Advertisement
E-Paper

বঙ্গকে দুষেও জোটে কারাটরা

প্রকাশ কারাট সাপ মারলেন! সীতারাম ইয়েচুরির লাঠিও ভাঙল না! কারাটদের কথা মেনে পশ্চিমবঙ্গের ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট দলের রাজনৈতিক রণকৌশলের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না বলে অবস্থান নিল সিপিএমের পলিটব্যুরো। কিন্তু তা সত্ত্বেও ভবিষ্যতে রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধেই এগোনো নিশ্চিত করে নিলেন ইয়েচুরি! তৃণমূলের আক্রমণ রুখতে বিরোধী দলগুলিকে এখন একজোট হয়েই লড়তে হবে, আলিমুদ্দিন স্ট্রিটকে পাশে নিয়ে এ বিষয়ে পলিটব্যুরোকে রাজি করাতে ইয়েচুরি সফল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৬ ০৪:৫৪

প্রকাশ কারাট সাপ মারলেন! সীতারাম ইয়েচুরির লাঠিও ভাঙল না!

কারাটদের কথা মেনে পশ্চিমবঙ্গের ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট দলের রাজনৈতিক রণকৌশলের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না বলে অবস্থান নিল সিপিএমের পলিটব্যুরো। কিন্তু তা সত্ত্বেও ভবিষ্যতে রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধেই এগোনো নিশ্চিত করে নিলেন ইয়েচুরি! তৃণমূলের আক্রমণ রুখতে বিরোধী দলগুলিকে এখন একজোট হয়েই লড়তে হবে, আলিমুদ্দিন স্ট্রিটকে পাশে নিয়ে এ বিষয়ে পলিটব্যুরোকে রাজি করাতে ইয়েচুরি সফল।

বাংলায় হারের ময়না তদন্তে নেমে দু’দিনের পলিটব্যুরো বৈঠকে কারাট ও তাঁর অনুগামীরা অভিযোগ তুলেছিলেন, রাজ্যে তৃণমূলের হামলা রুখতে সমস্ত গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলিকে একজোট করার কথা বলেছিল কেন্দ্রীয় কমিটি। কিন্তু বাস্তবে আলিমুদ্দিনের নেতারা প্রকাশ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধেছেন। অথচ বিশাখাপত্তনম পার্টি কংগ্রেসে স্পষ্ট বলা হয়েছিল, কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও জোট বা বোঝাপড়া হবে না। পলিটব্যুরোয় কারাট-অনুগামীদের সংখ্যাই বেশি। তাঁদের দাবি মেনে পলিটব্যুরোর বিবৃতিতে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে, রাজ্যে যে নির্বাচনী কৌশল উদ্ভূত হয়েছিল, তা কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত বা পার্টির রাজনৈতিক রণকৌশলের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না। পলিটব্যুরোর এই বিবৃতিকে ইয়েচুরি ও সূর্যকান্ত মিশ্রদের জন্য ‘তিরস্কার’ বলেই দাবি করছেন কারাট অনুগামীরা।

কিন্তু পলিটব্যুরোর বিবৃতিতে এ কথাও বলা হয়েছে, ভোটের ফলের পরেও তৃণমূলের হামলার মোকাবিলায় সিপিএম রাজ্যের মানুষকে একজোট হয়ে রুখে দাঁড়ানোর ডাক দিচ্ছে। ইয়েচুরির কথায়, ‘‘সব বিরোধী দলের উপরেই হামলা চলছে। পলিটব্যুরো তা বুঝেছে। এখন সব বিরোধী শক্তিকে একসঙ্গে লড়াই করতে হবে। একসঙ্গে রুখে দাঁড়াতে হবে।’’ কংগ্রেসের সঙ্গে এক জোট হয়ে তৃণমূলের হামলার মোকাবিলা চলবে কি না, এই প্রশ্নে ইয়েচুরির জবাব, ‘‘অবশ্যই! একজোট হতেই হবে। আমরা সব বিরোধী দলকে ডাক দিচ্ছি।’’

সিপিএমের একটি সূত্রের দাবি, এখানেই ইয়েচুরির সাফল্য। কারাটদের সন্তুষ্ট করতে তিনি মেনে নিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী কৌশল পার্টি লাইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না। কিন্তু যুক্তি দিয়েছেন, তিনি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দু’বার রাজ্য নেতৃত্বকে চিঠি লিখে সতর্ক করেছিলেন। আবার একই সঙ্গে গোটা পলিটব্যুরোকে আলিমুদ্দিনের যুক্তি মানতেও বাধ্য করেছেন! পলিটব্যুরো স্বীকার করেছে, ভোটের ফলের পরেও তৃণমূলের হামলা অব্যাহত। বিরোধী দলের কর্মীদের খুন-জখম, কার্যালয় ভাঙচুর চলছে। এই পরিস্থিতিতে মানুষকে একজোট করার কথা বলেছে পলিটব্যুরো। বাস্তবে যা কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে চলারই নামান্তর।

পলিটব্যুরোর এই বিবৃতি পড়ে দলের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, এক দিকে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বাঁধা পার্টি লাইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলা হচ্ছে। আবার ভবিষ্যতে ঘুরিয়ে জোটের ডাক থাকছে। এ কেমন নীতি?

