Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বন্ধু জেটলির বিদায়ে শাসক-বিরোধী একাকার

সরকারে থাকলে বিরোধীদের সঙ্গে আর বিরোধী শিবিরে থাকলে শাসক পক্ষের সঙ্গে, সংসদেই হোক বা সংসদের বাইরে— যোগাযোগের অন্যতম সূত্র ছিলেন জেটলি।

অরুণ জেটলির শেষকৃত্যে জেটলি-পুত্র রোহনের সঙ্গে অমিত শাহ। রবিবার দিল্লির নিগমবোধের শ্মশানে। ছবি: প্রেম সিংহ

অরুণ জেটলির শেষকৃত্যে জেটলি-পুত্র রোহনের সঙ্গে অমিত শাহ। রবিবার দিল্লির নিগমবোধের শ্মশানে। ছবি: প্রেম সিংহ

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৯ ০৩:২৯
Share: Save:

রাফাল কাণ্ডের জেরে ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ স্লোগানে গোটা দেশ তখন উত্তাল। রাহুল গাঁধীর আক্রমণে বেকায়দায় মোদী সরকার। সেই সময়েও কিডনি প্রতিস্থাপনের পরে বাড়িতে বিশ্রামে থাকা অরুণ জেটলিকে দেখতে যেতে চেয়েছিলেন রাহুল। জেটলি জানান, সংক্রমণের ভয়ে তিনি কাচের ঘরে বন্দি। এক জন নার্স ছাড়া কারও কাছে আসার অনুমতি নেই। পরিবারেরও না। রাহুল তা-ও নাছোড়বান্দা। চিকিৎসকদের পরামর্শে সে যাত্রা কোনও মতে রাহুলের আসা ঠেকান জেটলি। বিপক্ষ শিবিরের সঙ্গে এই যে সম্পর্কের টান, অরুণ জেটলির মৃত্যুতে আপাতত সেই সেতু ভেঙে গেল বলে স্বীকার করে নিচ্ছেন শাসক-বিরোধী উভয় পক্ষের নেতারাই।

সরকারে থাকলে বিরোধীদের সঙ্গে আর বিরোধী শিবিরে থাকলে শাসক পক্ষের সঙ্গে, সংসদেই হোক বা সংসদের বাইরে— যোগাযোগের অন্যতম সূত্র ছিলেন জেটলি। আজ তাই বাড়ি থেকে নিগমবোধের শ্মশান, সর্বত্রই ফিরে এল সেই গল্প। দীর্ঘ দিনের বন্ধু আইনজীবী কপিল সিব্বল সকালেই চলে এসেছিলেন বাড়িতে। রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে দু’জনে বিপক্ষে থাকলে কী হবে, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের বা সাংসদদের ক্রিকেট ম্যাচগুলো একসঙ্গেই খেলেছেন দুই বন্ধু। সিব্বল জানালেন, জেটলি বরাবরই বন্ধু ও আদর্শের প্রশ্নে অনমনীয় ছিলেন।

বিরোধী শিবিরে প্রশ্নাতীত গ্রহণযোগ্যতার বিচারে হয়তো সুষমা স্বরাজের চেয়েও এগিয়ে থাকবেন জেটলি। মোদী সরকারের প্রথম পর্বে বিরোধীরা যেমন জেটলির মাধ্যমে বার্তা দিতেন, তেমনই রাজ্যসভায় সংখ্যালঘু বিজেপি বিরোধীদের পাল্টা বার্তা দিতে বেছে নিত সেই জেটলিকেই। বর্তমান সময়ে সরকার যখন বিরোধীদের বিশ্বাস করে কোনও তথ্য ভাগ করে নিতে রাজি নয়, সেখানেও শত্রু শিবিরকে বন্ধু করতে জুড়ি মেলা ভার ছিল জেটলির। তাই সিব্বল, প্রফুল্ল পটেল, চন্দ্রবাবু নায়ডু, দিনেশ ত্রিবেদীরা যেমন আজ তাঁর বাড়িতে পৌঁছেছেন, তেমনি তাঁকে নিয়ে প্রবন্ধ লিখেছেন কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি, শশী তারুর। জেটলির স্ত্রী সঙ্গীতাকে চিঠি লিখে দুঃখপ্রকাশ করেছেন রাহুলও। রাজনৈতিক লড়াই আদালত পর্যন্ত গড়ালেও অন্ত্যেষ্টির সময়ে নিগমবোধে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলেন অরবিন্দ কেজরীবাল।

বরাবরই খেতে ভালবাসতেন জেটলি। খাওয়াতেও। প্রিয় ছিল অমৃতসরের কুলচা আর লস্যি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গডকড়ীর মুখে ভোজনবিলাসী ‘বন্ধু’-র প্রসঙ্গ ফিরে আসছিল বারবার। দু’জনের যে শেষ দেখা হয়েছিল ডিনার টেবিলেই! গত কালই জেটলির দেহ আনা হয় তাঁর কৈলাস কলোনির বাড়িতে। দীর্ঘ দিন লোদী গার্ডেনে সকালে হাঁটতে যেতেন জেটলি। আজ বাড়িতে তাঁকে শেষ দেখা দেখতে এলেন প্রাতর্ভ্রমণের বন্ধুরা। বললেন, ‘‘আমরা যারা সংসদে বা মন্ত্রকে তাঁর কাছে পৌঁছতে পারতাম না, তাঁদের জন্য সকালে হাঁটতে এসে সময় বার করে নিতেন। শুনতেন আমাদের সমস্যা।’’ বিজেপি নেতা রাম মাধব, স্পিকার ওম বিড়লারা বাড়িতে এসেই শ্রদ্ধা জানালেন জেটলিকে। এলেন এনসিপি নেতা শরদ পওয়ার, রাষ্ট্রীয় লোকদলের অজিত সিংহ।

সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরোল শেষ যাত্রা। গন্তব্য বিজেপির সদর দফতর। ‘কৌশলী’ নেতাকে কুর্নিশ জানাতে গিয়ে দলীয় দফতরে তখন কার্যত বিশৃঙ্খল অবস্থা। তার মধ্যেই শ্রদ্ধা জানালেন অমিত শাহ, জে পি নড্ডা, রাজনাথ সিংহ-সহ দলের শীর্ষ নেতারা। সেখান থেকে যমুনা তীরের নিগমবোধ ঘাট। সেখানে তত ক্ষণে পৌঁছে গিয়েছেন উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নায়ডু, অমিত শাহ। মেয়ে প্রতিভাকে নিয়ে পৌঁছন লালকৃষ্ণ আডবাণী। বেলা পৌনে তিনটেয় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষ বিদায় জানানো হল জেটলিকে। পরিবারের বাকিদের উপস্থিতিতে মুখাগ্নি করলেন ছেলে রোহন।

প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট পরে চিতার আগুন যখন নিভু নিভু, আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নেমে এল যমুনা জুড়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Arun Jaitley Rahul Gandhi BJP Congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE