গুজরাতের বডোদরায় সেতু বিপর্যয়ে আরও জোরালো হচ্ছে প্রশাসনের গাফিলতির তত্ত্ব। যে কোনও সময় যে ওই সেতুটি ভেঙে পড়তে পারে, তা কয়েক বছর আগেই জানানো হয়েছিল গুজরাত সরকারকে। এমনকি এ-ও বলা হয়েছিল, কোনও অঘটন ঘটে গেলে দায় হবে সরকারের। সড়ক এবং আবাসন দফতরের এক ইঞ্জিনিয়ার মেনেও নিয়েছিলেন, ওই সেতুটি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে গিয়েছিল। অভিযোগ উঠছে, এত কিছু হওয়ার পরেও কোনও হেলদোল ছিল না প্রশাসনের।
গুজরাতের বডোদরায় মহিসাগর নদীর উপর গম্ভীরা সেতু বিপর্যয়ে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে মৃতের সংখ্যা। বুধবার বেশি রাতের দিকে আরও দু’জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। বেসরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা আরও বেশি। সংবাদমাধ্যম ‘টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সেতুর জীর্ণ দশা নিয়ে ২০২২ সাল থেকে দফায় দফায় প্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়। মোরবীতে সেতু বিপর্যয়েরও আগে থেকে সাবধান করা হচ্ছিল এই সেতুটি নিয়ে।
মোরবীতে ২০২২ সালের অক্টোবরে সেতু ভেঙে ১৩৫ জনের মৃত্যু হয়। তারও দু’মাস আগে অগস্টে গম্ভীরা সেতুর বেহাল দশা নিয়ে সে রাজ্যের সড়ক ও আবাসন দফতরকে চিঠি পাঠান বডোদরা জেলা পঞ্চায়েতের সদস্য হর্ষদসিংহ পরমার। সেতুর যা অবস্থা, তাতে যে কোনও সময় বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে বলে তখন থেকেই সতর্ক করে আসছিলেন তিনি। দ্রুত ওই সেতুটিকে বিপজ্জনক বলে ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছিলেন তিনি। ওই সেতুটিতে যান চলাচল বন্ধ করে নতুন সেতু তৈরি শুরু করতে বলেছিলেন তিনি। কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় সরকারেরই থাকবে, এ কথাও চিঠিতে জানিয়েছিলেন পরমার।
মোরবীর দুর্ঘটনার পরে ফের বডোদরার সেতুটি বেহাল দশা নিয়ে সরকারকে চিঠি পাঠান পারমার। গুজরাত সরকারকে পাঠানো ওই চিঠিগুলি ‘টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’র হাতে এসেছে। পারমার বলেন, “গাড়ি যাওয়ার সময় সেতুর পিলারগুলি কাঁপত। আমি বার বার বলেছিলাম ওই সেতুর স্বাস্থ্যপরীক্ষার রিপোর্টটি প্রকাশ্যে আনা হোক। কিন্তু আমাদের বলা হয়, বিষয়টি বিবেচনা করে দেখা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ ভাল ভাবেই জানতেন, ওই সেতুকে ভেঙে পড়তে পারে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হল কোনও পদক্ষেপই করা হয়নি।”
আরও পড়ুন:
দুর্ঘটনার পরে সড়ক ও আবাসন দফতরের কার্যনির্বাহী ইঞ্জিনিয়ার এন এম নায়কওয়ালা সংবাদমাধ্যমকে জানান, সেতুকে বড়সড় কোনও ত্রুটি ছিল না। তবে আরটিআই কর্মী এবং স্থানীয় নেতা লক্ষ্মণ দরবারের দাবি, ২০২২ সালে এক সরকারি ইঞ্জিনিয়ার তাঁকে জানিয়েছেন, ওই সেতুটি ব্যবহারের যোগ্য নয়। কিন্তু তার পরেও সেতুটি যান চলাচলের জন্য খোলা রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ দরবারের।