E-Paper

প্রশ্ন অনুপ্রবেশ, ‘মুছে যাবেন!’ তৃণমূলকে শাহ

নির্বাচনী সংস্কার নিয়ে গত দু’দিনের আলোচনার শেষে আজ সন্ধ্যায় জবাবি ভাষণে অনুপ্রবেশ প্রশ্নে সরব হন অমিত শাহ। কংগ্রেস ও তৃণমূল নেতৃত্ব অনুপ্রবেশকারীদের সুরক্ষা কবচ দিতেই এসআইআর-এর বিরুদ্ধে সরব— দাবি করেন তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৭:৪৭
লোকসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বুধবার।

লোকসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বুধবার। ছবি: পিটিআই।

বিহারে বিধানসভা নির্বাচনের আগে ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ করেছিলেন রাহুল গান্ধী। ‘ভোটচুরির’ অভিযোগে এক পংক্তিতে এনে ফেলতে চেয়েছিলেন কেন্দ্রীয় সরকার ও জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে। একই ভাবে আগামী বছর বিধানসভা ভোটের আগে এখন পশ্চিমবঙ্গে যে এসআইআর প্রক্রিয়া চলছে, তার বিভিন্ন দিক নিয়ে বার বার প্রশ্ন তুলছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব। সুপ্রিম কোর্টে মামলাও চলছে এ নিয়ে। এই আবহে আজ লোকসভায় হওয়া নির্বাচনী সংস্কার সংক্রান্ত আলোচনায় অনুপ্রবেশ প্রশ্নে তৃণমূলকে কার্যত হুঁশিয়ারি দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি বলেন, ‘‘অনুপ্রবেশকারীদের পাশে থাকলে বাংলা থেকে মুছে যাবে তৃণমূল। ঠিক যে ভাবে ‘অনুপ্রবেশকারী বাঁচাও যাত্রা’ করতে গিয়ে বিহার থেকে সাফ হয়ে গিয়েছেন রাহুল গান্ধীর দল।’’

নির্বাচনী সংস্কার নিয়ে গত দু’দিনের আলোচনার শেষে আজ সন্ধ্যায় জবাবি ভাষণে অনুপ্রবেশ প্রশ্নে সরব হন অমিত শাহ। কংগ্রেস ও তৃণমূল নেতৃত্ব অনুপ্রবেশকারীদের সুরক্ষা কবচ দিতেই এসআইআর-এর বিরুদ্ধে সরব— দাবি করেন তিনি। তিনি অনুপ্রবেশ প্রসঙ্গ তোলামাত্রই ওয়াকআউট করেন কংগ্রেস ও তৃণমূল সাংসদেরা। যা দেখে শাহের কটাক্ষ, ‘‘এসআইআরের বিরোধিতা ও অনুপ্রবেশকারীদের পাশে থাকলে বিহারে কংগ্রেসের মতো পশ্চিমবঙ্গে এক হাল হবে তৃণমূলেরও।’’

শাহ এ দিন দাবি করেন, ‘‘গোটা দেশে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ৫৬৩ কিমি এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া যে একমাত্র রাজ্যে লাগানো হয়নি, সেটা পশ্চিমবঙ্গ।’’ তাঁর আরও দাবি, ফলে অনুপ্রবেশ আটকানো সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘‘অনুপ্রবেশকারীরা সীমান্ত পার হয়ে প্রথমে কোনও গ্রামে আশ্রয় নেয়। প্রশ্ন হল, স্থানীয় প্রশাসন কী করছে? এর পর সেই ব্যক্তিকে আধার-সহ অন্য পরিচয়পত্র তৈরি করে দেওয়া হয়। এর কোনও দায় নেই রাজ্যের?” এতে দেশের ভবিষ্যৎ ও সুরক্ষার সঙ্গে আপস করা হচ্ছে বলে সরব হন শাহ।

যদিও তৃণমূলের পাল্টা প্রশ্ন, সীমান্তে কাঁটাতার দেওয়া থেকে শুরু করে সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব বিএসএফের, যে বাহিনী শাহের মন্ত্রকেরই অধীনে। এখন বিএসএফের এলাকা সীমান্ত থেকে ৫০ কিলোমিটার ভিতর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তার পরেও অনুপ্রবেশের দায়িত্ব তিনি রাজ্যের ঘাড়ে চাপাচ্ছেন কী ভাবে? তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনের বক্তব্য, “পূর্ব সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব রয়েছে অমিত শাহের নেতৃত্বাধীন বিএসএফ-এর। তাও অনুপ্রবেশ হচ্ছে— এ কথা স্বীকার করে নেওয়ায় শাহের উচিত আগামিকাল সকাল ১১টার মধ্যে ইস্তফা দেওয়া।”

বর্তমানে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বেছে নেন প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার বিরোধী দলনেতা ও প্রধানমন্ত্রীর বেছে নেওয়া সরকারের কোনও মন্ত্রী। সেখানে সংখ্যালঘু হওয়ায় বিরোধী দলনেতার বক্তব্যের গুরুত্ব থাকে না— এই অভিযোগে গত কাল সরব হন রাহুল। জবাবে শাহ বলেন, “গত ৭৩ বছরে এ নিয়ে আইন ছিল না। প্রধানমন্ত্রী পছন্দমতো কাউকে বেছে নিতেন। আমাদের সরকার কমিটি গঠন করে স্বচ্ছতা আনার চেষ্টা করেছে।” বুথের সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ্যে না-আনা নিয়ে রাহুলের অভিযোগের জবাবে শাহ বলেন, “আইন মেনে ৪৫ দিন পরে বুথের ভিডিয়ো মুছে দেওয়া হয়। তার মধ্যে কেউ আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন।” ইভিএমের বিশ্বাসযোগ্যতার প্রশ্নে শাহের বক্তব্য, “রাজীব গান্ধী দেশে ইভিএম এনেছিলেন। ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সারা দেশে এর প্রথম প্রয়োগ হয়। ২০০৪ ও ২০০৯ সালের লোকসভায় কংগ্রেস জেতায় ইভিএম সন্দেহের ঊর্ধ্বে ছিল। কিন্তু ২০১৪ সালে বিজেপি জেতার পর থেকেই ইভিএমে কারচুপি নিয়ে কংগ্রেস সরব হয়।”

শাহের বক্তব্যের সময়ে রাহুলকে বলতে শোনা যায়, তাঁর ‘ভোটচুরির’ অভিযোগগুলো নিয়ে সংসদে আলাদা বিতর্ক করা যায়। জবাবে ‘কংগ্রেসের ভোটচুরির’ তিনটি পাল্টা দৃষ্টান্ত দেখিয়ে শাহ জানান, প্রথমত, স্বাধীনতার পরে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন, সেই ভোটাভুটিতে দু’টি ভোট পেয়েছিলেন নেহরু। আর বল্লভভাই পটেল ২৮টি। তবু নেহরুই প্রধানমন্ত্রী হন। দ্বিতীয়ত, ইলাহাবাদ হাই কোর্ট ১৯৭৫ সালে ইন্দিরার নির্বাচন অবৈধ বলে ঘোষণা করলেও, ক্ষমতা ধরে রাখতে জরুরি অবস্থা জারি করেন তিনি। এর পাশাপাশি, সম্প্রতি দিল্লির কোর্টে সনিয়া গান্ধী ভারতের নাগরিক হওয়ার আগে ভোটার হয়েছিলেন কি না, এই সংক্রান্ত একটি মামলা উঠেছে। শাহ বলেন, “ওই তিনটি উদাহরণ হল, আসল ভোট চুরির উদাহরণ।” বিতর্কের শেষে রাহুলের দাবি, তাঁর একটি প্রশ্নেরও জবাব পাননি।

জবাবি ভাষণে বিরোধীদের আক্রমণ করতে গিয়ে একটি অপশব্দ বলেন শাহ। যা নিয়ে পরে নিজের এক্স হ্যান্ডলে রাহুল লেখেন, ভোট চুরি নিয়ে তাঁর আতঙ্ক এবং বেইমানিকেই সামনে এনে দিচ্ছে এই ঘটনা। ঘটনাচক্রে আজ সংসদে উপস্থিত ছিলেন অমিত শাহের স্ত্রী সোনাল। যদিও শাহের পুরো ভাষণ নিজের এক্স হ্যান্ডলে শেয়ার করে প্রধানমন্ত্রী সাধুবাদ দেন তাঁর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Amit Shah BJP Infiltrators infiltration Bangladeshi Infiltration TMC

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy