কেন্দ্রীয় বিজ্ঞপ্তি মেনে ১৯৭১ সালের পর অসমে আসা হিন্দু ও অন্য অ-মুসলিমদের শরণার্থীর মর্যাদা ও নাগরিকত্ব দেওয়া হলে আন্দোলনের হুমকি দিল অল অসম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন বা আসু।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্রে খবর, গত বছরের বিজ্ঞপ্তিকে আইনি রূপ দিতে ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনটি এ বছর স্বাধীনতা দিবসের আগেই সংশোধন করা হতে পারে। রাজ্য থেকে বিদেশি বহিষ্কারের জন্য ৬ বছর ধরে অসমে আন্দোলন চালানো আসুর দাবি, অসম চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের পর অসমে প্রবেশ করা সকলকে চিহ্নিত করে বিতাড়িত করতে হবে। সেই নিয়ম কোনও ভাবেই ভাঙা চলবে না। মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল নিজেও এক সময় আসুর সভাপতি ছিলেন। সুপ্রিম কোর্টে তাঁর দায়ের করা মামলার জেরেই বিদেশি শণাক্তকরণে লাগু আইএমডিটি আইন প্রত্যাহার করেছিল কেন্দ্র। সোনোয়াল এখন বিজেপি নেতা। তাই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তিনি মুখ খুলতে পারছেন না। কিন্তু আসুর দাবি, সোনোয়ালকে কেন্দ্রের অসম-বিরোধী বিজ্ঞপ্তির বিরুদ্ধে মুখ খুলতে হবে।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অসমে ঢোকা প্রতিবেশী রাজ্যের অ-মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ভারতে থাকার অধিকার দেওয়া হবে। কংগ্রেসও সেই দাবি করেছিল। কিন্তু বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলেও তার আইনগত ভিত্তি না থাকায় পুলিশের ধরপাকড় ও বাংলাদেশি সন্দেহে গ্রেফতার বন্ধ হয়নি।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ প্রশ্ন তুলেছেন, বিজেপি ভোটের আগে হিন্দুদের মন জয়ে ওই বিজ্ঞপ্তি গিয়েছিল। রাজ্যের ৬টি জনগোষ্ঠীকে তফসিল মর্যাদা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেয়। কিন্তু কেন্দ্র ও রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর তারা দু’টি প্রসঙ্গকেই ঝুলিয়ে রাখছে। তিনি বলেন, ‘‘মানবিকতার খাতিরে বাইরের দেশ থেকে প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের শরণার্থী করে রাখলে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু তাঁদের পূর্ণ নাগরিকত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে কংগ্রেসের আপত্তি আছে। সোনোয়াল কী ভাবে এই সিদ্ধান্ত মেনে নিচ্ছেন?’’ গগৈয়ের বক্তব্য, কেন্দ্র ছ’টি জনগোষ্ঠীকে তফসিল উপজাতির মর্যাদাও দিচ্ছে না। দু’টি বিষয় নিয়েই কেন্দ্রের বক্তব্য স্পষ্ট করে জানানো হোক।
আসুর সভাপতি দীপাঙ্ককুমার নাথ বলেন, ‘‘অনুপ্রবেশকারীদের নাগরিকত্ব দিলে রাজ্যের ভূমিপুত্রদের অধিকার ভঙ্গ হবে। অসমবাসীর অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে পড়বে। রাজ্য সরকার এ কাজে বাধা না দিলে আসু বাধ্য হয়ে ফের আন্দোলনে নামবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘কেন্দ্রের চক্রান্ত কিছুতেই সফল হতে দেওয়া যায় না। এত লক্ষ অতিরিক্ত মানুষের ভার অসম কেন বইবে? কেন্দ্র অবিলম্বে গত বছরের বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করুক।’’
এ দিকে কেন্দ্রীয় বিজ্ঞপ্তির পরেও সহস্রাধিক হিন্দুকে বিদেশি শণাক্তকরণ আদালতের তরফে নোটিস পাঠানো হয়েছে। তা নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের দ্বারস্থ হন হোজাইয়ের বিধায়ক শিলাদিত্য দেব। রাজনাথকে শিলাদিত্য জানান, ডি-ভোটার সন্দেহে অনেককে হেনস্থা করা হচ্ছে। কেন্দ্র বিজ্ঞপ্তি দিলেও তার আইনগত ভিত্তি না থাকায় পুলিশ-প্রশাসন ও আদালত তা মানছে না। তিনি বলেন, ‘‘মানুষ অনেক ভরসা করে বিজেপি জোটকে ভোট দিয়ে জিতিয়েছেন। কিন্তু এখনও সন্দেহজনক ভোটার সন্দেহে হেনস্থা রুখতে কেন্দ্র কোনও ব্যবস্থা নিল না।’’ তাঁর অভিযোগ, সন্দেহজনক ভোটার চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে বিশেষ করে হিন্দু বাঙালিদের নিশানা করা হচ্ছে। সংখ্যালঘু প্রধান যমুনামুখে যেখানে মাত্র ৬৮০ জনকে ডি-ভোটারের নোটিস পাঠানো হয়েছে, সেখানে ৮৫ শতাংশ হিন্দু মানুষ থাকা হোজাইয়ে ৭ হাজার মানুষকে ডি-ভোটার হিসেবে নোটিস পাঠানো হয়েছে। শিলাদিত্যবাবু জানান, রাজনাথ তাঁকে আশ্বাস দিয়েছেন, কেন্দ্রের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী কাজ করার ক্ষেত্রে কী ভাবে এগোনো হবে সে বিষয়ে তিনি শীঘ্রই মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের সঙ্গে কথা বলবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy