।

এসআইআর-এর কারণে বিহারের ভোটার তালিকা থেকে ৬৫ লক্ষ নাম বাদ পড়েছে। বিহারের ভোট চলতি বছরের শেষে। বছর ঘুরলেই পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, অসম, তামিলনাড়ুতেও বিধানসভা ভোট। বিরোধীদের অভিযোগ, কমিশনকে বিজেপি ব্যবহার করছে। ইতিমধ্যেই কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী পরিসংখ্যান দিয়ে দাবি করেছেন, ভোট চুরি হচ্ছে। যদিও তা উড়িয়ে দিয়েছে কমিশন। এসআইআর নিয়ে মামলাও হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালত এসআইআর প্রক্রিয়ায় এখনও কোনও হস্তক্ষেপ করেনি। তবে কমিশনকে কিছু পরামর্শ দিয়েছে। মামলার শুনানি চলছে। এই আবহে ঐক্যবদ্ধ বিরোধীদের এই কর্মসূচি কমিশন এবং কেন্দ্রের শাসকদলের উপর চাপ বৃদ্ধি করবে বলেই মনে করছেন কেউ কেউ।

India Opposition Rahul Gandhi Mahua Moitra ECI Election Commission Delhi Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy