E-Paper

জ়ুবিন-তদন্ত: কমিশন হিমন্তের

জ়ুবিন গর্গের মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত, ব্যবসায়ী ও নর্থ ইস্ট ফেস্টিভালের উদ্যোক্তা শ্যামকানু মহন্তের হয়ে রাজ্যের কোনও আইনজীবী মামলা লড়তে রাজি হননি। কিন্তু ধরা পড়ার আগেই, সিঙ্গাপুর থেকে অনলাইনে তিনি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন পাঠিয়ে রেখেছিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:২৯
জ়ুবিন গার্গ।

জ়ুবিন গার্গ। —ফাইল চিত্র।

সিঙ্গাপুরে জ়ুবিন গর্গের মৃত্যুর ঘটনায় অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা জানালেন, জ়ুবিন গর্গের মৃত্যুর তদন্ত করবে বিচারবিভাগীয় কমিশন। কমিশনের নেতৃত্বে থাকবেন গৌহাটি হাই কোর্টের বর্তমান বিচারপতি সৌমিত্র শইকিয়া। জ়ুবিনের ময়না তদন্তের রিপোর্ট আগামিকাল পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। শিল্পীর পরিবার সিদ্ধান্ত নেবে যে রিপোর্টটি প্রকাশ করা হবে কিনা। রিপোর্ট আদালতেও জমা দেওয়া হবে।

হিমন্ত আরও বলেন, যাঁরা সামাজিক মাধ্যমে জ়ুবিনের মৃত্যু নিয়ে বিভিন্ন তত্ত্ব প্রকাশ করছেন, তাঁদের এখন দায়িত্ব হবে বিচারবিভাগীয় কমিশনে গিয়ে হলফনামা দাখিল করে নিজের বক্তব্য জমা দেওয়া। হিমন্ত এই প্রসঙ্গে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি, বাংলাদেশি প্রসঙ্গ ও উচ্ছেদ অভিযান সংক্রান্ত রাজনীতিকেও মিলিয়ে দেন। তিনি বলেন, ‘‘অনেকেই তদন্ত বিপথে পরিচালিত করতে চেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা বিষয়টিতে নজর রাখছি। যারা এই কাণ্ড ঘটাচ্ছে, অশান্তি বাধাতে চাইছে, তারা সরকারের বিরোধী হতে পারে। হতে পারে, সরকার তাঁদের উচ্ছেদ করেছে, ঘর ভেঙেছে। কিন্তু তার প্রতিশোধ নিতে জ়ুবিনের মৃত্যুর ঘটনাকে হাতিয়ার করা অন্যায়।’’

হিমন্তের কথায়, ‘‘তাঁরা বাংলাদেশ থেকে শিল্পী আনতেন কিন্তু জ়ুবিনকে ডাকতেন না। মারা যাওয়ার পরে তাঁরা হঠাৎ আমার উপরে, বিজেপির উপরে প্রতিশোধ নিয়ে জ়ুবিন অনুরাগী হয়ে উঠেছেন। তা মেনে নেওয়া হবে না। এ ভাবে উচ্ছেদ থামানো যাবে না।’’

জ়ুবিন গর্গের মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত, ব্যবসায়ী ও নর্থ ইস্ট ফেস্টিভালের উদ্যোক্তা শ্যামকানু মহন্তের হয়ে রাজ্যের কোনও আইনজীবী মামলা লড়তে রাজি হননি। কিন্তু ধরা পড়ার আগেই, সিঙ্গাপুর থেকে অনলাইনে তিনি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন পাঠিয়ে রেখেছিলেন। সংবিধানের ৩২ নম্বর অনুচ্ছেদের অধীনে তিনি তাঁর মৌলিক অধিকারের সুরক্ষা চেয়েছেন। দাবি করেছেন, অসমে তিনি সুরক্ষিত নন।

রিট আবেদনে মহন্ত নিজেকে একটি “সুনিপুণ ভাবে পরিকল্পিত চক্রান্তের শিকার” বলে বর্ণনা করেছেন। দাবি করেছেন তাঁকে বলির পাঁঠা করার চেষ্টা হচ্ছে। সংবাদমাধ্যমের একাংশ ভ্রান্ত ও দায়িত্বজ্ঞানহীন বর্ণনা প্রচার করে তাঁকে জ়ুবিনের মৃত্যুর জন্য দায়ী করছে। শ্যামকানু অভিযোগ করেন, তিনি মিডিয়া ট্রায়াল’-এর এবং ‘বৃহৎ পরিসরে জনরোষের’ শিকার হয়েছেন। তাই জীবন এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতা সুরক্ষিত রাখার জন্য তিনি আদালতের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, ঘটনার দিন বা তার আগের দিন তিনি জ়ুবিনের সঙ্গে দেখা পর্যন্ত করতে পারেননি। তাঁদের শেষ সাক্ষাৎ হয়েছিল ১৭ সেপ্টেম্বর। জ়ুবিন নর্থ-ইস্ট ফেস্টিভালের জন্য নয়, নিজের ইচ্ছেয় ছুটি কাটাতে সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলেন। সফরসূচিও নিজেরাই ঠিক করেন। প্রমোদতরীতে ভ্রমণের বিষয়েও শ্যামকানুকে কিছুই জানানো হয়নি। ঘটনার পরে বেলা তিনটে নাগাদ বাণিজ্য বৈঠক চলাকালীন সিদ্ধার্থ তাঁকে ফোন করে খবর দেন। তিনি তৎক্ষণাৎ করণীয় সব কাজ করেন। শ্যামকানু ১৭২ পাতার আবেদনে আরও জানান, জ়ুবিনের মৃগী ছিল। অতীতে তাঁকে ডিব্রুগড় থেকে বিমানে নিয়ে আসতেও হয়েছিল। মহন্ত অভিযোগ করেছেন, অসম সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা তদন্ত চলাকালীন পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করেছেন। রাজ্যের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা তাঁদের সরকারি সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডলে শ্যামকানুর বিরুদ্ধে অপমানজনক ও ক্ষতিকর মন্তব্য করেছেন। তদন্ত চলাকালীন এই ধরনের মন্তব্য তদন্ত প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে বাধ্য।

সুপ্রিম কোর্ট খোলার পরে আগামী সপ্তাহে ওই আবেদনের শুনানির সম্ভাবনা আছে। সেখানে শ্যামকানুর তরফে নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে অসম থেকে মৃত্যুর তদন্ত স্থানান্তরিত করার আবেদন জানানো হতে পারে। অবশ্য সমাজকর্মী তথা অসম তৃণমূলের বরিষ্ঠ সহ-সভাপতি দুলু আহমেদ জানান, তিনি এর শেষ দেখে ছাড়বেন। শ্যামকানুর আবেদনের বিরুদ্ধে তাঁর আইনজীবীও লড়বেন। তিনি শ্যামকানু ও জ়ুবিনের ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা ৬৪ জনকে আহ্বান জানান, সকলে যেন সুপ্রিম কোর্টে শ্যামকানুর আবেদনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেন। হিমন্ত বলেন, “শ্যামকানু সুপ্রিম কোর্টকে বলেছেন, তাঁর অসম পুলিশের উপরে বিশ্বাস নেই। তদন্ত যেন সিবিআইকে দেওয়া হয়। তাই আমরা এখন বিচারবিভাগীয় কমিশনও গড়ে দিলাম।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Zubeen Garg Himanta Biswa Sarma Assam

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy