গত কয়েক মাস ধরে একের পর এক দলিত-নিগ্রহের ঘটনার ক্ষত মেরামতে উত্তরপ্রদেশের বুথে বুথে ‘দলিত-ব্রিগেড’ তৈরির নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
বিজেপি সূত্রের খবর, উত্তরপ্রদেশে ভোটের আগে দলিত নিগ্রহের ঘটনায় বিজেপির ভাবমূর্তি বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে। আগরায় মায়াবতী কয়েক লক্ষ দলিতকে জড়ো করে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন। বিজেপি সেখানে যথেষ্ট সংখ্যক দলিতকে জড়ো করতে না-পেরে দলের সভাপতি অমিত শাহের সভা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে। এই ধাক্কা সামলাতে এ বারে ফি বুথে একটি করে ‘দলিত ব্রিগেড’ তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। গ্রামে-গঞ্জে ঘুরে এই কর্মীরাই প্রচার করবেন, বিজেপি দলিত-বিরোধী নয়। আজ লখনউয়ে গিয়ে মোদীর রোডম্যাপ দলের নেতাদের জানিয়েছেন অমিত শাহ।
বিজেপি নেতারা মনে করছেন, বিরোধীরা যে ভাবে এককাট্টা হয়ে বিজেপির গায়ে ‘দলিত-বিরোধী’ তকমা সেঁটে দিয়েছে, তাতে যথেষ্ট খেসারত দিতে হচ্ছে তাঁদের। গো-রক্ষকদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর প্রকাশ্য হুঁশিয়ারিও কাজে আসছে না। কালও একটি টেলিভিশন চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিয়ে নিজেকে ‘দলিত-দরদী’ হিসেবে তুলে ধরতে হয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে। বিরোধীদের বিঁধে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘যাঁরা চাননি আমাদের সরকার ক্ষমতায় আসুক, তাঁদের সমস্যা হচ্ছে। এই স্বঘোষিত ঠিকাদাররা দেখছেন, মোদী দলিত-আদিবাসী-পিছিয়ে পড়া মানুষদের সঙ্গে আছে। জাতপাতের বিষ ছড়িয়ে তাঁরাই দেশকে নষ্ট করছেন।’’
সম্প্রতি বিজেপির সমস্যা আরও বাড়িয়ে তুলেছেন রাহুল গাঁধী। যে ভাবে তিনি সুপ্রিম কোর্টে আরএসএসের সঙ্গে প্রকাশ্য সংঘাতে গিয়ে মামলার শুনানিতে রাজি হয়েছেন। গাঁধী-হত্যা নিয়ে আরএসএসের বিরুদ্ধে মামলা হলেও রাহুল লড়াইটি নিয়ে যেতে চাইছেন ‘আসল হিন্দু’ বনাম ‘নকল হিন্দু’তে। যে ভাবে উত্তরপ্রদেশে আরএসএস-বিজেপি সব হিন্দুদের এক ছাতার তলায় এনে দলিত-উচ্চবর্ণকে একজোট করতে চাইছে, রাহুল সুকৌশলে সেখানেই আঘাত হানতে চাইছেন। তাঁর বক্তব্য, নাথুরাম গডসে প্রকৃত হিন্দু হলে কোনও দিন গাঁধীকে হত্যা করতেন না। রাহুলের আইনজীবী কপিল সিব্বল তাই বলছেন, ‘‘আমিও হিন্দু। কিন্তু অবশ্যই আরএসএসের বিচারধারার সঙ্গে সহমত নই।’’
কংগ্রেসের এক নেতা জানান, সামনের মঙ্গলবার থেকেই উত্তরপ্রদেশে প্রায় এক মাসের ‘মহাযাত্রা’ শুরু করছেন রাহুল গাঁধী। সেখানে এই বার্তাই তিনি রাজ্যের অলিতে-গলিতে তুলে ধরবেন। বিজেপির আশঙ্কা, গোটা রাজ্য ঘুরে রাহুল গাঁধী যদি বিজেপির বিরুদ্ধে ‘দলিত-বিরোধী’ প্রচারকে আরও তুঙ্গে নিয়ে যান, তা হলে বাকি বিরোধী দলগুলি এটিকে আরও উচ্চগ্রামে নিয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে বিজেপিকেও সাফাই দিযে যেতে হবে নিরন্তর। ভোটব্যাঙ্কেও তার আঁচ পড়বে। ভোট যত এগিয়ে আসবে, ততই এই প্রচার আরও তীব্র হবে। সে কারণে এখন থেকেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে দলের দলিত কর্মীদের দিয়েই পাল্টা ব্রিগেড তৈরি করার কৌশল নিতে হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy