ফাইল চিত্র।
রেলে ভর্তুকি তুলে দেওয়ার ইঙ্গিত। বিরোধীরা যখন ঘুরপথে ভাড়া বাড়ানোর অভিযোগ আনছেন, তখন রেল সফর আরও মহার্ঘ হতে চলেছে। বাজেট পেশের আগে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি আজ এই ইঙ্গিত দিয়েছেন।
সদ্য হাতবদল হয়েছে রেল বাজেটের ব্যাটন। এ বার আর আলাদা ভাবে নয়, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি দেশের সাধারণ বাজেটের সঙ্গে রেল মন্ত্রকের বাজেটও পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী জেটলি। অর্থমন্ত্রী হিসেবে প্রথমবার রেল বাজেট পেশের আগে বণিকসভা সিআইআই-এর সম্মেলনে আজ নিজের দিশা স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন, জনমোহিনী নয়, তার রেল বাজেট হাঁটবে রূঢ় বাস্তবের পথ ধরে। যেখানে খরচ কমিয়ে চেষ্টা হবে রোজগার বাড়ানোর। পরনির্ভরতা ছেড়ে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করবে রেল।
যাত্রী ভাড়া থেকে পণ্য পরিবহণ— সব ক্ষেত্রেই দশকব্যাপী নেতিবাচক বৃদ্ধিতে এখন কার্যত মৃত্যুশয্যায় রেল। যাত্রী কিংবা পণ্য পরিবহণ— আয় কমেছে সব ক্ষেত্রেই। পিপিপি কিংবা বিজ্ঞাপন বাবদও আশানুরূপ টাকা আসেনি। এরই মধ্যে রয়েছে সপ্তম বেতন কমিশনের জন্য ৪৫ হাজার কোটি টাকার বাড়তি ধাক্কা। ফলে রেলের অপারেটিং রেশিও ৯০-র পরিবর্তে বেড়ে চলতি আর্থিক বছরে ৯২ হতে চলেছে বলে জানিয়ে রেখেছেন রেলকর্তারা। যার অর্থ, ১০০ টাকা আয় করতে রেলের খরচ ৯২ টাকা। অর্থাৎ উন্নয়নের জন্য হাতে থাকছে মাত্র ৮ টাকা।
ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় তাই কী পদক্ষেপ করা যায়, বাজেটের আগে তার বিভিন্ন সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রকের একটি সূত্রের মতে, রেলের কোষাগার ঘাটতির অন্যতম কারণ যাত্রী ভাড়ার ভর্তুকি। বর্তমানে যাত্রী ভাড়া খাতে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা ‘ক্রস সাবসিডি’ দিয়ে থাকে রেল। এই ভর্তুকির টাকা আসে মূলত পণ্য পরিবহণ থেকে। কিন্তু পণ্য পরিবহণে ক্রমাগত মাসুল বাড়ানোয় সড়ক পরিবহণের তুলনায় ক্রমশ শুকিয়ে আসছে রেলের আয়। এই ছবিকে বদলাতে চাইছেন জেটলি।
প্রশ্ন হলো, তা হলে কি ভর্তুকি কমিয়ে ভাড়া বাড়তে চলেছে রেলে?
বর্তমানে টিকিটের দাম ১০০ টাকা হলে যাত্রীদের থেকে ৫৭ টাকা নেয় রেল। বাকি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়। এই ৪৩ শতাংশ ভর্তুকি এখন যাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়ার পক্ষপাতী জেটলি। তাঁর যুক্তি, যে কোনও বাণিজ্যিক সংস্থার টিকে থাকার মূল শর্তই হল, গ্রাহককে পরিষেবা ব্যবহারের জন্য দাম দিতে উৎসাহিত করা। তবেই সেই সংস্থা টিকে থাকতে পারে। অতীতে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের এমনই সমস্যার কথা টেনে এনে জেটলি বলেন, ১৯৯০ সাল থেকে ভর্তুকির জেরে একসময়ে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের নাভিশ্বাস উঠেছিল। কিন্তু ২০০৩ সালে সংস্কারের পরে ঘুরে দাঁড়ায় দেশের বিদ্যুৎ ক্ষেত্র। কারণ, পরিষেবার দাম দিতে এগিয়ে আসেন গ্রাহকেরা। একই ভাবে সংস্কারসাধন হয়েছে সড়ক ক্ষেত্রেও। সড়ক পরিবহণে টোল ট্যাক্স কিংবা তেলের উপরে সেস সংগ্রহ হয়েছে। এ বার সেই সমীকরণ রেলেও প্রয়োগ করতে চান অর্থমন্ত্রী। কিন্তু রেল মন্ত্রকের কর্তাদেরই বক্তব্য, যাত্রী ভাড়ায় এই ৪৩ শতাংশ ভর্তুকি এক বারে শেষ করে দেওয়া সম্ভব নয়। কেননা, তাতে প্রবল বিরোধিতার মধ্যে পড়তে হবে সরকারকে। তবে ধাপে ধাপে এই পদক্ষেপ করা যেতে পারে। এই মুহূর্তে যাত্রী ভাড়া ছাড়াও যাত্রীদের খাবারে ভর্তুকি দেওয়া হয়। সে সবও তুলে দেওয়ার ভাবনা রয়েছে।
জেটলিও ইঙ্গিত দিয়েছেন, রেল চালানো ছাড়া বাকি পরিষেবা— যেমন ক্যাটারিং কিংবা সাফাই তুলে দেওয়া হবে বেসরকারি হাতে। তাঁর মন্তব্য, ‘‘জনমুখী পথ নাকি সংস্কারের রাস্তায় উন্নতি— এই দ্বন্দ্বেই এত দিন আটকে ছিল রেল। কিন্তু আগামী দিনে রেলের পরিষেবা নিলে তার জন্য উপযুক্ত মূল্য ধরে দিতে হবে যাত্রীকে।’’ জনমোহিনী বাজেটের দিন যে শেষ, তা স্পষ্ট করে দিয়ে জেটলি বলেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য নতুন ট্রেন ঘোষণার বদলে রেলকে ভবিষ্যৎমুখী ও আর্থিক ভাবে শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে গড়ে তোলা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy