বিচারপতি যশবন্ত বর্মাকে অপসারণের জন্য আইন মাফিক ফের তদন্ত কমিটি তৈরি হবে। আগামী ২১ জুলাই থেকে শুরু সংসদের বাদল অধিবেশনে বিচারপতি বর্মাকে ‘ইমপিচমেন্ট’ বা অপসারণের প্রস্তাব আসবে। তার জন্য আগামী সপ্তাহেই শাসক, বিরোধী দলের সই সংগ্রহ করা শুরু হবে। তার আগে লোকসভা না রাজ্যসভা, কোথায় এই প্রস্তাব আসবে, তা ঠিক করা হবে।
দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি থাকাকালীন যশবন্ত বর্মার বাড়ি থেকে বস্তা ভর্তি নগদ টাকা উদ্ধার হয়েছিল। তার পরে সুপ্রিম কোর্ট তদন্ত কমিটি তৈরি করেছিল। সেই কমিটি বিচারপতি বর্মার দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছে। ১৯৬৮ সালের বিচারপতি তদন্ত আইন অনুযায়ী, সংসদে কোনও বিচারপতিকে অপসারণের প্রস্তাব জমা পড়লে তদন্ত কমিটি গঠন করতে হয়। এ ক্ষেত্রে যে-হেতু সুপ্রিম কোর্টের তৈরি তদন্ত কমিটি ইতিমধ্যেই বিচারপতি বর্মার বিরুদ্ধে মত দিয়েছে, তাইফের তদন্ত কমিটি গঠনের প্রয়োজন নেই বলে মোদী সরকারের অন্দরমহলে ভাবনা ছিল। শেষ পর্যন্ত ঠিক হয়েছে, সংসদে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব আসার পরে আইন মেনেই তদন্ত কমিটি তৈরি করা হবে। লোকসভারক্ষেত্রে স্পিকার, রাজ্যসভার ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান এই তদন্ত কমিটি তৈরির নির্দেশ দেবেন।
তবে এ ক্ষেত্রে তিন মাসের যে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া রয়েছে, তা শিথিল করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজুর বক্তব্য, সরকারের তরফে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। ঐকমত্যের ভিত্তিতেই এগোনো হবে।
ইলাহাবাদ হাই কোর্টের বিচারপতি শেখর যাদব বিশ্ব হিন্দু পরিষদের অনুষ্ঠানে গিয়ে সাম্প্রদায়িক মন্তব্য করার পরে তাঁর বিরুদ্ধে আগেই বিরোধীরা রাজ্যসভায় অপসারণের প্রস্তাব এনেছিলেন। মোদী সরকার অবশ্য তা নিয়ে তাড়াহুড়ো করতে রাজি নয়। সরকারি সূত্রের যুক্তি, বিচারপতি যাদবের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক মন্তব্যের অভিযোগের সঙ্গে বিচারপতি বর্মার বাড়িতে বস্তা ভর্তি নগদ উদ্ধারের তুলনা হয় না।
সংসদের বাদল অধিবেশন ২১ জুলাই থেকে শুরু হয়ে ২১ অগস্ট শেষ হবে। মোদী সরকার আশা করছে, অধিবেশনের মধ্যেই বিচারপতি বর্মাকে অপসারণের প্রক্রিয়া সেরে ফেলা যাবে। আইন অনুযায়ী, লোকসভায় অন্তত ১০০ জন ও রাজ্যসভায় অন্তত ৫০ জন সাংসদ ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব জমা দেওয়ার পরে যদি স্পিকার বা চেয়ারম্যান তা গ্রহণ করেন, তা হলে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বা অন্য কোনও বিচারপতির নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি তৈরি হয়। কমিটি বিচারপতিকে দোষী সাব্যস্ত করলে তা নিয়ে সংসদে বিতর্ক হয়। লোকসভা ও রাজ্যসভায় উপস্থিত সাংসদদের দুই-তৃতীয়াংশের ভোটে অপসারণ প্রস্তাব পাশ হলে রাষ্ট্রপতি বিচারপতিকে অপসারণের নির্দেশিকায় সই করেন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)