Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Opposition Meet in Mumbai

‘অনেক আলোচনা হয়েছে, এ বার যা করার দ্রুত করতে হবে’, কর্মসূচির জন্য তৎপরতা ‘ইন্ডিয়া’য়

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রস্তাব দিয়েছেন, আগামী ২ অক্টোবর মোহনদাস কর্মচন্দ গান্ধীর জন্মবার্ষিকীতে দিল্লির রাজঘাট থেকে ‘ইন্ডিয়া’র মূল কর্মসূচি হিসেবে পাঁচ-ছ’টি বিষয় ঘোষণা করে দেওয়া হোক।

মুম্বইয়ে ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাহুল গান্ধীর সৌজন্য বিনিময়। বৃহস্পতিবার।

মুম্বইয়ে ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাহুল গান্ধীর সৌজন্য বিনিময়। বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র।

প্রেমাংশু চৌধুরী
মুম্বই শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৬:৫৫
Share: Save:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘সময় নেই সময় নষ্ট করার!’ অরবিন্দ কেজরীওয়াল বললেন, ‘৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাজ্য স্তরে আসন বণ্টনের সূত্র ঠিক করে ফেলা হোক।’ নীতীশ কুমার বললেন, ‘অনেক আলোচনা হয়েছে। এ বার যা করার তাড়াতাড়ি করে ফেলতে হবে।’ উদ্ধব ঠাকরেও একই কথা বললেন। কংগ্রেসের নেতারা মনে করিয়ে দিলেন, নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের জন্য তাঁরা ব্যস্ত থাকবেন। তাই তার আগেই কাজ শুরু করে দিতে হবে।

তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজকের বৈঠকে প্রস্তাব দিয়েছেন, আগামী ২ অক্টোবর মোহনদাস কর্মচন্দ গান্ধীর জন্মবার্ষিকীতে দিল্লির রাজঘাট থেকে ‘ইন্ডিয়া’র মূল কর্মসূচি হিসেবে পাঁচ-ছ’টি বিষয় ঘোষণা করে দেওয়া হোক। এই পাঁচ-ছ’টি বিষয়ই বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া’র ইস্তাহারের ভিত্তি হতে পারে। মমতা বলেছেন, জোটের সবাই মিলে রাজঘাট থেকে এই ঘোষণা করা যেতে পারে। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমে পড়তে হবে।

মুম্বইয়ের পাঁচতারা হোটেলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে বৈঠক শুরু হয়। তাৎপর্যপূর্ণ হল, বেঙ্গালুরুর মতো এ বারের বৈঠকেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশেই বসে ছিলেন রাহুল গান্ধী। রাহুলের অন্য পাশে ছিলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। মুম্বইয়ে বৈঠকের আগে দিল্লিতে রাহুল ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রাতরাশ বৈঠক করে এসেছিলেন। রাজ্য স্তরে কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএমের আসন সমঝোতা নিয়ে সেখানে কথা হয়েছে বলে অনেকের অনুমান। তারপরে ‘ইন্ডিয়া’-র বৈঠকে মমতা, রাহুল, ইয়েচুরির পাশাপাশি বসা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক শিবির। প্রসঙ্গত, এ দিন কংগ্রেসের এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) মমতার আর তৃণমূলের এক্স হ্যান্ডলে রাহুলের ছবি প্রকাশিত হয়েছে।

তৃণমূলের তরফে মমতার সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ডেরেক ও’ব্রায়েন বৈঠকে যোগ দেন। মমতা বৈঠকের শুরুতে উদ্ধব ঠাকরে, নীতীশ কুমারদের সঙ্গে কথা বলেন। তেজস্বী যাদব এসে তাঁকে প্রণাম করে যান। বৈঠকের আগে মমতা মুকেশ অম্বানীর তৈরি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রও ঘুরে আসেন।

অভিষেক মুম্বইয়ে আসার আগে রাহুলের পাশাপাশি দিল্লিতে আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরীওয়ালের সঙ্গেও বৈঠক করেছিলেন। কেজরীওয়াল আজ বৈঠকে বলেছেন, রাজ্য স্তরে কী ভাবে ‘ইন্ডিয়া’র দলগুলির মধ্যে আসন সমঝোতা হবে, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তার পদ্ধতি ঠিক করে ফেলা হোক। মুম্বইয়ে বৈঠক শুরুর আগেই কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব দিল্লির প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে অনিল চৌধরিকে সরিয়ে অরবিন্দর সিংহ লাভলি-কে নতুন প্রদেশ সভাপতি নিয়োগ করে। তার পরে দিল্লিতে কংগ্রেস ও আপ-এর মধ্যে আসন সমঝোতার সম্ভাবনা আরও বেড়েছে। বৈঠকের পরে কেজরীওয়াল বলেন, “সব রাজ্যেই আসন সমঝোতা হবে।” সমাজবাদী পার্টির রামগোপাল যাদবও বলেন, অনেক রাজ্যে আসন সমঝোতা করতে সময় লাগবে।

মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্বের পাশাপাশি ‘ইন্ডিয়া’র তরফে ইভিএমে কারচুপির আশঙ্কা নিয়েও প্রশ্ন তোলা উচিত বলে এ দিনের বৈঠকে মত দিয়েছেন ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতা জি দেবরাজন। তিনি বলেন, অশোক বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে একজন অধ্যাপক গবেষণাপত্র প্রকাশের পরে তাঁকে সরানো হয়েছে। এ নিয়ে প্রশ্ন তোলা দরকার। এ দিনের বৈঠকের পরে পাঁচটি বাম দলের প্রধান— সীতারাম ইয়েচুরি, জি দেবরাজন, মনোজ ভট্টাচার্য, ডি রাজা, দীপঙ্কর ভট্টাচার্য আলাদা ভাবে বৈঠক করেন। তাঁদের মতে, পুরনো পেনশন প্রকল্প, কৃষি ক্ষেত্রের সঙ্কট নিয়ে সরব হওয়া প্রয়োজন।

সূত্রের খবর, শুক্রবার দ্বিতীয় দিনের বৈঠকে জোটের আহ্বায়ক বা চেয়ারপার্সন কাউকে করা হবে কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। একটি সমন্বয় কমিটি তৈরি হবে। সেটি ‘ইন্ডিয়া’-র বর্তমান শরিক ২৮টি দলের এক জনকে নিয়ে ২৮ জনের কমিটি হতে পারে। অথবা ১৪-১৫ জনের ছোট কমিটি হতে পারে। সার্বিক ভাবে জোটের আহ্বায়ক কাউকে নিয়োগ করা হবে, না কি সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক নিয়োগ করা হবে, তা চূড়ান্ত হবে। এ ছাড়াও কর্মসূচি, প্রচারের বিষয়, তথ্য বিশ্লেষণ, জোটের মুখপাত্র, জনসভার পরিকল্পনা সংক্রান্ত একাধিক উপ-কমিটি তৈরি হবে। সব দলের কাছে নাম চাওয়া হয়েছে।

লালুপ্রসাদ প্রস্তাব দিয়েছেন, মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ‘ইন্ডিয়া’র জনসভা শুরু হোক বিহার থেকে। পটনা ছাড়াও আরএসএসের সদর দফতর নাগপুর, চেন্নাই, গুয়াহাটি, দিল্লিতে জনসভার প্রস্তাব রয়েছে। এ দিনের বৈঠকে রাহুল, সনিয়া কেউই মুখ খোলেননি। কংগ্রেসের তরফে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে আলোচ্যসূচিতে কী কী থাকা উচিত, তার প্রস্তাব দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE