এক দিকে অর্থমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা বলছেন, হিন্দু শরণার্থীদের নাগরিকত্ব না দিলে অচিরেই অসম মুসলিম প্রধান রাজ্যে পরিণত হবে। অন্য দিকে, বিজেপি সাংসদের ঘোষণা, অসমীয়া জাতিকে সংখ্যালঘু হওয়া থেকে বাঁচাতে হিন্দুদেরও বেশি করে সন্তানের জন্ম দেওয়া উচিত।
হিমন্তর মতে, রাজ্যে এখন মোট জনসংখ্যার ৩২ থেকে ৩৪ শতাংশ মুসলিম। শুধুমাত্র অবৈধ অনুপ্রবেশের জন্যই রাজ্যে এ ভাবে মুসলিম জনসংখ্যা বেড়েছে। তিনি মনে করেন, কেন্দ্র নাগরিকত্ব আইনে সংশোধনী আনার পরে হিন্দু শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দিলেই ভারসাম্য রক্ষা সম্ভব হবে।
রাজ্যে আসু, জোট শরিক অগপ-সহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন যখন নাগরিকত্ব আইনে সংশোধনীর বিপক্ষে সরব, তখনই রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের ‘সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড’ হিমন্ত অন্য তাস খেললেন। বাকিরা যখন বলছে, অসম চুক্তি অনুযায়ী ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের পরে আসা কোনও শরণার্থীর ভার অসম নেবে না, তখন হিমন্তের যুক্তি হিন্দুরা সংখ্যায় না বাড়লে জনসংখ্যায় মুসলিমদের টক্কর দেওয়া যাবে না। তাঁর মতে, অসম চুক্তিতে কোথাও অমানবিক হওয়ার কথা লেখা নেই। বাংলাদেশ বা পাকিস্তান থেকে হিন্দুরা প্রাণভয়ে পালালে ভারতেই আসবে। সীমান্ত লাগোয়া রাজ্যই তাদের স্বাভাবিক আশ্রয়স্থল। তাই মানবিকতার খাতিরে হিন্দু শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। তাঁর আশা, অসমীয়া হিন্দু, বাঙালি হিন্দু ও ভূমিপুত্র মুসলিমরাই অসমকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীমুক্ত রাজ্য হিসেবে রক্ষা করবেন। অন্য দিকে, এ দিন নলবাড়ির এক সভায় তেজপুরের সাংসদ রামপ্রসাদ শর্মা অন্য পথ বাতলালেন। বললেন ‘‘হিন্দুরাও অধিক সন্তানের জন্ম দিন। না হলে অসমে অসমীয়ারাই সংখ্যালঘু হয়ে যাবে।’’
বিজেপি নেতাদের এমন মন্তব্য ও মনোভাবের সমালোচনায় মুখর হয়েছে কংগ্রেস। তাদের বক্তব্য, সর্বধর্ম সমন্বয়ের কথা বলা সর্বানন্দ সরকারের দলের নেতা-মন্ত্রী-সাংসদদের এমন মন্তব্যই বুঝিয়ে দিচ্ছে, বিজেপি আদতে হিন্দু মৌলবাদের বিষই ছড়াতে চাইছে। এমন মন্তব্যে সাম্প্রদায়িক দ্বেষ বৃদ্ধি পাবে। অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়ে একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে আক্রমণের নিশানা করেছে বিজেপি জোট সরকার।
বিজেপির জোট শরিক তথা অসম চুক্তির স্বাক্ষরকারী দল অসম গণ পরিষদ অবশ্য নাগরিকত্ব আইন সংশোধনীর বিপক্ষে। কিন্তু দলের তরফে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল মহন্তই একমাত্র বিজেপি সরকারের নীতির বিরুদ্ধে সরব। অন্য বিধায়ক ও মন্ত্রীরা জোটের স্বার্থে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করছেন না।