কাশ্মীরের পহেলগামের বৈসরন উপত্যকায় পর্যটকদের উপর জঙ্গিহানার পিছনে রয়েছে লস্কর-ই-তইবার শীর্ষ স্থানীয় নেতা ফারুক আহমেদের প্রচ্ছন্ন মদত, তদন্তে নেমে সম্প্রতি এই দাবিই করল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। তাদের দাবি, ফারুক আপাতত পাক অধিকৃত কাশ্মীরে আত্মগোপন করে রয়েছে। সেখান থেকেই গত দু’বছর ধরে নিজের ‘স্লিপার সেল নেটওয়ার্ক’ কাজে লাগিয়ে এই হামলা-সহ একাধিক নাশকতামূলক কার্যকলাপের চক্রী সে। তবে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল এই পহেলগাম হামলাই।
এনআইএ-র এ-ও দাবি, কাশ্মীরে অনুপ্রবেশের বিষয়টিতেও হাত রয়েছে ফারুকের। কাশ্মীরের কুপওয়ারা জেলায় তার বাড়ি হওয়ায় উপত্যকার সমস্ত পাহাড়ি অলি-গলি-পাকদণ্ডী হাতের তালুর মতো চেনে সে। সেই সমস্ত দুর্গম রাস্তা ধরেই পাকিস্তানের অন্তত তিনটি অংশ থেকে সে জঙ্গিদের অনুপ্রবেশ করতে সহায়তা করে।
পহেলগাম হামলার পরেই ইতিমধ্যেই বান্দিপোরা, পুলওয়ামা ও শোপিয়ান জেলায় জঙ্গিদের বাড়ি গুঁড়িয়ে দিতে শুরু করেছে প্রশাসন। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ফারুকের বাড়িও। তার একাধিক সঙ্গীকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তদন্তকারীরা। সূত্রের খবর, ১৯৯০ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত একাধিক বার পাকিস্তানে গিয়েছে ফারুক।
বৈসরন উপত্যকার হামলার পিছনে তিন জন জঙ্গির হাত ছিল, প্রাথমিক তদন্তে এমনটাই দাবি করা হয়েছে। তবে উপত্যকার চারপাশের ঘন জঙ্গলে চতুর্থ এক জঙ্গির লুকিয়ে থাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা। জোরদার তল্লাশি চলছে উপত্যকা জুড়ে। তিন জঙ্গির হাতে আঁকা ছবি প্রকাশ করেছে পুলিশ, সঙ্গে বলা হয়েছে এদের বিষয়ে তথ্য দিলে মিলবে পুরস্কার। এই তিন জঙ্গির নাম আলি ভাই ওরফে তালহা এবং হাশিম মুসা ওরফে সুলেমান। তৃতীয় জনের নাম আদিল হুসেন ঠোকার। ২০১৮ সালে পাকিস্তান থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয় আদিল। তার ও মুশার সঙ্গে ফারুকের যোগাযোগ থাকতে পারে, ধারণা তদন্তকারীদের।
হামলার তদন্তে ৪৫ জনের একটি বিশেষ দল তৈরি করেছে জাতীয় তদন্ত সংস্থা। সেই দলে রয়েছেন আইজি, ডিআইজি ও এসপি। এই বিশেষ দলের কাজ হল বৈসরনে প্রবেশের রাস্তা থেকে শুরু করে পুরো এলাকাটির একটি ত্রিমাত্রিক মানচিত্র তৈরি করা এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে নথিভুক্ত করা। এর সঙ্গে থাকবে ফরেন্সিক পরীক্ষাও। এগুলির সাহায্যে হামলার পুনর্নির্মাণ করে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে জোরাল অভিযোগ দাঁড় করানোর পরিকল্পনা রয়েছে তদন্তকারীদের। ইতিমধ্যেই পর্যটকের ভিডিয়োয় যে জ়িপলাইন অপারেটরকে ধর্মীয় ধ্বনি দিতে দেখা গিয়েছে, সেই মুজ়ামিল আহমেদ কুমহারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। যদিও তাঁর পরিবারের দাবি, ওটি স্রেফ আতঙ্কের অভিব্যক্তি ছিল। কোনও কোনও সংবাদমাধ্যমের দাবি, মুজ়ামিল যে আতঙ্কগ্রস্ত হয়েই ধর্মীয় ধ্বনি দিয়েছিলেন তা মানছেন তদন্তকারীদের একাংশও।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)