বুলেট ট্রেন। প্রতীকী ছবি।
উত্তর কোরিয়াকে রুখতে জাপানকে পাশে প্রয়োজন ঠিকই, কিন্তু বিনিয়োগের প্রশ্নে ‘টোকিও’-কে টেক্কা দিতে পিছপা নয় দক্ষিণ কোরিয়া। ভারতে বিশেষ করে বুলেট ট্রেনের সম্ভাবনা দেখে আগামী দিনে নরেন্দ্র মোদীর দেশে বিনিয়োগে আগ্রহী দক্ষিণ কোরিয়া। মুম্বই-অমদাবাদ বুলেট ট্রেন নির্মাণের দায়িত্ব পাওয়ায় জাপান প্রাথমিক ভাবে এগিয়ে গেলেও, পরবর্তী বুলেট ট্রেন প্রকল্পের দখলে এখন মরিয়া সোল। বিষয়টি নিয়ে খুব দ্রুত দিল্লির সঙ্গে আলোচনা শুরু হবে বলে জানিয়েছে সে দেশের সরকার।
বর্তমানে গোটা বিশ্বের বুলেট ট্রেনের বাজার মূলত জাপান ও চিনের হাতে। এর মধ্যে মুম্বই-অমদাবাদ ট্রেন চালাতে জাপানকেই বেছে নিয়েছে ভারত। প্রধানমন্ত্রীর রাজ্য ছাড়া প্রাথমিক পর্যায়ে অন্তত পাঁচটি রুটে বুলেট বা হাইস্পিড ট্রেন চালাতে চায় কেন্দ্র। স্বভাবতই এ দেশের রেলের ক্ষেত্রে যে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে, তা বুঝতে পেরেই ভারতীয় বাজার ধরতে চাইছে দক্ষিণ কোরিয়া। একই সঙ্গে আঞ্চলিক আধিপত্য বিস্তারের প্রশ্নেও জাপানকে চ্যালেঞ্জ ছোড়া লক্ষ্য কোরিয়ার। ঘটনা হল, উত্তর কোরিয়ার মোকাবিলায় সোল-টোকিও কাছাকাছি এলেও, ১৯১০ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত তাদের উপরে জাপানিদের অত্যাচার এখনও ভোলেননি দক্ষিণ কোরিয়ার আমজনতা। যার প্রতিবাদে প্রতি সপ্তাহে এখনও একটি দিন জাপানি দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়ে থাকেন সোলবাসীরা। ফলে বাইরে বন্ধুত্ব থাকলেও, কর্তৃত্ব দখলের প্রশ্নে কেউ কাউকে জমি ছাড়তে রাজি নয়।
বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ায় বুলেট ট্রেন চালানোর প্রযুক্তি একমাত্র রয়েছে হুন্ডাই রোটেম সংস্থার হাতে। তারা ঘণ্টায় ৩৫০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন ছোটাতে সক্ষম। বর্তমানে ওই সংস্থার ঝুলিতে তুরস্ক ছাড়াও সিঙ্গাপুর ও কুয়ালা লামপুরের মধ্যে ট্রেন চালানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে। ভারতে মুম্বই-অমদাবাদের পরে দিল্লি-হাওড়া ও দিল্লি–মুম্বই রুটে বুলেট ট্রেন চালানোর পথে রেল মন্ত্রক হাঁটবে বলে মোটামুটি ঠিক করে ফেলেছে। দীর্ঘ দিন এ দেশে গাড়ির ব্যবসা করা হুন্ডাইয়ের তাই লক্ষ্য দু’টি প্রকল্পের মধ্যে অন্তত একটিকে কব্জা করা।
হুন্ডাই সংস্থার বক্তব্য, গত দু’দশক ধরে তারা ভারতের মাটিতে ব্যবসা করছে। ফলে ভারতকে তারা অনেক বেশি চেনেন বলে দাবি সংস্থার অধিকর্তা (ওভারসিজ সেলস) জোওয়েনঘুন কিমের। তাঁর কথায়, ‘‘ভারতের বাজারের পাশাপাশি সেখানকার সমাজ, অর্থনীতি ও মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে অনেক বেশি অবহিত আমরা।’’ ইতিমধ্যেই মুম্বই-নাগপুর এক্সপ্রেসওয়ে তৈরির বরাত পাওয়ায় সড়ক ক্ষেত্রে বিনিয়োগে নেমে পড়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। এ বার তাদের লক্ষ্য এ দেশে হাই স্পিড রেল চালানো।
তবে যে হেতু বিষয়টি খরচ সাপেক্ষ, তাই সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিতে এই ধরনের প্রকল্প রূপায়ণ হয়। মুম্বই-অমদাবাদের ক্ষেত্রে প্রকল্প রূপায়ণে খুব সহজ কিস্তিতে ঋণ দিতে এগিয়ে এসেছিল জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি বা জাইকা। এ ক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরীয় সংস্থার পিছনে তাদের দেশের ব্যাঙ্ক এসে দাঁড়াবে কি না, তা অবশ্য এখনও স্পষ্ট নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy