চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর বা সিপিইসি-তে এ বার শামিল হতে চলেছে আফগানিস্তানও। বুধবার কাবুলে তালিবান সরকারের ভারপ্রাপ্ত বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি, চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই এবং পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী ইশাক দারের একটি ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে তিন দেশই বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারস্পরিক সমঝোতা বৃদ্ধির বিষয়ে সম্মতি জানায়। স্থির হয় চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর আফগানিস্তানেও প্রসারিত করা হবে।
প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, চলতি মাসের শেষেই সিপিইসি-র দ্বিতীয় পর্বের কাজ শুরু হয়ে যাবে। ঘটনাচক্রে, সেই সময়ই সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও)-এর বৈঠকে যোগ দিতে চিনে যাওয়ার কথা পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফের। সোমবার দু’দিনের সফরে ভারতে এসেছিলেন চিনের বিদেশমন্ত্রী। সেখান থেকে তিনি যান আফগানিস্তানে। ২০২১ সালে তালিবান পুনরায় আফগানিস্তানের দখল নেওয়ার পর এই প্রথম কাবুল ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে বসেছিল তিন দেশ। অবশ্য চিন বিশ্বের সেই মুষ্টিমেয় দেশগুলির মধ্যে একটি, যারা তালিবান সরকারকে প্রথম কূটনৈতিক স্বীকৃতি দিয়েছিল।
পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং চিনের মধ্যে হওয়া ষষ্ঠ ত্রিপাক্ষিক বৈঠক প্রসঙ্গে পাক বিদেশ দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, সন্ত্রাসবাদ দমনে যৌথ পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে পাকিস্তানের সংবাদপত্র ‘ডন’-এর প্রতিবেদন অনুসারে, বৈঠকে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে তালিবান সরকারকে কড়া পদক্ষেপ করার আর্জি জানিয়েছেন পাক বিদেশমন্ত্রী দার। প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২১ সালে তালিবরা ক্ষমতায় আসার পর ইসলামিক স্টেটস খোরাসান (আইএস-কে), তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি)-র মতো জঙ্গিগোষ্ঠীর সক্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বিষয়ে উদ্বেগপ্রকাশ করেছে চিনও। কারণ টিটিপি এবং বালোচ বিদ্রোহীদের সংগঠন বালোচিস্তান লিবারেশন আর্মি-র কার্যকলাপে প্রায়ই অশান্ত হয়ে উঠছে পাকিস্তানের বালোচিস্তান প্রদেশ। খনিজসমৃদ্ধ ওই প্রদেশে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে চিনের পরিকাঠামোগত কাজ। তা ছাড়া এই প্রদেশ দিয়েই গুরুত্বপূর্ণ গদ্বর বন্দরে পৌঁছোতে হবে। তাই সেখানে সক্রিয় জঙ্গিগোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ চাইছে বেজিং এবং ইসলামাবাদ।
আরও পড়ুন:
‘ডন’ পাকিস্তানের বিদেশ দফতরকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, বিদেশমন্ত্রী দার সন্ত্রাসদমন নিয়ে আফগানিস্তানের বিদেশমন্ত্রীর কাছে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বৈঠকে তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সমঝোতার বিষয়ে অগ্রগতি হলেও সন্ত্রাসদমনের বিষয়ে আফগানিস্তানের তরফে তেমন অগ্রগতি হয়নি। এই প্রসঙ্গে আফগানিস্তান থেকে পরিচালিত জঙ্গিদের সাম্প্রতিক কিছু কার্যকলাপও তুলে ধরা হয় বলে জানানো হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।
বেজিংয়ের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ বা বিআরআই-এর অন্যতম অঙ্গ চিন এবং পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক করিডর (সিপিইসি)। বেজিং মনে করে, আফগানিস্তান থেকে পরিচালিত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলি পাকিস্তানের পশ্চিম সীমান্তকে অশান্ত রাখলে তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আফগানিস্তানের সঙ্গে একচিলতে সীমান্ত রয়েছে চিনের। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার স্বার্থেই অশান্ত আফগানিস্তান চায় না বেজিং। বরং চায় ‘বন্ধু’ পাকিস্তান বিষয়টির উপর নজর এবং নিয়ন্ত্রণ রাখুক।