পলিটব্যুরোর সূত্রের ব্যাখ্যা, এ ছাড়া শীর্ষ নেতৃত্বের সামনে আর কোনও উপায়ও ছিল না। কারণ, ভোটের পরে সূর্যবাবুরা তৃণমূলের হিংসার বিরুদ্ধে কংগ্রেসের সঙ্গে রাস্তায় নেমে পড়েছেন। বিধানসভার ভিতরেও জোট দানা বাঁধছে। এখন তাঁদের সেই পথ থেকে সরে আসতে বলার উপায় নেই। সে ক্ষেত্রে দলটাই দু’টুকরো হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকছে! সেই কারণেই পলিটব্যুরোর বিবৃতিতে পার্টির রাজনৈতিক লাইন ‘লঙ্ঘন’-এর কথা বলা হয়নি। মোলায়েম করে বলা হয়েছে, যা হয়েছে, তা পার্টি লাইনের সঙ্গে ‘সঙ্গতিপূর্ণ’ নয়। দলীয় সূত্রের ব্যাখ্যা, যদি বলা হতো পশ্চিমবঙ্গের নেতারা পার্টি লাইন অমান্য করেছেন, তা হলে তাঁদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনতে হত। রাজ্য কমিটি ভেঙে দিতে হতো! তা হলে দলটাই ভেঙে যেত!

দলের নেতারা বলছেন, ২০০৯-এর লোকসভায় ভোটে ভরাডুবির পরে বাংলার নেতারা কারাটের সমর্থন প্রত্যাহারের দিকে আঙুল তুলেছিলেন। কারাট বলেছিলেন, বাম সরকার ও আলিমুদ্দিনের ভুলেই হার। শেষে দু’তরফের কথাই রাখা হয়েছিল। এ বারও তা-ই হল। এ বার পার্টি লাইনের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ এই নির্বাচনী রণকৌশল রাজ্য নেতাদের তৈরি, তা-ও বলেনি পলিটব্যুরো। বলেছে, এই রণকৌশল ‘উদ্ভূত’ হয়েছে। অর্থাৎ বাস্তব পরিস্থিতিই জোটের দিকে নিয়ে গিয়েছে কংগ্রেস ও সিপিএমকে। কী ভাবে ও কেন তা ‘উদ্ভূত’ হল, ১১-১২ জুন রাজ্য কমিটিতে আলোচনা করে রিপোর্ট তৈরি হবে। ইয়েচুরি সেখানে হাজির থাকবেন। তার পরে ১৭ থেকে ২০ জুন পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক বসবে। সেখানে ফয়সালা হবে।

তবে কেন্দ্রীয় কমিটিতেও অন্য রকম কিছু হওয়ার সম্ভাবনা কম বলেই ইঙ্গিত সিপিএম সূত্রে। সূর্যবাবু-বিমান বসুরা পলিটব্যুরোয় যুক্তি দিয়ে রেখেছেন, তাঁরা বাস্তব পরিস্থিতি মেনেই এগোচ্ছেন। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট না বাঁধলে সিপিএমের পক্ষে একা তৃণমূলের মোকাবিলা করা সম্ভব হতো না। তাই বলে তাঁরা আবার জাতীয় স্তরে কংগ্রেসের সঙ্গে রাজনৈতিক জোট বাঁধার কথা বলছেন না। সিপিএম নেতারা বলছেন, বিশাখাপত্তনমে কংগ্রেসের সঙ্গে জাতীয় বা রাজ্য স্তরে কোনও রকম জোট বা বোঝাপড়ায় না যাওয়ার রণকৌশল ঠিক করেছিলেন কারাট। ইয়েচুরি যে পুরোপুরি সেই পথে এগোতে চান না, তা তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে এর পরে অন্য রাজ্যের ভোটে কার রণকৌশল বজায় থাকবে, কেন্দ্রীয় কমিটিতে তারই ফয়সালা হবে।

Sitaram Yechury Alliance Congress CPM
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy