Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
National News

মুলায়মকে সরিয়ে সপা সভাপতি অখিলেশ, পাল্টা বহিষ্কারের বন্যা নেতাজির

যদুবংশে ধুন্ধুমার অব্যাহত। সকালে জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক ডেকে অখিলেশ, রামগোপালরা মুলায়ম সিংহ যাদবকে সরিয়ে দিলেন সর্বভারতীয় সভাপতি পদ থেকে। বহিষ্কার করা হল অমর সিংহকে। দুপুরে দলের সংসদীয় বোর্ডের পাল্টা বৈঠক ডেকে মুলায়ম জানালেন, অখিলেশদের বৈঠক অবৈধ, তিনিই এখনও সভাপতি।

সমাজবাদী পার্টির সর্বভারতীয় সভাপতি নির্বাচিত হলেন অখিলেশ, উল্লাস অনুগামীদের। ছবি: পিটিআই।

সমাজবাদী পার্টির সর্বভারতীয় সভাপতি নির্বাচিত হলেন অখিলেশ, উল্লাস অনুগামীদের। ছবি: পিটিআই।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৭ ১৮:৫৬
Share: Save:

যদুবংশে ধুন্ধুমার অব্যাহত। সকালে জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক ডেকে অখিলেশ, রামগোপালরা মুলায়ম সিংহ যাদবকে সরিয়ে দিলেন সর্বভারতীয় সভাপতি পদ থেকে। বহিষ্কার করা হল অমর সিংহকে। দুপুরে দলের সংসদীয় বোর্ডের পাল্টা বৈঠক ডেকে মুলায়ম জানালেন, অখিলেশদের বৈঠক অবৈধ, তিনিই এখনও সভাপতি। এই ঘোষণার পাশাপাশি, ফের বহিষ্কার করে দিলেন রামগোপাল যাদবকে। দেশের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্যের শাসক পরিবারে এই তীব্র অভ্যন্তরীণ সঙ্ঘাত ঘিরে এখন বিভ্রান্তি চরমে। লখনউয়ের রাজপথে মুলায়ম এবং অখিলেশ সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষও শুরু হয়ে গিয়েছে।

৩০ ডিসেম্বর ছেলে অখিলেশ যাদব এবং সম্পর্কিত ভাই রামগোপাল যাদবকে দল থেকে বহিষ্কারের কথা ঘোষণা করেছিলেন মুলায়ম সিংহ যাদব। কিন্তু ৩১ ডিসেম্বর সকাল থেকে সপার বিধায়ক, সাংসদ এবং বিভিন্ন স্তরের নেতারা যে ভাবে বিপুল সংখ্যায় ভিড় জমাতে শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রীর অখিলেশ যাদবের বাসভবনের সামনে, তাতে মুলায়ম পিছু হঠতে বাধ্য হন। বিকেলের মধ্যে অখিলেশ এবং রামগোপালের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত তাঁকে প্রত্যাহার করতে হয়। তবে আগুন যে তাতে নেভেনি, তা আজ দিনভরের ঘটনাপ্রবাহে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। নিজের হাতে যে দল গড়েছিলেন, সেই সপার উপর মুলায়মের যে আর নিয়ন্ত্রণ নেই, দলের টিকিটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা, বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা এবং সমর্থকরা যে এখন দলে দলে অখিলেশ শিবিরে, তা বুঝতে আরও কারও বাকি নেই।

অখিলেশের সভাপতিত্ব, অমর সিংহের বহিষ্কার এবং শিবপালের অপসারণের প্রস্তাবকে হাত তুলে সমর্থন নরেশ অগ্রবাল, অক্ষয় যাদবদের। রয়েছেন কিরণময় নন্দও। ছবি: পিটিআই।

যাদব বংশের লড়াই যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাতে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী বুঝে গিয়েছেন, শিবপাল যাদব-অমর সিংহ-সাধনা গুপ্তদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান আর তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। দলের সিংহভাগ তাঁর পক্ষে দাঁড়িয়েছে দেখে বাবা মুলায়ম তাঁকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে বাধ্য হলেও, এখন থেকে প্রতি পদেই যে পরিবারে তথা দলে প্রতিরোধ এবং সঙ্ঘাতের মুখে পড়তে হবে তাঁকে, তা অখিলেশ যাদবের কাছে স্পষ্ট। তাই আজই দলের জাতীয় কর্মসমিতির অধিবেশন ডাকা হয়েছিল লখনউতে। রামগোপাল যাদব এই অধিবেশনের ডাক দেন। নেতা এবং কর্মীদের বিপুল সমাগমের সামনে রামগোপাল যাদব সেখানে চারটি প্রস্তাব পেশ করেন:

১. দলের উত্তরপ্রদেশ শাখার সভাপতি পদ থেকে শিবপাল যাদবকে সরানো হোক।

২. অমর সিংহকে অবিলম্বে দল থেকে বহিষ্কার করা হোক।

৩. অখিলেশ যাদবকে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি নির্বাচিত করা হোক।

৪. এত দিন সর্বভারতীয় সভাপতি পদে থাকা মুলায়ম সিংহ যাদবকে মার্গদর্শক মনোনীত করা হোক।

রামগোপালের এই চার প্রস্তাবই সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হয়ে যায়। ফলে মুলায়মের পরিবর্তে অখিলেশ দলের সভাপতি ঘোষিত হন। এর পর তুমুল হর্ষধ্বনি আর ‘জয় অখিলেশ’ স্লোগানের মধ্য দিয়ে ভাষণ দিতে ওঠেন অখিলেশ সিংহ যাদব। তিনি অবশ্য মুলায়মের বিরুদ্ধে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। অখিলেশ বলেন, ‘‘সারা দেশের বোঝা উচিত, আমি নেতাজিকে (মুলায়ম) আগে যতটা শ্রদ্ধা করতাম, এখন থেকে তার চেয়েও বেশি শ্রদ্ধা করব। যে নেতাজির বিরুদ্ধে চক্রান্ত করবে, আমি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব।’’

সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর ভাষণ অখিলেশের। পাশে কাকা রামগোপাল যাদব। ছবি: পিটিআই।

মুলায়ম সিংহ যাদব অবশ্য অখিলেশ, রামগোপালদের ডাকা এই সম্মেলনকে ‘অবৈধ’ আখ্যা দিয়েছেন। সম্মেলন শুরুর আগে থেকেই তিনি হুঁশিয়ারি দিচ্ছিলেন। এই সম্মেলনে যোগ না দেওয়ার জন্য দলের নেতা-কর্মীদের তিনি আহ্বান জানিয়েছিলেন। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কেউ সম্মেলনে যোগ দিলে, দল তাঁর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করবে বলেও তিনি জানিয়েছিলেন। কিন্তু নেতাজির হুঁশিয়ারিতে কাজ হয়নি। শনিবার অখিলেশের বাসভবনে যে রকম উপচে পড়া সমাগম ছিল, এ দিনও অখিলেশ-রামগোপালদের সম্মেলনে তেমনই সাড়া পড়ে।

দল এখন মুলায়ম-শিবপালদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। —ফাইল চিত্র।

জাতীয় কর্মসমিতির এই অধিবেশনে তাঁকে দলের শীর্ষ পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানতে পেরেই তড়িঘড়ি দলের সংসদীয় বোর্ডের বৈঠক ডাকেন মুলায়ম সিংহ যাদব। বৈঠক শেষে ফের মুলায়ম জানান, রামগোপালের ডাকা সম্মেলন অবৈধ। দলের সাংগঠনিক স্তরে যে সব রদবদলের কথা ঘোষণা করা হয়েছে, সে সবও অবৈধ বলে তিনি জানান। তার সঙ্গেই ফের রামগোপাল যাদবকে দল থেকে বহিষ্কারের কথা ঘোষণা করে দেন। অখিলেশ-রামগোপালদের ডাকা অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেছিলেন যিনি, সেই কিরণময় নন্দকেও বহিষ্কারের কথা ঘোষণা করেন। আর এক রাজ্যসভা সাংসদ নরেশ অগ্রবালকেও মুলায়ম বহিষ্কারের কথা ঘোষণা করেছেন। তবে মুলায়মের এই সব সিদ্ধান্তকে অখিলেশ শিবির গুরুত্ব দিচ্ছে না।

আরও পড়ুন: দুই বৌমার দ্বৈরথ দেখছে লখনউ

সদর দফতর কার? তুমুল সংঘর্ষ, খুলে ফেলা হল শিবপালের নেমপ্লেট

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE