Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ট্রিপল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ফের ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ মোদীর বিশ্বস্ত সেনাপতি অমিত

রামমন্দির আন্দোলনের তীব্র মেরুকরণের ঝড়েও উত্তরপ্রদেশে তিনশোর মুখ দেখেনি বিজেপি। আড়াই বছর আগে লোকসভা ভোটে উত্তরপ্রদেশে নরেন্দ্র মোদীর উন্নয়নের স্বপ্নের সঙ্গে মেরুকরণের তাসকে কাজে লাগিয়ে পদ্ম-ঝড় তুলে নায়ক হয়ে উঠেছিলেন অমিত শাহ।

বিজয়ী: সমর্থকদের সঙ্গে দলের সভাপতি অমিত শাহ। নয়াদিল্লির বিজেপি সদর দফতরে। শনিবার। ছবি: রয়টার্স।

বিজয়ী: সমর্থকদের সঙ্গে দলের সভাপতি অমিত শাহ। নয়াদিল্লির বিজেপি সদর দফতরে। শনিবার। ছবি: রয়টার্স।

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৭ ০৪:১৭
Share: Save:

রামমন্দির আন্দোলনের তীব্র মেরুকরণের ঝড়েও উত্তরপ্রদেশে তিনশোর মুখ দেখেনি বিজেপি। আড়াই বছর আগে লোকসভা ভোটে উত্তরপ্রদেশে নরেন্দ্র মোদীর উন্নয়নের স্বপ্নের সঙ্গে মেরুকরণের তাসকে কাজে লাগিয়ে পদ্ম-ঝড় তুলে নায়ক হয়ে উঠেছিলেন অমিত শাহ। এ বারেও সেই অঙ্কেই দেশের বৃহত্তম রাজ্যে ট্রিপল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ফের ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ মোদীর বিশ্বস্ত সেনাপতি।

আক্ষরিক অর্থেই ‘চপ্পা চপ্পা ভাজপা’র পদ্ম ফোটালেন উত্তরপ্রদেশের অলিতে-গলিতে। বিহারে মুখ থুবড়ে পড়ার পর উত্তরপ্রদেশে এই ‘ঐতিহাসিক’ জয়ের রহস্যটা কী? লোকসভায় মেরুকরণ করেছিলেন। বিহারে সেই পথে হাঁটলেও লালু-নীতীশ জোটের বাধায় সফল হননি। তালগোল পাকিয়েছিল জাতের অঙ্কেও। এ বার উত্তরপ্রদেশে মেরুকরণ করেছেন। কিন্তু উগ্র ভাবে নয়। জাতপাতের অঙ্ক মুছে হিন্দু ভোটকে একজোট করতে ঠিক যতটা প্রয়োজন ছিল, ততটাই করেছেন।

আর সে কারণেই ব্রাহ্মণ, ঠাকুর থেকে দলিত, ওবিসি— সবাইকে এক সূত্রে বেঁধে বিজেপির ভোটবাক্স ভরাতে পেরেছেন অমিত। সামনে রেখেছেন ‘সফল’ ব্র্যান্ডে মোদীকে।

অমিত শাহের ঘনিষ্ঠ নেতারা বলছেন, কী করতে হয় কী করতে নেই, সেটা ভালই জানেন এই নেতা। বরুণ গাঁধীর বিদ্রোহকে তিনি আমলই দেননি। আবার যোগী আদিত্যনাথের অসন্তোষকে সামাল দিয়েছেন। ছিল অমিতের নিজস্ব ইউএসপি— ‘মাইক্রো লেভেল ম্যানেজমেন্ট’।

আরও পড়ুন: মোদীর উত্তর

লোকসভা ভোটের সময়ই বুথভিত্তিক সংগঠন শক্তিশালী করে ফেলেছিলেন। সেই বিন্যাসেও ছিল জাতের অঙ্ক। বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া শ্রেণিকে প্রাধান্য। বিজেপি উচ্চবর্ণের দল— এই তকমা ঘোচাতে কেশব প্রসাদ মৌর্যকে দলের রাজ্য সভাপতি করেছিলেন। ফলে সংগঠনে জোর বাড়ছিলই। তার উপরে ভর দিয়ে ভোটে জয়ের জন্য একের পর এক অঙ্ক করে গিয়েছেন অমিত। মুলায়মের যাদব এবং মায়ার দলিত ভোটব্যাঙ্কে ফাটল ধরানোর পাশাপাশি সংখ্যালঘু ভোট ভাগাভাগি করিয়েছেন। উচ্চবর্ণের কুড়ি শতাংশকে একজোট করে বিজেপির পিছনে টানার চেষ্টা তো ছিলই। পশ্চিমে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে জাঠেদের উস্কে দেওয়ার কাজটিও করেছেন নীরবে। কুর্মি, লোধ, গুজর, নাই, কুমহার, মাল্লা-র পাশাপাশি পাসি, ধোবি, কোরি, বাল্মীকি— সব নিম্নবর্ণের হিন্দু ভোট ঝুলিতে ভরার জন্য একদিকে উন্নয়নের স্বপ্ন দেখিয়ে ‘ব্র্যান্ড মোদী’র ব্যবহার, অন্য দিকে মোদীকে দিয়েই ‘শ্মশান’-‘কবরস্থান’ বলে মেরুকরণ করেছেন অমিত।

মোদীর বিশ্বস্ত সেনাপতির সব অঙ্কই উত্তরপ্রদেশের ভোটে মিলে গিয়েছে। অমিতের নিজের কথায় অবশ্য, ‘‘এই জয় মোদীর প্রতি উত্তরপ্রদেশের মানুষের শ্রদ্ধার্ঘ্য।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE