২০১১ সালের ১০ নভেম্বর। ভূপেন হাজরিকা প্রয়াত হওয়ার ৫ দিন পরের ঘটনা। কংগ্রেসের তদনীন্তন দোর্দণ্ডপ্রতাপ মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা নিজের সামাজিক মাধ্যমে লিখেছিলেন ভূপেন হাজরিকার শ্রাদ্ধের বিষয়ে পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করতে এসেছেন এবং সঙ্গে ছবি পোস্ট করেছিলেন। যেখানে দেখা যাচ্ছে রাহুল গান্ধী শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন ভূপেন হাজরিকার ছবির সামনে। ক্যাপশনে হিমন্ত লিখেছিলেন, নিজরাপারে ভূপেন হাজরিকার বাড়িতে ৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন রাহুল গান্ধী।
১৪ বছর পরে, সেই দিনের কথা বেমালুম ভুলে, বর্তমানে বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা দাবি করলেন, ভূপেন হাজরিকার মৃত্যুর পরে দিল্লি থেকে কংগ্রেসের কোনও বড় নেতা না আসায় জনতা প্রশ্ন তুলেছিল, লজ্জায় তাঁদের মাথা কাটা গিয়েছিল!
প্রসঙ্গ জ়ুবিন গর্গের প্রয়াণ-পরবর্তী রাজনীতি। শুক্রবার জ়ুবিনের শেষকৃত্যস্থলে শ্রদ্ধা জানিয়ে বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন রাহুল গান্ধী। তাঁকে স্বাগত জানালেও প্রতি পদে রাহুলের সফর নিয়ে বক্রোক্তি করতে ছাড়েননি হিমন্ত। অতীতে তিনি বহুবার বলেছেন, রাহুলের অপমানেই কংগ্রেস ছেড়েছেন। ‘রাহুল জ়ুবিনের মৃত্যুর ২৮ দিন পরে এসেছেন’, এ কথা বারবার মনে করিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি একধাপ এগিয়ে হিমন্ত একাধিক বার তুলনা টেনে দাবি করেন, এখন কংগ্রেস জ়ুবিনের মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করলেও ভূপেন হাজরিকার মৃত্যুর পরে কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আসেননি।
অবশ্য হিমন্তর সেই দাবি বুমেরাং হয়েছে। বিরোধীরা ও নেটিজ়েনরা তাঁর প্রোফাইলেই থাকা পুরনো ছবি তুলে ধরে জানতে চাইছে, হিমন্ত এখন মিথ্যে বলছেন না তখন ভুয়ো ছবি পোস্ট করেছিলেন? কংগ্রেস এই মিথ্যাভাষণ নিয়ে হিমন্তর তীব্র সমালোচনা করে। বিরোধীরা বলেন, ভোট রাজনীতির স্বার্থে এ ভাবে ভূপেন হাজারিকা এবং জ়ুবিন গর্গের মতো সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের নিয়ে রাজনীতি করা কুরুচিকর।
জ়ুবিনকে ন্যায় দেওয়ার দাবি করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “যে চার্জশিট দাখিল হতে চলেছে, তা দেখে সবাই বিস্মিত হবে। হজম করতে জাতির সময় লাগবে। অনেক নতুন নতুন তথ্য পাওয়া যাবে সেখানে।” তদন্তের আগেই চার্জশিটের বিষয়ে এমন ভবিষ্যদ্বাণী করায় সমালোচনায় মুখর বিরোধীরা ও আইনজীবী মহল।
বিরোধীরা বলে, বোঝা যাচ্ছে বিশেষ তদন্ত দল প্রতিপদে মুখ্যমন্ত্রীর হুকুম তামিল করে, সব গোপন তথ্য তাঁকে জানিয়েই তদন্ত চালাচ্ছে। যেখানে অভিযুক্ত শ্যামকানু মহন্তর পরিবারের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠতা রয়েছে সেখানে এ ভাবে তদন্তের সব তথ্য আগাম মুখ্যমন্ত্রীকে জানালে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত সম্ভব নয়। আইনজীবী শান্তনু বরঠাকুর বলেন, “তদন্ত চলাকালীন অভিযোগনামায় কী থাকবে- তা আদালতও আগে জানাতে পারে না। সে ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী নিজে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকলেও আগ বাড়িয়ে অভিযোগনামা নিয়ে এমন মন্তব্য করতে পারেন না। এতে তদন্তের গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হয়েছে।”
আইনজীবী অংশুমান বরা প্রশ্ন তোলেন, “তদন্ত চলাকালীন আদালত ও তদন্তকারী কর্মকর্তার বাইরে কেউ অভিযোগনামা নিয়ে মন্তব্য করতে পারে না। মুখ্যমন্ত্রী আগে থেকে কী ভাবে জানলেন চার্জশিটে কী তথ্য থাকবে?” অসম জাতীয় পরিষদের সভাপতি লুরিণজ্যোতি গগৈ প্রশ্ন তোলেন, “তদন্ত প্রক্রিয়ার বহু দিক এখনও বাকি। কিন্তু হিমন্ত আগাম জেনে গিয়েছেন চার্জশিটে কী থাকবে! আগাম চিত্রনাট্য মেনেই কী চার্জশিট তৈরি করা হচ্ছে?”
এ দিকে,পুলিশ জানায় ভুয়ো ‘জুবিন অনুরাগী’র দল বাক্সায় পরিকল্পনা করেই হিংসাত্মক ঘটনা ঘটিয়েছিল। তিন ঘণ্টার মধ্যে ওই সংঘর্ষের নীল নকশা তৈরি হয়। সামাজিক মাধ্যমে গ্রুপ তৈরি করে চলে পরিকল্পনা। সেখানে, বেঙ্গালুরু থেকে পুলিশ, বাস, প্রিজ়ন ভ্যান লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ার প্ররোচনা দেওয়া হয়। আসুর মুখ্য উপদেষ্টা সমুজ্জল কুমার ভট্টাচার্য আহ্বান জানিয়েছেন, "জ়ুবিন গর্গের ন্যায়বিচারের লড়াই সম্পূর্ণ অহিংসভাবে পরিচালিত হতে হবে। হিংসা জুবিন গার্গের ন্যায়বিচারের পথে বাধা সৃষ্টি করবে।"
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)