Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

নিজেকে ব্র্যান্ড করে তোলার যুদ্ধে অখিলেশ

দলের ডামাডোল ভোটে না ছাপ ফেলে, তার জন্য ভিন্ন পথে হাঁটা শুরু করলেন বাবা-ছেলে। লোহিয়াপন্থী বাবা মুলায়ম সিংহ যাদব ভরসা রাখছেন বিহার মডেলে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
লখনউ শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৬ ০২:৫৮
Share: Save:

দলের ডামাডোল ভোটে না ছাপ ফেলে, তার জন্য ভিন্ন পথে হাঁটা শুরু করলেন বাবা-ছেলে। লোহিয়াপন্থী বাবা মুলায়ম সিংহ যাদব ভরসা রাখছেন বিহার মডেলে। যেখানে ধর্মনিরপেক্ষ অন্য দলগুলিকে পাশে নিয়ে মহাজোট গড়ে নীতীশ কুমার রুখে দিতে পরেছিলেন নরেন্দ্র মোদীর দলকে। ছেলে অখিলেশের ভরসা তাঁর নিজের কাজের উপরে। পাঁচ বছর আগে মুলায়মের নামেই যে ভোট চেয়েছিল সমাজবাদী পার্টি, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। পাঁচ বছর সরকার চালানোর পরে অখিলেশের ধারণা হয়েছিল, এ বার তাঁকেই মুখ করে ভোটে যাবে দল। কিন্তু বাবা, কাকা শিবপাল ও ছ’বছর পরে দলে ফেরা অমর সিংহরা তাঁর সেই আশায় জল ঢেলে দিয়েছেন। তবু হাল ছাড়ছেন না অখিলেশ। এই মুহূর্তে ‘নেতাজি’কে সরাসরি উপেক্ষা করে এগোনোর ক্ষমতা নেই তাঁর। তবু উন্নয়নের নিজস্ব ‘ব্র্যান্ড অখিলেশ’কে সামনে রেখেই এ বারের ভোট যুদ্ধ জিততে চাইছেন মুলায়ম-পুত্র।

গাজিপুরের অখিলেশ-অনুগামী যুব নেতা সন্তোষ যাদব বলেন, “বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, সব ভুলে রথযাত্রার প্রস্তুতিতে নেমে পড়তে হবে। মানুষ ষড়যন্ত্র বুঝতে পারছে। গত পাঁচ বছরে কাজের খতিয়ান মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।” বৈঠকে ঠিক হয়, লখনউয়ের লা মার্ট গ্রাউন্ড থেকে বিশাল সমাবেশ করে রথযাত্রা শুরু হবে। প্রথম দফায় রথ ছুটবে উন্নাও হয়ে কানপুর পর্যন্ত। অখিলেশ-অনুগামী যে যুব-নেতাদের শিবপাল পদ বা দলছাড়া করেছেন, তাঁদের বৈঠকে ডাকেন অখিলেশ। কাকাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়তেই। মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কৃত শিবপালও যে অখিলেশের বাকি দু’মাসের মন্ত্রিসভায় আর ফিরতে চান না, তা বুঝিয়ে আজ দুপুরেই তিনি তাঁর সরকারি বাসভবন ছেড়ে বেরিয়ে যান। কালিদাস মার্গে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের একটি বাড়ি পরেই ওই বাংলো থেকে শিবপালের নামের ফলকও সরিয়ে ফেলা হয়।

ফলে এক দিকে পেশি শক্তি প্রদর্শন, অন্য দিকে স্নায়ুর লড়াই— দুই-ই চলছে সমানে।

এরই মধ্যে অখিলেশের যুদ্ধের প্রস্তুতি দেখে মনে হচ্ছে, মুলায়মকে খুশি করার বদলে, নেতাজির ছায়া থেকে বেরিয়ে এসে নিজস্ব ব্র্যান্ড তৈরি করতেই তিনি বেশি আগ্রহী। তাঁর রথযাত্রার প্রচারে পেশাদারদের দিয়ে ভিডিও তৈরি হয়েছে, সেখানে কোথাও মুলায়ম নেই। শুধুই উত্তরপ্রদেশের উন্নয়নে অখিলেশের দায়বদ্ধতা ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তি। পরিবার হিসেবে উপস্থিত শুধুই স্ত্রী ডিম্পল এবং ছেলেমেয়েরা। জাতপাত, মুসলমান-যাদবের জোট নয়, প্রচারে শুধুই উন্নয়ন। পিকু ছবির গীতিকার মনোজ যাদবের থিম সং ‘কাম বোলতা হ্যায়’। এতেও শুধু অখিলেশের কাজের কথা।

কিন্তু অখিলেশের এই চেষ্টায় বড় পিছুটান তাঁরই দল ও পরিবার। নির্বাচনে জিততে হলে শুধু প্রচারই যথেষ্ট নয়। এর জন্য দলের একটা ভোট মেশিনারিও প্রয়োজন। তার অনেকটাই কিন্তু শিবপালের হাতে। দলের সভাপতি হিসেবে ভোটের টিকিট বিলির ভার তাঁরই হাতে। সব চয়ে বড় কথা নেতাজির হাত রয়েছে তাঁর মাথায়। দলে-পরিবারে সকলেই একজোট রয়েছেন বলে মুলায়ম দাবি করলেও আখড়ার মাটি এখনও গরম। এ দিনও দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে অখিলেশ-ঘনিষ্ঠ তেজনারায়ণ পাণ্ডেকে। অখিলেশ তাঁকে মন্ত্রিসভায় রেখে দিয়েছেন।

এ-হেন দল বা পরিবারকে কতটা পাশে পাবেন অখিলেশ? মুলায়মের সুরে এ দিনও শিবপাল মুখে অবশ্য বলেছেন, “দল বা পরিবারে কোনও ভেদাভেদ নেই। সব ঠিক আছে। লোকের উস্কানিতে কান না দিয়ে নেতাজিকে খুশি করুক অখিলেশ, ফের মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসুক।”

মুলায়মের মহাগঠবন্ধন বা ছেলের উন্নয়নের কর্মসূচি— দুইয়ের একটাও কি শেষ পর্যন্ত ভাঙনের চোরাস্রোতে ডুবতে থাকা দলটির খড়কুটো হয়ে উঠতে পারবে! অখিলেশ এ সব ভেবে বসে থাকতে নারাজ। তিনি এখন তুমুল ব্যস্ত তাঁর রথযাত্রার প্রস্তুতি নিয়ে। লক্ষ্য ব্র্যান্ড অখিলেশ গড়ে তোলা। এ তাঁর এক নিজস্ব লড়াই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Akhilesh Yadav Brand
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE