Advertisement
E-Paper

ভোটের মুখে কালোবাজারে বিকোচ্ছে কার্তুজ

ভোট-বাজারে চাহিদা তুঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্রের। বিক্রি বেড়েছে গুলিরও। কেনাকাটার হিড়িকে কোনও কোনও দোকানে গুলির জন্য কালোবাজারে দ্বিগুণ দাম হাঁকছেন বিক্রেতারা। অভিযোগ, দেওয়া হচ্ছে না রসিদ। নিমেষে বিক্রি হচ্ছে তা-ও।

দিবাকর রায়

শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৫ ০৩:৩৬

ভোট-বাজারে চাহিদা তুঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্রের। বিক্রি বেড়েছে গুলিরও। কেনাকাটার হিড়িকে কোনও কোনও দোকানে গুলির জন্য কালোবাজারে দ্বিগুণ দাম হাঁকছেন বিক্রেতারা। অভিযোগ, দেওয়া হচ্ছে না রসিদ। নিমেষে বিক্রি হচ্ছে তা-ও।

বিহারে বিধানসভা ভোটের আগে এমনই ছবি দেখা যাচ্ছে পটনার মতো শহরে।

এ সবে চিন্তিত বিহার প্রশাসন। শুরু হয়েছে তদন্তও। পটনার আর্মস ম্যাজিস্ট্রেট অমরেশ কুমার বলেছেন, ‘‘দোকানদার যদি গুলি বিক্রির রসিদ না দেন তবে তা যথেষ্ট আশঙ্কার। এ নিয়ে তদন্ত করা হবে। জেরার মুখে পড়বেন দোকানদার। কেউ দোষী প্রমাণিত হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, সপ্তাহ দুয়েক ধরে পটনা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি বিক্রির লাইসেন্সপ্রাপ্ত দোকানগুলিতে ভিড় জমছে। বেশির ভাগ দোকানই গুলি, কার্তুজ নেই বলে ক্রেতাদের ফিরিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু কেউ অতিরিক্ত টাকা দিলে, তাঁকে গুলি বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু রসিদ দেওয়া হচ্ছে না। শনিবার গুপ্তেশ্বর প্রসাদ সিংহ নামে এক ব্যক্তি দোকানে গুলি কিনতে গেলে প্রথমে তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু অতিরিক্ত দাম দিতে রাজি হওয়ায় মেলে গুলি। তিনি বিষয়টি প্রশাসনকে জানান। এর পরই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সাধারণ ভাবে .৩২ বোরের আগ্নেয়াস্ত্রের একটি গুলির দাম ৮০ টাকা। কিন্তু দোকানে দাম নেওয়া হচ্ছে ১৪০ টাকা। দোকানের খাতা এবং গ্রাহকের লাইসেন্সে গুলি বিক্রির ‘এন্ট্রি’ করা হলেও, রসিদ দেওয়া হচ্ছে না। ভবিষ্যতে এর জেরে গ্রাহক সমস্যায় পড়তে পারেন বলে মত পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের। লাইসেন্সে গুলির ‘এন্ট্রি’ করতে রাজি না হলে, ওই সব ক্রেতাদের কাছে গুলিপিছু ৩০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে।

গুলির কালোবাজারির খবরে মুঙ্গেরের আগ্নেয়াস্ত্রের চাহিদা বাড়ছে। মুঙ্গেরের বেআইনি কারখানায় তৈরি দেশি পিস্তলের চাহিদা শুধু বিহার নয়, সারা দেশ জুড়েই। আজ সমস্তিপুর থেকে পাঁচ জন অস্ত্র ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতদের কাছে ‘ডবল ব্যারেল’ আগ্নেয়াস্ত্র-সহ প্রচুর গুলি মিলেছে।

অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের লেনদেনে জড়িত অভিযোগে প্রতি দিনই কেউ না কেউ গ্রেফতার হচ্ছে। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতদের বেশির ভাগের বাড়িই মুঙ্গের লাগোয়া এলাকায়। মাসখানেক আগে মুঙ্গেরে অবৈধ অস্ত্র কারখানার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছিল জেলা পুলিশ। কাটারিয়া গ্রাম থেকে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃত মনোজ মণ্ডল এবং সাগির শেখের বাড়ি মালদহ ও মুর্শিদাবাদে। তারা ২০১৪ সালেও বেআইনি অস্ত্র তৈরির অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিল। পরে জামিনে ছা্ড়া পায়। তাদের কাছ থেকে ন’টি স্বয়ংক্রিয় ৯ এমএম পিস্তল এবং ১৪টি গুলিভর্তি ম্যাগাজিন পেয়েছিল পুলিশ। তবে কারখানার মালিক মহম্মদ রিজওয়ান স্থানীয় বাসিন্দা। বাইরে থেকে মিস্ত্রি ও দক্ষ শ্রমিক নিয়ে এসে সেখানে অস্ত্র তৈরিই শুধু নয়, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে বলে রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থার কাছে রিপোর্ট রয়েছে।

নির্বাচন কমিশন কয়েক দিন আগে সমস্ত জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে বৈঠকে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারে জোর দিতে বলেছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত তিন বছরে অবৈধ অস্ত্র ব্যবহারে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বিহার। ওই তালিকায় প্রথম উত্তরপ্রদেশ এবং তৃতীয় পশ্চিমবঙ্গ। সরকারি হিসেবে, ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিহার থেকে ২ হাজার ২৮৩টি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ১ হাজার ১০৩ জনকে। তিন বছরে সারা দেশে প্রায় ৩৬ হাজার অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। সেই অস্ত্রের ৫৯ শতাংশই উদ্ধার হয়েছে উত্তরপ্রদেশ, বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গ থেকে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের বেশিরভাগটাই তৈরি হয়েছে মুঙ্গের ও লাগোয়া এলাকায়।

নির্বাচন কমিশনের তরফে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে লাইসেন্স থাকা অস্ত্রের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে। চলতি বছরের ১ অক্টোবর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক লাইসেন্স থাকা অস্ত্র সংক্রান্ত জাতীয় তথ্য প্রকাশ করবে। তা নিয়েও নথি জমা দিতে বিহার প্রশাসনের ঘাম ছুটেছে।

Bihar Arms black market Patna
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy