অনলাইন গেমিং নিষিদ্ধ করতে বিল পাশ হল রাজ্যসভায়। বুধবার ‘দ্য প্রোমোশন অ্যান্ড রেগুলেশন অফ অনলাইন গেমিং বিল, ২০২৫’ শীর্ষক এই বিলটি পাশ করানো হয়েছিল লোকসভায়। বৃহস্পতিবার সংসদের উচ্চ কক্ষে বিলটি পেশ করেন কেন্দ্রের ইলেকট্রনিক্স এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। বিতর্ক ছাড়াই ধ্বনিভোটে পাশ হয় বিলটি। বিলটি যখন রাজ্যসভায় পাশ করানো হচ্ছে, সেই সময় বিরোধী সাংসদেরা বিহারের ভোটার তালিকায় বিশেষ সংশোধন (এসআইআর) নিয়ে আলোচনা চেয়ে স্লোগান দেন। তবে সংসদের দুই কক্ষেই বিলটি পাশ হয়ে যাওয়ায় কেবল রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করলেই আনুষ্ঠানিক ভাবে নতুন আইন বলবৎ হয়ে যাবে।
কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, বিলে ‘অনলাইন গেমিং’-কে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যে সব ক্ষেত্রে অর্থের বিনিময়ে খেলা হয় কিংবা টাকার বিনিময়ে গড়াপেটা করা হয়, সেগুলিকে নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে। বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি ব্যাঙ্ক এবং অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে আর্থিক লেনদেনে যুক্ত অনলাইন গেমের জন্য তহবিল স্থানান্তর বা সহায়তাতেও বিধিনিষেধ জারির প্রস্তাব রয়েছে নয়া বিলে। গত কয়েক বছর ধরেই ভারতে অনলাইন গেমিং শিল্পকে একটি উদীয়মান ক্ষেত্র হিসাবে দেখা হচ্ছে। অনলাইন গেমে বাজি ধরার নেপথ্যে প্রতি মাসে ভারতে গড়ে ১০ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়। তাই গত কয়েক বছরে গেমিং শিল্পে ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে বহু ছোট-বড় সংস্থা।
আরও পড়ুন:
ফ্যান্টাসি গেমিংয়েও টাকার লেনদেন হয় বটে, তবে ঘুরপথে। এই ধরনের খেলায় প্রথমে অল্প টাকার বিনিময়ে পরিচিত তারকা বা খেলোয়াড়দের নিয়ে তালিকা বানাতে হয়। সেই খেলোয়াড়েরা বাস্তবে কেমন ফল করলেন, তার ভিত্তিতে টাকা লেনদেন হয়। জিতলে লক্ষ লক্ষ টাকার পুরস্কারের হাতছানি থাকে। একে সরাসরি ‘জুয়া’ বলা যায় না। ব্রিটেন, আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলিতেও অনলাইন গেমিং খুবই জনপ্রিয়। তবে তা নিয়ে বিস্তর কড়াকড়ি রয়েছে। কেওয়াইসি, বিজ্ঞাপন ও প্রচারের নানা নিয়ম রয়েছে। সে সব মানলে তবেই ব্যবসার ছাড়পত্র মেলে।
ফলে অনলাইন গেমিংয়ের উপর সার্বিক নিষেধাজ্ঞা জারি না করে বিকল্প ব্যবস্থাগুলি ভেবে দেখা যেত বলেও মত প্রকাশ করেছিলেন বিশেষজ্ঞ এবং বণিকমহলের একাংশ। তবুও কেন এমন পদক্ষেপ? সরকারি সূত্রের খবর, অনলাইন গেমিং প্ল্যাটফর্মগুলিতে বিপুল পরিমাণ টাকার লেনদেন নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই নানা অভিযোগ উঠছিল। বহু মানুষ এই সমস্ত গেম খেলে বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছিলেন। এমনকি, কোনও কোনও সময় ব্যবহারকারীর অজান্তেও টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে সাম্প্রতিক সময়ে। বৃহস্পতিবার বৈষ্ণব পরিসংখ্যান তুলে ধরে জানান, অনলাইন গেমিং প্ল্যাটফর্মে অংশ নিয়ে দেশের অন্তত ৪৫ কোটি মানুষ টাকা খুইয়েছেন। এই আবহে পাশ হওয়া নতুন বিলে অনলাইন গেমিং পরিচালনা করলে এক কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা এবং তিন বছর পর্যন্ত জেলের সাজার প্রস্তাব রয়েছে।