Advertisement
E-Paper

পড়শি দেশগুলির পরিণতি দেখে সতর্ক ভারতও! গণরোষ নিয়ে গবেষণার সিদ্ধান্ত নিল অমিত শাহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক

গত কয়েক বছরে ভারতের যে ক’টি প্রতিবেশী রাষ্ট্রে সরকার পড়ে গিয়েছে, তার নেপথ্যে রয়েছে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ। শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশের পর সেই ছবি দেখা গিয়েছে নেপালেও। ভারত সরকার সতর্ক।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৬:১০
Amit Shah asks police research department to study past protest to prevent mass agitation

অতীতের গণবিক্ষোভ নিয়ে বিশদে অনুসন্ধান ও গবেষণার নির্দেশ অমিত শাহের। —ফাইল চিত্র।

শ্রীলঙ্কা দিয়ে শুরু হয়েছিল। তার পর একে একে বাংলাদেশ এবং নেপাল। গত কয়েক বছরে ভারতের তিনটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রে প্রবল অস্থির পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে রাজনৈতিক পালাবদল ঘটে গিয়েছে। পড়ে গিয়েছে ক্ষমতাসীন সরকার। তিন ক্ষেত্রেই নেপথ্যে ছিল গণরোষ। দেশের মানুষই সরকারের নীতি-দুর্নীতিতে বিরক্ত হয়ে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে পথে নেমেছেন। আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার ফেলে দিয়েছেন। প্রতিবেশী দেশগুলির পরিণতি দেখে সতর্ক ভারত সরকারও। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে ইতিমধ্যে পদক্ষেপ করা হয়েছে। দেশের ইতিহাস ঘেঁটে অতীতের গণবিক্ষোভগুলি নিয়ে বিশদ অনুসন্ধান ও গবেষণার নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী অমিত শাহ।

গত জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো দিল্লিতে একটি সম্মেলনের আয়োজন করেছিল। ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজিস্‌ কনফারেন্স-২০২৫’ শীর্ষক দু’দিন ব্যাপী ওই সম্মেলনে ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও। সরকারি সূত্র উল্লেখ করে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, সেই সম্মেলনেই ব্যুরো অফ পুলিশ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-কে (পুলিশ গবেষণা বিভাগ বা বিপিআরডি) অতীতের গণবিক্ষোভ নিয়ে গবেষণার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তৈরি করতে বলা হয়েছে নির্দিষ্ট এসওপি। ভবিষ্যতে যাতে নির্দিষ্ট স্বার্থযুক্ত গণআন্দোলন ঠেকানো যায়, তা নিশ্চিত করতে এই নির্দেশ। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘বিপিআরডি-কে নির্দিষ্ট ভাবে বিভিন্ন গণবিক্ষোভের কারণ, ধরন এবং পরিণতিগুলি ঘেঁটে দেখতে বলা হয়েছে। কারা সে সব আন্দোলনের নেপথ্যে ছিলেন, আড়াল থেকে কারা ছড়ি ঘুরিয়েছেন, তার খোঁজও নিতে বলা হয়েছে।’’

উল্লেখ্য, বিপিআরডি-কে শাহের এই নির্দেশ গত জুলাইয়ে। তত দিনে শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশে সরকার পড়ে গিয়েছে গণরোষের জেরে। ঘটনাচক্রে, তার দু’মাসের মধ্যে নেপালেও একই পরিণতি হয়েছে। সম্মেলনে প্রতিবেশী দেশগুলির দৃষ্টান্ত দেওয়া হয়েছিল কি না, তেমন কোনও প্রসঙ্গ উঠেছিল কি না, তা স্পষ্ট নয়।

সূত্রের খবর, ১৯৭৪ সালের পর থেকে ভারতের নানা প্রান্তে যে সমস্ত সরকারবিরোধী প্রতিবাদ আন্দোলন হয়েছে, বিশেষ ভাবে তার তথ্য বিশ্লেষণ করতে বলা হয়েছে বিপিআরডি-কে। আন্দোলনের নেপথ্যে অর্থনৈতিক দিকগুলিও খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। বিপিআরডি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন একটি প্রতিষ্ঠান। সরকারের নির্দেশে ইতিমধ্যে তারা কাজ শুরু করে দিয়েছে। দক্ষ ও অভিজ্ঞ আধিকারিকদের নিয়ে গড়া হচ্ছে বিশেষ অনুসন্ধানী দল। তাঁরা বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন এবং পুরনো ঘটনা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করবেন। সাহায্য নেওয়া হবে রাজ্যগুলির গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডির-ও। তাঁদের গবেষণার ফল পর্যবেক্ষণ করে এসওপি তৈরি করা হবে। ভবিষ্যতে গণআন্দোলন ঠেকাতে ওই এসওপি মেনে চলবে সরকার।

অতীত আন্দোলন নিয়ে অনুসন্ধানে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি), ফাইনানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট-ইন্ডিয়া (এফআইইউ-আইএনডি), সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডিরেক্ট ট্যাক্সেস (সিবিডিটি)-এর মতো সংস্থাগুলিকেও যুক্ত করার নির্দেশ বিপিআরডি-কে দিয়েছেন শাহ। এই সংস্থাগুলির তথ্য থেকে গণবিক্ষোভের অর্থনৈতিক দিক সম্পর্কে ধারণা মিলতে পারে। পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদীদের অর্থসাহায্যের যে গোপন নেটওয়ার্ক চলে, তা প্রতিরোধের জন্য আলাদা এসওপি তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শুধু গণআন্দোলন নয়, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে জমায়েত এবং পদপিষ্টের মতো ঘটনাগুলি নিয়েও সতর্ক কেন্দ্র। কী কারণে এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, তা নির্ণয় করে আধিকারিকদের প্রয়োজনীয় এসওপি তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন শাহ। এ ছাড়া, খলিস্তানপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদ এবং পঞ্জাবের অপরাধ প্রবণতা ঠেকাতে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ), বিএসএফ এবং এনসিবি-র মতো সংস্থাগুলিকে সক্রিয় হতে বলেছেন তিনি। পঞ্জাবের পরিস্থিতি এবং রাজনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, এমন অভিজ্ঞ আধিকারিকদের এই কাজে নিয়োগ করতে বলা হয়েছে।

গত কয়েক বছরে ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলিতে যে ভাবে সরকার পড়ে গিয়েছে, তার ধাঁচে যথেষ্ট মিল রয়েছে। শাসকের অনমনীয়তা এবং দমনপীড়নের মুখে জনতার স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধ, বিক্ষোভ। ২০২২ সালে সেই কারণেই আর্থিক মন্দায় ধ্বস্ত শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে যেতে হয়েছিল গোতাবায়া রাজাপক্ষেকে। তাঁর এবং তৎকালীন তদারকি প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিঙ্ঘের বাসভবন দখল করে নিয়েছিল বিক্ষুব্ধ জনতা। আবার, ২০২৪ সালে কোটা সংস্কার বিরোধী আন্দোলনের জেরে পদ ছাড়তে হয়েছিল বাংলাদেশের শেখ হাসিনাকে। তিনি দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে এসেছিলেন ৫ অগস্ট। তাঁর সরকারি আবাস গণভবনেও ঢুকে পড়েছিল উত্তেজিত জনতা। চলেছিল দেদার লুটপাট। শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশ— উভয় ক্ষেত্রেই পরিস্থিতির দিকে প্রথম থেকে নজর রেখেছিল ভারত। পুলিশ গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগকে শাহের নির্দেশ তার প্রেক্ষিতেই বলে মনে করছেন অনেকে। ঘটনাচক্রে, এর পর নেপালের কেপি ওলির সরকারেরও অনুরূপ পরিণতি হল। ছাত্র-যুবদের আন্দোলনের জেরে গত মঙ্গলবার ওলি প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়েন। আপাতত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন দেশের সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কী। ২০২৬ সালের ৫ মার্চ নেপালে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।

Amit Shah Bangladesh Unrest Nepal Unrest
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy