গায়ক জ়ুবিন গর্গের মৃত্যুর তদন্তে ধৃত প্রধান অভিযুক্তদের গুয়াহাটি থেকে সুদূর বাক্সায় তৈরি নতুন সংশোধনাগারে নিয়ে যাওয়া হল আজ। রাস্তায় হামলা হল সেই কনভয়ে, ছোড়া হল পাথর, জুতো। সংশোধনাগারের বাইরে আছড়ে পড়ল জনতার ক্ষোভ। পুলিশ ও জনতার খণ্ডযুদ্ধে জখম হলেন দুই তরফের অনেকে। গুলিতে জখম এক যুবকের অস্ত্রোপচার হয়েছে গুয়াহাটি এমসে। পুলিশের গুলিতেই তিনি জখম হয়েছেন বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে, মৃত্যু নিয়ে ফুটতে থাকা অসমের জনরোষ সম্পর্কে তো অবহিত ছিল সরকার। তার পরেও কেন পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করে, পাঁচ জনের বেশি জমায়েত নিষিদ্ধ না করে অভিযুক্তদের বাক্সায় নিয়ে যাওয়া হল?
এ দিনের অশান্তিতে পুড়েছে পুলিশের তিনটি ও সংবাদমাধ্যমের একটি গাড়ি। জখম হন বেশ কয়েক জন সাংবাদিকও। ঘটনার পরে বাক্সায় নামানো হয়েছে র্যাফ, কমান্ডো বাহিনী। অশান্তি রুখতে শেষ পর্যন্ত জমায়েত নিষিদ্ধ করে ১৬৩ ধারা বলবৎ করা হয়েছে। বন্ধ করা হয়েছে ইন্টারনেট। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার দাবি, এ সবই বিরোধীদের উস্কানির ফল। এর মধ্যেই লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী আগামী ১৭ অক্টোবর গুয়াহাটি আসছেন জ়ুবিনের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে।
জ়ুবিনের ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মা, সিঙ্গাপুরে উত্তর-পূর্ব উৎসবের মূল আয়োজক শ্যামকানু মহন্ত, দুই সরকারি দেহরক্ষী নন্দেশ্বর বরা ও প্রবীণ বৈশ্য এবং জ়ুবিনের তুতো ভাই তথা সাসপেন্ড হওয়া ডিএসপি সন্দীপন গর্গের সিআইডি হেফাজত শেষ হওয়ার পরে আজ তাঁদের আদালতে তোলা হয়। তাঁদের তরফে জামিনের আবেদন করা হয়নি। ইডি-ও শ্যামকানুকে নিজেদের হেফাজতে চায়নি এখনও। ফলে আদালত সকলকে ১৪ দিনের বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠায়। নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, ধৃতদের বড়োভূমির বাক্সায় তৈরি নতুন সংশোধনাগারে রাখা হবে। আদালত জেল কর্তৃপক্ষকে অভিযুক্তদের পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেয়।
কিন্তু সিদ্ধার্থ, শ্যামকানুদের বাক্সা আসার খবর ছড়িয়ে পড়তেই বাক্সাগামী রাস্তার বিভিন্ন স্থানে জমায়েত শুরু হয়। পুলিশ ব্যারিকেড করে, লাঠি চালিয়ে জনতাকে আটকনোর চেষ্টা করে। বাক্সায় কোনও মতে বন্দিদের সংশোধনাগারে ঢোকানোর পরেই রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় বাইরের রাস্তা। পুলিশের অনেকে জখম হন। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে, শূন্যে গুলি চালায়। এমনকি বিক্ষোভকারীদের হটাতে ব্যারিকেডে আগুনও লাগিয়ে দেওয়া হয়। পরে জমায়েত নিষিদ্ধ করে, ইন্টারনেট বন্ধ করে আশপাশের জেলা থেকে আনা হয়েছে পুলিশবাহিনী।
হিমন্ত আজ দিল্লিতে সিঙ্গাপুরের ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনার অ্যালিস চেং-এর সঙ্গে দেখা করে তদন্তে সিঙ্গাপুরের তরফে পূর্ণ সহযোগিতার অনুরোধ জানান। হিমন্ত এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, সিঙ্গাপুরের তরফে সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। অ্যালিস জ়ুবিনের মৃত্যুতে দুঃখপ্রকাশ করে সাংবাদিকদের বলেন, সিঙ্গাপুর পুলিশ ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চালাচ্ছে। তাঁরা অসমবাসীকে অনুরোধ জানাচ্ছেন, ঘটনার বিশদ তদন্ত চালাতে পর্যাপ্ত সময়-সুযোগ দেওয়া হোক। অসমবাসী একটু ধৈর্য ধরুন।
জ়ুবিনের সঙ্গে ইয়টে থাকা ১১ জন প্রবাসী অসমিয়ার মধ্যে আরও তিন জন, সুস্মিতা গোস্বামী, প্রতীম ভুঁইয়া ও দেবজ্যোতি হাজরিকা আজ সিআইডি দফতরে সাক্ষ্য দিতে হাজির হন। ফলে সিঙ্গাপুরে সমন জারি হওয়া ১১ জনের মধ্যে ১০ জনই সিট-এর কাছে হাজির হলেন। অসমের সমাজকর্মী তথা রাজ্য তৃণমূল সহ-সভাপতি দুলু আহমেদ সিঙ্গাপুর গিয়ে ওই ১১ জন প্রবাসী অসমিয়ার বিরুদ্ধে সমান্তরাল তদন্ত দাবি করে সেখানকার মেরিনা বিচ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
বাক্সার ঘটনার প্রসঙ্গে হিমন্ত দাবি করেন, “বিরোধীরা জ়ুবিনের মৃত্যুকে হাতিয়ার করে অসমের পরিবেশ নেপালের মতো অশান্ত করে তোলার ষড়যন্ত্র করছে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)