E-Paper

সোনার বাংলা: রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা-নির্দেশ হিমন্তের

বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত থাকা বাঙালিপ্রধান শ্রীভূমি জেলার বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা বিধুভূষণ দাস গত সোমবার দলীয় সভায় ‘আমার সোনার বাংলা’ গেয়েছিলেন।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:৫২
অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা।

অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। ফাইল চিত্র।

দেশাত্মবোধক গান গেয়েই ‘দেশদ্রোহী’! সরকারের রোষানলে পড়লেন ৮৫ বছরের বৃদ্ধ কংগ্রেস নেতা। তাঁর নামে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়ের করতে নির্দেশ দেওয়া হল পুলিশকে! ইংরেজ আমল নয়, এই ঘটনা একুশ শতকের, বিজেপি-শাসিত অসমের!

বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত থাকা বাঙালিপ্রধান শ্রীভূমি জেলার বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা বিধুভূষণ দাস গত সোমবার দলীয় সভায় ‘আমার সোনার বাংলা’ গেয়েছিলেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের সময়ে রচিত এই রবীন্দ্রসঙ্গীতটির প্রথম দশটি চরণ ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গৃহীত হয়। বিজেপির প্রশ্ন, কংগ্রেসের সভায় বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয়েছে কেন? অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা বলেছেন, “পুলিশকে ওই গান গাওয়া নেতা ও সভায় হাজির সকলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়ের করতে বলেছি, কারণ এমন কাজ দেশ ও জাতীয় সঙ্গীতের অপমান।” ইতিহাস যদিও বলবে, ‘আমার সোনার বাংলা’র স্রষ্টাই ভারতের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা। গীতবিতান খুললে স্বদেশ পর্যায়ের অংশে দু’টি গানকেই পাওয়া যায়।

ফলে কিসের রাষ্ট্রদ্রোহ? হিমন্তদের যুক্তি, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি পাকিস্তানের এক সেনাকর্তার হাতে একটি বই তুলে দেন, যার প্রচ্ছদে আঁকা মানচিত্রে ভারতের উত্তর-পূর্বকে বাংলাদেশের অংশ দেখানো হয়েছে। হিমন্তের কথায়, ‘‘বাংলাদেশ অসম ও উত্তর-পূর্বকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করছে, আর কংগ্রেস অসমে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে তাদের দাবিকেই আগ বাড়িয়ে সমর্থন করছে। যারা এর জন্য দায়ী, তাদের শীঘ্রই গ্রেফতার করা হবে।” শ্রীভূমির এসপি লীনা দোলে যদিও আজ রাতে বলেছেন, ‘‘বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। এখনও মামলা দায়ের করা হয়নি।’’

এআইসিসি নেতা পবন খেরা এক্স হ্যান্ডলে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘বিজেপির কেন্দ্রীয় এবং পশ্চিমবঙ্গের নেতৃত্ব কি প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা’-কে ভারতবিরোধী বলে ঘোষণা করবে?’ কংগ্রেস গোড়া থেকেই বলে আসছে, রবীন্দ্রনাথ ওই গান তৈরি করেছিলেন অবিভক্ত বাংলার মানুষের জন্য। সেটি আগে রবীন্দ্রসঙ্গীত, পরে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত। কিন্তু আসন্ন বিধানসভা ভোটে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখা বিজেপির অসমের নেতারা এই যুক্তি মানতে নারাজ। পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং সীমান্ত সমস্যা অত্যন্ত স্পর্শকাতর জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। রবীন্দ্রনাথের গান বাংলাদেশ কিংবা মালদহে নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি পড়তে পারে। কিন্তু ভারতের অন্য কোথাও পড়া উচিত নয়। যদি এ রকম কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়ে থাকে, তা হলে সংশোধন করেনেওয়া উচিত।’’

কেন্দ্রীয় উত্তর-পূর্ব উন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, ‘‘অন্য রাজ্যের বিষয়ে মন্তব্য করব না।’’ অসম প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি গৌরব গগৈয়ের কথায়, “বাঙালির ভাষা, সংস্কৃতি, রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য— কোনও কিছু নিয়েই বিজেপির সম্যক জ্ঞান নেই।’’ এ দিকে হিমন্ত বলেছেন, “গৌরব গগৈয়ের উচিত ছিল, অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দল থেকে বরখাস্ত করা।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Assam Himanta Biswa Sarma

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy