Advertisement
E-Paper

বঙ্গভূমে প্রচারের চেনা ছবি তেলঙ্গানাভূমে অচেনা

তেলঙ্গানা বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতিপর্ব দেখতে এসে প্রায় গোটাটা চষে ফেলার পর বলতেই হচ্ছে, এ কোন আজব রাজ্য!

উজ্জ্বল চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ২১:৫০
হায়দরাবাদ শহরে কংগ্রেসের প্রচার।—নিজস্ব চিত্র।

হায়দরাবাদ শহরে কংগ্রেসের প্রচার।—নিজস্ব চিত্র।

তারস্বরে মাইক বাজছে। একই জায়গায় একাধিক দলের প্রচারসভা। চোঙ আর বক্সের অত্যাচারে গোটা এলাকার কান রীতিমতো ঝালাপালা! তার মধ্যেই পথসভা, বাইক মিছিলের মতো ঘনঘটা তো রয়েইছে। বড় রাস্তা থেকে গলিঘুঁজি— ঝুলছে সব দলের পোস্টার, ব্যানার। দেওয়াল লিখনের সঙ্গেই সাঁটানো লিফলেট।

চেনা চেনা লাগছে ছবিটা? ঠিকই চিনেছেন। পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত থেকে লোকসভা— যে কোনও ভোটে এমন দৃশ্য আমাদের চোখ সওয়া। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া থেকে ভোটের ফল বেরনো পর্যন্ত উত্তেজনাটাও বড্ড চেনা। প্রচারপর্বে তো মারামারি, গোলাগুলি, বোমাবাজি লেগেই থাকে!

কিন্তু তেলঙ্গানা বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতিপর্ব দেখতে এসে প্রায় গোটাটা চষে ফেলার পর বলতেই হচ্ছে, এ কোন আজব রাজ্য! যেখানে ভোটের উত্তেজনা কোনও ভাবেই পথে নেমে আসেনি!

ভোটের সময় পশ্চিমবঙ্গে এমন ছবি খুবই পরিচিত।—ফাইল চিত্র।

আরও পড়ুন: গাড়ির ইঞ্জিন আমিই হব, হাঁটতে হাঁটতেই জবাব দিলেন হায়দরাবাদের ‘হিরো’

হায়দরাবাদ, সেকন্দরাবাদের মতো শহরের বেশ কিছু জায়গায় রয়েছে বড় বড় হোর্ডিং। ছোট ছোট হোর্ডিং রয়েছে মেট্রো রেলের স্তম্ভগুলিতে। এত দিন সে সবই শাসক দল তেলঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি (টিআরএস)-র ছিল। কিন্তু, নির্বাচনের দু’দিন আগে প্রচারের শেষ লগ্নে শহরের হাতে গোনা কয়েকটি জায়গায় পড়ল ‘প্রজা কুটামি’র হোর্ডিং। জেলা সদর বা গ্রামাঞ্চলের কোথাও শাসক দল ছাড়া কোনও বড় হোর্ডিং বা পোস্টার ছিল না। নতুন করে লাগানোও হয়নি। উল্টে প্রায় সর্বত্রই দেখা গেল নির্বাচন কমিশনের ব্যানার। যেখানে লেখা, ‘নো ফ্রি গিফ্ট, নো লিকার, নো মানি’। একই সঙ্গে, আগামী ৭ ডিসেম্বর নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার জন্য কমিশনের অনুরোধ সম্বলিত ব্যানার টাঙানো হয়েছে।

পথসভা, শোভাযাত্রা বা জনসভার আগে সমস্ত এলাকাতেই পতাকা, ব্যানার, পোস্টার টাঙিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলি। কিন্তু, সভা শেষে সবই খুলে নেওয়া হয়েছে। কোনও জায়গাতেই চোঙ লাগানো হয়নি। তা সে যত বড় তারকা প্রার্থী বা বক্তাই হোন না কেন! সভাস্থলকে কেন্দ্র করে শুধুই বক্স ব্যবহার করা হয়েছে। সারা দিন ধরে বিভিন্ন কেন্দ্রে ঘোরানো হয়েছে দলীয় ব্যানার লাগানো ছোট ছোট গাড়ি বা অটো। তাতেই লাগানো থাকত মাইক। সেখান থেকেই মহল্লা এবং গ্রামে ঘুরে ঘুরে প্রচার করা হত দলীয় বার্তা এবং ইস্তাহার। আর বাড়ি বাড়ি প্রার্থীরা যখন যান, তখনই ভোটারের হাতে ধরিয়ে দিতেন ছোট ছোট লিফলেট। যেখানে প্রার্থীর পরিচয়ের পাশাপাশি থাকত ভোটারের উদ্দেশে ভোট দেওয়ার আবেদন। এ ছাড়া স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলিতে কয়েক সেকেন্ডের বিজ্ঞাপন। ব্যস, এটুকুই।

চার দিকে শুধুই শাসকদলের হোর্ডিং।—নিজস্ব চিত্র।

এমন শান্তশিষ্ট ভাবেই কি নির্বাচনের প্রচারপর্ব সারা হয় এখানে? রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক রজত কুমার বললেন, ‘‘অন্য কোন রাজ্যে কেমন করে প্রচার হয় তা জানা নেই। কিন্তু এখানে নির্বাচন কমিশনের নিয়মের বাইরে কোনও রাজনৈতিক দলই কিছু করে না। প্রচারের বিষয়টিও তারা নিয়ম মেনেই করে, যাতে নির্বাচনী বিধিভঙ্গ না হয়।’’ কিন্তু, শুধু শাসক দলের বিজ্ঞাপন কেন শহর জুড়ে? রজত কুমারের কথায়, ‘‘শহরে যে হোর্ডিং দেখছেন, সবই বিজ্ঞাপনী এজেন্সির জায়গা ভাড়া করে লাগানো হয়েছে। কোন দল কী ভাবে সেই জায়গা ভাড়া নেবে, কতগুলো হোর্ডিং লাগাবে, তা কমিশনের এক্তিয়ারের বিষয় নয়। তবে, খরচের হিসেবটা শেষমেশ আমরাই দেখব।’’ এমনকি, বিভিন্ন দলের পোস্টার-ব্যানার-লিফলেটে কী লেখা থাকবে, সেটাও নির্বাচন কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে প্রকাশ করতে হয় বলেই জানালেন তিনি।

আরও পড়ুন: রাজনীতি আসলে হাজার সম্ভাবনার মিশেল, বোঝাচ্ছে তেলঙ্গানা​

তেলুগু দেশম পার্টি-র কর্মী প্রসাদ রেড্ডি কুকাটপল্লির দলীয় অফিসে বসে জানালেন, শাসক দলের প্রচুর পয়সা। তাই ওরা এজেন্সিগুলির কাছ থেকে প্রচুর টাকার বিনিময়ে জায়গা ভাড়া নিয়ে হোর্ডিং-ব্যানার লাগাতে পারে। তাদের মতো বিরোধী দলের সেই টাকা নেই বলেই দাবি করেন প্রসাদ। একই কথা শোনালেন তেলঙ্গানা জন সমিতির সুপ্রিমো এম কোডানডারাম। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা মানুষের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছি। অত টাকা দিয়ে হোর্ডিং-ব্যানার বানানো এবং লাগানোর মতো ক্ষমতা আমাদের মতো দলের নেই। জোটের তরফে যা লাগানো হচ্ছে, তাতেই হয়ে যাবে।’’

ভোটের আগে এ ভাবেই ‘নো ফ্রি গিফ্ট, নো লিকার, নো মানি’র প্রচার চালাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। —নিজস্ব চিত্র।

কিন্তু, নির্বাচন কমিশন কেন হঠাৎ ‘নো ফ্রি গিফ্ট, নো লিকার, নো মানি’ বিজ্ঞাপন দিয়ে ভোটারদের কাছে আবেদন জানাল? রজত কুমারের দাবি, তাঁদের কাছে এ সংক্রান্ত অনেক অভিযোগ জমা পড়েছে। ভোটারদের টাকা, উপহার সামগ্রী এবং মদ দিয়ে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে কোনও কোনও রাজনৈতিক দল। সে কারণেই ভোটারদের সচেতন করতে এমন ব্যানার-হোর্ডিং লাগানো হয়েছে বলেই দাবি রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের।

প্রচারের এমন ধরন দেখে রীতিমতো অবাক পশ্চিমবঙ্গ থেকে স্বামীর কর্মসূত্রে হায়দরাবাদে যাওয়া তরুণী অনয়া দত্তমিত্র। বর্তমানে শহরের নামপল্লির ওই বাসিন্দা বললেন, ‘‘প্রথম বার হায়দরাবাদের ভোট দেখছি। এখানকার ভোটারও নই। তবে সব মিলিয়ে কিন্তু ছবিটা আমাদের ওখানকার থেকে একেবারেই আলাদা। সেই থমথমে ব্যাপারটা নেই। জনজীবন এক্কেবারে স্বাভাবিক। আর চিৎকার চেঁচামেচি বা রাজনৈতিক সংঘর্ষ যদি বলেন, সে দিক থেকে তেলঙ্গানাকে কিন্তু স্বর্গরাজ্য বলেই মনে হচ্ছে।’’

দাক্ষিণাত্যের এই রাজ্য দেখিয়ে দিচ্ছে, কী ভাবে নীরব-প্রচারে পৌঁছে যাওয়া যায় ভোটারের হেঁশেল ঘরে!

Assembly Elections 2018 Telangana Assembly Election 2018
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy