Advertisement
০৭ মে ২০২৪
India

সেনাপ্রধান নরবণে নিশ্চিন্ত নন পাক শান্তি-প্রয়াসেও

সেনাপ্রধান এম এম নরবণে। ফাইল চিত্র।

সেনাপ্রধান এম এম নরবণে। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২১ ০৭:৫০
Share: Save:

গত পাঁচ-ছয় বছরে এই প্রথম! গোটা মার্চ মাস ধরে শান্ত রয়েছে ভারত-পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণরেখা। পাকিস্তানের দিক থেকে ছুটে আসেনি একটিও গুলি। জঙ্গি অনুপ্রবেশ কার্যত বন্ধ। তবে দু’দেশের সামরিক স্তরে হওয়া সমঝোতা মেনে পাকিস্তান গত এক মাস ধরে শান্তি বজায় রাখলেও পাক নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর এখনও রয়ে গিয়েছে জঙ্গিদের লঞ্চপ্যাড। তাই ভারতের সেনাপ্রধান এম এম নরবণে আজ এক আলোচনাসভায় পাকিস্তানের শান্তি ফেরানোর পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন ঠিকই। কিন্তু একই সঙ্গে তিনি মনে করেন, এই পদক্ষেপ কতটা দীর্ঘমেয়াদি ও আন্তরিক, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। চিনা অনুপ্রবেশ প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান জানান, লাদাখ সীমান্তে বেশ কিছু এলাকা নিয়ে আলোচনা এখনও বাকি রয়েছে। তাঁর আশা, প্যাংগং লেকের মতো ওই এলাকাগুলিতেও আলোচনার ভিত্তিতে সমাধান সূত্র পাওয়া যাবে।

গত মাসে ভারত ও পাকিস্তানের সেনা স্তরে সিদ্ধান্ত হয়, আপাতত দু’দেশ নিয়ন্ত্রণরেখায় গোলাগুলি ছোড়া বন্ধ রাখবে। ওই সিদ্ধান্তের পর থেকে ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত একেবারে শান্ত বলে আজ দাবি করেন সেনাপ্রধান। কিন্তু পাকিস্তান কত দিন শান্তির পায়রা উড়িয়ে যাবে, তা নিয়ে দেশের সামরিক কর্তাদের মনে সন্দেহ রয়েছে বলেও আজ স্পষ্ট করে দেন সেনাপ্রধান। তিনি বলেন, ‘‘দেশের মাটিতে জঙ্গিদের দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করতে না-পারলে ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স বা এফএটিএফ-এর তালিকায় আরও নীচে চলে যাওয়ার আশঙ্কা করছে ইসলামাবাদ। তাদের প্রকৃত লক্ষ্য, নিজেদের ভাবমূর্তি উদ্ধার করা। সম্ভবত সেই কারণেই সীমান্তে গুলি বিনিময় বন্ধ রেখেছে পাক সেনা।’’

গুলি চালিয়ে ‘কভার’ দিয়ে সাধারণত জঙ্গিদের ভারতে অনুপ্রবেশে সাহায্য করত পাক সেনা। এখন গুলি চালানো বন্ধ থাকায় কমে গিয়েছে অনুপ্রবেশের ঘটনাও। কিন্তু নরবণের সতর্কবার্তা, ‘‘সীমান্ত শান্ত হলেও পাকিস্তানের দিকে লঞ্চপ্যাডগুলি এখনও রয়ে গিয়েছে, যা চিন্তার বিষয়।’’ আগামী দিনে দু’দেশের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলেই লঞ্চপ্যাডগুলি ফের জঙ্গি অনুপ্রবেশে ব্যবহার হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে সেনার শীর্ষ কর্তার মনে। তাঁর কথায়, ‘‘আমরাও সতর্ক রয়েছি। তবে এ বারের শান্তি প্রক্রিয়ায় পাক সেনা সরাসরি অংশ নিয়েছে। ফলে সমঝোতা মেনে চলার প্রশ্নে সে দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গেই পাক সেনার দায়বদ্ধতা রয়েছে।’’ নরবণে মনে করেন, পাকিস্তানের প্রতি ভারতের আস্থা তখনই বাড়বে, যখন সীমান্তে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি বজায় রাখার সঙ্গেই জঙ্গিদের জন্য বানানো লঞ্চপ্যাডগুলি ধ্বংস করে দেবে ইসলামাবাদ। পঞ্জাব সীমান্তে পাকিস্তান যে ধারাবাহিক ভাবে ড্রোনে করে গোলা-বারুদ পাঠাচ্ছে— তা-ও বন্ধের উপরে জোর দিয়েছেন সেনাপ্রধান।

চিনের সঙ্গে বছরখানেক ধরে চলা সীমান্ত বিবাদ আলোচনার মাধ্যমেই মেটার আশা করছেন নরবণে। তাঁর কথায়, ‘‘খুব শীঘ্রই দশম দফার আলোচনা শুরু করবে নয়াদিল্লি-বেজিং। সেখানে লাদাখের অন্য বিতর্কিত এলাকাগুলি ধরে ধরে আলোচনা হবে।’’ বিরোধীদের দাবি খারিজ করে আজ সরকারের সুরেই নরবণে দাবি করেছেন, চিনের সঙ্গে সাম্প্রতিক বিবাদে ভারত এক ইঞ্চি জমিও হারায়নি। তবে তিনি জানান, চিন প্যাংগং এলাকা থেকে সেনা সরিয়ে নিলেও তাদের অতিরিক্ত সেনা এখনও ফিরে যায়নি। তারা নিজেদের এলাকায় ফিরে গেলে তবেই বলা সম্ভব হবে যে, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় সত্যিকারের শান্তি ফিরে এসেছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, চিনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মুখপাত্র রেন গোঝেং আজ বলেছেন, ‘‘চিন ও ভারতের যৌথ উদ্যোগের ফলে সীমান্ত এলাকার পরিস্থিতি লক্ষ্যণীয় ভাবে সহজ হয়েছে।’’ তবে ভবিষ্যতে আরও সেনা সরানোর ব্যাপারে কিছু বলেননি তিনি। নরবণের কথায়, ‘‘আসল সমস্যা হল প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা সংলগ্ন এলাকার ভূপ্রকৃতি। ওই এলাকার একাধিক জায়গা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। প্রত্যেকটি এলাকা আলাদা ভাবে চিহ্নিত না-হওয়া পর্যন্ত বলা সম্ভব নয়, কে কার জমিতে গিয়ে বসে আছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

India pakistan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE