Advertisement
E-Paper

এই বন্যাতেও বাড়তি মুনাফার খোঁজে বিমান সংস্থাগুলি

মানুষ বিপর্যস্থ। সেই বিপদকে কাজে লাগিয়ে মুনাফা লোটার অভিযোগ উঠছে বিমানসংস্থাগুলির বিরুদ্ধে। গত দু’দিন ধরে চেন্নাই বিমানবন্দর বন্ধ। চেন্নাইয়ে আটকে পড়া মানুষ যেনতেন প্রকারে বেঙ্গালুরু বা হায়দরাবাদ এসে সেখান থেকে বিমানে করে বাড়ি ফিরতে চাইছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৭:৫১

মানুষ বিপর্যস্থ। সেই বিপদকে কাজে লাগিয়ে মুনাফা লোটার অভিযোগ উঠছে বিমানসংস্থাগুলির বিরুদ্ধে।

গত দু’দিন ধরে চেন্নাই বিমানবন্দর বন্ধ। চেন্নাইয়ে আটকে পড়া মানুষ যেনতেন প্রকারে বেঙ্গালুরু বা হায়দরাবাদ এসে সেখান থেকে বিমানে করে বাড়ি ফিরতে চাইছেন। আর এই দুই বিমানবন্দর থেকে গত দু’দিন ধরে টিকিটের দাম আকাশ ছোঁওয়া হয়ে গিয়েছে।

শুক্রবার শেষ মূহূর্তে এসে টিকিট কাটার সময়ে হায়দরাবাদ থেকে কলকাতায় আসার ন্যুনতম বিমান ভাড়া চাওয়া হয়েছে ২৫ হাজার টাকা! সেটা চেয়েছে জেট। আর বেঙ্গালুরু থেকে শুক্রবার ইন্ডিগো ১৩ হাজার টাকা নিলেও এয়ার ইন্ডিয়া একটি টিকিটের দাম হাঁকিয়েছে ৩৭ হাজার টাকা!

শনিবার বেঙ্গালুরু-কলকাতা রুটের ন্যুনতম ভাড়া ছিল ইন্ডিগোর বিমানের, ১২ হাজার টাকা। ওই দিন বেঙ্গালুরু থেকে মুম্বই ও ভূবনেশ্বর ঘুরে যাত্রীদের কলকাতা পৌঁছে দেওয়ার জন্য জেট চেয়েছে ৪৩ হাজার টাকা! রবিবার বেঙ্গালুরু থেকে সরাসরি কলকাতায় নিয়ে আসার জন্য ন্যুনতম বিমান ভাড়া চেয়েছে স্পাইসজেট, ২৮ হাজার টাকা! অন্য শহর ঘুরে কলকাতা পৌঁছতে চাইলে অন্য সংস্থার উড়ানের টিকিট তুলনায় সস্তায় বিকোচ্ছে। ওই একই দিনে হায়দরাবাদ থেকে কলকাতায় আসার টিকিট পাওয়া গিয়েছে ১০ হাজার টাকায়।

বোঝাই যাচ্ছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যাত্রী চাপ বেড়েছে ওই দুই বিমানবন্দরে। চেন্নাই থেকে নিয়মিত গড়ে যে ১২০টি বিমান অন্য শহরে উড়ে যায়, তাদের যাত্রীরা এখন ভিড় করছেন বেঙ্গালুরু ও হায়দরাবাদে। বিমানসংস্থার স্বাভাবিক নিয়মই হচ্ছে, চাহিদা বাড়লে সঙ্গে সঙ্গে ভাড়াও বেড়ে যায়। এখন প্রতিটি সংস্থাই একটি উড়ানের জন্য আগে থেকে বিভিন্ন স্তরে ভাড়া নির্ধারণ করে রাখে। তাই, অনেক আগে কেউ সেই উড়ানের টিকিট কাটলে যেমন প্রথম স্তরে অনেক সস্তার টিকিট পান, তেমনই শেষ মূহূর্তে কেউ কাটলে অনেক বেশি টাকা দিতে হয়। বিমানসংস্থার এক কর্তার কথায়, ‘‘এ ভাবেই কম্পিউটারে ভাড়ার বিভিন্ন স্তর আগে থেকে ঠিক করা থাকে। সেটা ইচ্ছা মতো কমানো-বাড়ানো যায় না।’’

পাল্টা প্রশ্ন উঠেছে, এটা তো আর উৎসবের ভিড় নয়। যাঁরা বেঙ্গালুরু বা হায়দরাবাদ থেকে নিয়মিত কলকাতায় আসেন, তাঁদের সঙ্গে যোগ হয়েছেন সেই সব মানুষগুলো, চেন্নাইয়ে যাঁদের ঘরবাড়ি তছনছ হয়ে গিয়েছে। কারও দামী আসবাব সহ গোটা ফ্ল্যাট জলের তলায় চলে গিয়েছে। কারও গত কয়েক দিন ভাল করে খাবার জোটেনি। কারও যাবতীয় সার্টিফিকেট, মার্কশিট জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে। এই অবস্থায় অসহায় মানুষগুলো শেষ সম্বলটুকু নিয়ে বাড়ি ফিরতে চাইছেন। আর ওই দুই শহরের বিমানবন্দরে ঢুকে কাউন্টারে পৌঁছোনর পর টিকিটের দাম শুনে অবাক হয়ে যাচ্ছেন।

বিমান মন্ত্রক সূত্রের খবর, শুক্রবার সকালেই বিষয়টি নিয়ে বিমান পরিবহণের সচিব আর এন চৌবে-র সঙ্গে আলোচনা করেছেন বিমানমন্ত্রী গজপতি রাজু। সমস্ত বিমানসংস্থাকে যোগাযোগ করে বেশি ভাড়া না নেওয়ার জন্য সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী। কিন্তু, সেই নির্দেশের বিশেষ প্রতিফলন পড়েনি ভাড়ায়। বিমানযাত্রীদের সর্বভারতীয় সংগঠনের সভাপতি সুধাকর রেড্ডিও এ ভাবে আকাশ-ছোঁওয়া ভাড়া নেওয়ার নিন্দা করেছেন।

এয়ার ইন্ডিয়ার তরফে জানানো হয়েছে, সাধারণ নিয়মেই বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। শেষের দিকের টিকিটের ভাড়া বেশিই থাকে। কিন্তু, পরিস্থিতি তো অন্যরকম? উত্তরে সংস্থার কর্তা বলেন, ‘‘বেঙ্গালুরু থেকে যাঁরা শেষ মূহূর্তে টিকিট কাটছেন, কী করে জানব তাঁরা চেন্নাই থেকে আসছেন না বেঙ্গালুরু শহর থেকেই আসছেন?’’ সংস্থার দাবি, তারা প্রতি দিন হায়দরাবাদ থেকে একটি বিমান নিয়ে যাচ্ছে চেন্নাইয়ের বায়ুসেনা ঘাঁটি রাজালিতে। সেখান থেকে ১২০ জন যাত্রীকে বিনা পয়সায় নিয়ে আসছে হায়দরাবাদে। এ ছাড়াও চেন্নাই থেকে বহু মানুষ সড়কপথে চলে আসছেন হায়দরাবাদ-বেঙ্গালুরুতে। ইন্ডিগোর তরফে জানানো হয়েছে, অন্য সংস্থার তুলনায় তাদের ভাড়া অনেক কম। এবং শেষ মূহূর্তে ওই ভাড়া আগে থেকেই কম্পিউটারে নির্ধারণ করা থাকে। তা ছাড়া এয়ার ইন্ডিয়ার মতো তারাও চেন্নাই থেকে যাতায়াতের বিমান টিকিট থাকলে বেঙ্গালুরু থেকে বিনা পয়সায় বিমানে উঠতে দিচ্ছে যাত্রীদের। জেট এয়ারওয়েজের তরফে জানানো হয়েছে, তারা টিকিট বাতিলের জন্য কোনও টাকা নিচ্ছে না।

এ দিন সকালে চেন্নাই বিমানবন্দরে আটকে পড়া বিমানগুলিকে অন্যত্র পাঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়। বিমানগুলি চেন্নাইয়ে আটকে পড়ে থাকার ফলে, তাদের সারা দিন অন্য রুটে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। ফলে সমস্ত বিমানসংস্থারই বিস্তর লোকসান হচ্ছে। কিন্তু, শুক্রবার দুপুরের পরে আবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে সেখানে। ফলে, বেশ কিছু বিমান আটকে পড়েছে বিমানবন্দরে।

national chennai flood affected chennai indian airline seeks profit
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy