অমিত শাহ ও নরেন্দ্র মোদী।
নতুন বছরেই নির্বাচন দিল্লিতে। গত এক বছরে পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে হারলেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা। তা দেখে প্রশ্ন উঠেছে, পাঁচ বছর আগের মতো দিল্লি দখল কি এ বারও অধরা থাকতে চলেছে!
ঝাড়খণ্ডে আজকের বিপর্যয়ের পরে বিশেষ করে ওই সংশয় তৈরি হয়েছে। কেন না বিজেপির পর্যবেক্ষণ ছিল, সংখ্যাগরিষ্ঠতা না-পেলেও ঝাড়খণ্ডে সংখ্যাগরিষ্ঠতার কাছাকাছি থাকবে দল। নির্দলদের সঙ্গে নিয়ে সরকার গড়তে সমস্যা হবে না। কিন্তু ভোটের ফল বলছে অন্য কথা। ঝাড়খণ্ডেই যখন ওই পরিস্থিতি, তখন দিল্লি গোড়া থেকেই প্রতিকূল। গত পাঁচ বছরে কেজরীবাল সরকারের মূল লক্ষ্য ছিল নিম্নবিত্তদের পাশাপাশি মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত ভোটারদের আস্থা অর্জন। সেই কারণে নিখরচায় জল, গরিবদের জন্য পাড়ায়-পাড়ায় মহল্লা ক্লিনিক খোলার পাশাপাশি বিদ্যুতের ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিনামূল্যে বিলের ঘোষণা করেন কেজরীবাল। গরিবদের পাশাপাশি বিদ্যুতের বিলের ওই সুবিধা পাচ্ছেন মধ্যবিত্ত, উচ্চ-মধ্যবিত্তরা। তাই দিল্লির মধ্যবিত্তেরা এ বার কেজরীবালের পাশে দাঁড়াবেন বলে আশাবাদী আপ। অন্য দিকে মহিলাদের সরকারি বাসের ভাড়া মকুব করার সিদ্ধান্তও যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়েছে।
আপ সরকারের ওই জনমোহিনী নীতির মোকাবিলা কী ভাবে করা সম্ভব তার স্পষ্ট কোনও দিশাও নেই বিজেপির কাছে। কারণ ঝাড়খণ্ড বুঝিয়ে দিয়েছে মোদী সরকারের নেতা-মন্ত্রীরা না মানলেও অর্থনীতির ঝিমিয়ে পড়া দশা, লোকের কাজ হারানো ভোটের বাক্সে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত আর জিএসটি নিয়েও দিল্লির ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ।
এই পরিস্থিতিতে বিজেপির হাতে দিল্লিতে প্রচারের হাতিয়ার সাকুল্যে দু’টি। দিল্লির অবৈধ কলোনিগুলির বৈধকরণ এবং নাগরিকত্ব আইনকে কেন্দ্র করে মেরুকরণের রাজনীতি। কলোনি বৈধকরণ নিয়ে সমস্যা হল, ওই সিদ্ধান্ত থেকে নতুন করে কিছু পাওয়ার নেই কলোনিবাসীর। ফলে এতে ভোটের বাক্স কতটা ভরবে তা নিয়ে দ্বিধায় বিজেপি নেতারা। বিজেপির বক্তব্য, দিল্লির পঞ্জাবিদের একটি বড় অংশ পাকিস্তান থেকে উদ্বাস্তু হয়ে এ দেশে এসেছিলেন। সিএএ-র প্রচার ঠিক ভাবে করলে মেরুকরণের ফায়দা নিতে পারবে দল। শুধু তাই নয়, সিএএ-র বিরোধিতায় যে ভাবে মুসলিমরা পথে নেমেছে, কট্টর হিন্দুদের সামনে তা তুলে ধরে মেরুকরণের তাস খেলতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদীরা। কিন্তু রাম মন্দির প্রশ্নে মেরুকরণের চেষ্টা যে ব্যর্থ হয়েছে তা স্পষ্ট হয়েছে ঝাড়খণ্ডের ফলে।
এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন হল রাজধানীর মুসলিমদের ভোট কোন দিকে যাবে। সংখ্যলঘু ভোট কংগ্রেস ও আপের মধ্যে ভাগ হয়ে গেলে বিজেপির সুবিধে। কিন্তু শীলা দীক্ষিতের মৃত্যুর দিল্লিতে এই মুহূর্তে কংগ্রেসের সর্বজনমান্য কোনও মুখ নেই। হাতের পাঁচ অজয় মাকেনকে সামনে রেখে নির্বাচনে লড়তে নামার পক্ষপাতী দলের একটি অংশ। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী পদে প্রার্থী হিসাবে কেজরীবাল ধারে ও ভারে অনেকটাই এগিয়ে মাকেনের চেয়ে। বিজেপির আশঙ্কা সে ক্ষেত্রে বিজেপিকে রুখতে মুসলিম ভোটের প্রায় গোটাটাই টেনে নেবে আপ।
২০১৪ সালে লোকসভায় বিপুল ভোটে জিতে এসেও দিল্লি দখল করতে ব্যর্থ হন নরেন্দ্র মোদীরা। ৭০ আসনের দিল্লি বিধানসভায় ৬৭টি আসন পায় অরবিন্দ কেজরীবালের দল। ২০১৯-এ ফের কি তারই পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে দিল্লিতে, প্রশ্ন বিজেপিতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy