ইন্ডিগোর উড়ান বাতিলের জেরে যাত্রী হয়রানি পুরোপুরি শেষ হয়নি। তারই মধ্যে আজ এই বিতর্কে মুখ খুললেন কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী রামমোহন নায়ডু। ইন্ডিগোর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে রাজ্যসভায় এ দিন তিনি মন্তব্য করেন, ‘‘ওই সংস্থার বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যা অন্যদের সামনেও উদাহরণ হয়ে থাকবে।’’ ইন্ডিগো সঙ্কট নিয়ে আজ কেন্দ্রীয় সরকারকে পাল্টা নিশানা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উড়ান বিভ্রাট নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার যাতে পদক্ষেপ করে, সেই দাবি তুলেছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী। বিমান মন্ত্রকের সচিব সমীরকুমার সিন্হা জানিয়েছেন, গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্ট পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কয়েকদিন ধরে ইন্ডিগোর হাজার হাজার উড়ান বাতিল, যাত্রীদের চরম হেনস্থার পিছনে অবশ্য সংস্থাটির ‘অভ্যন্তরীণ সঙ্কট’কেই দায়ী করেছেন মন্ত্রী। রাজ্যসভায় নায়ডু বলেন, ‘‘আমরা পাইলট, বিমানকর্মী ও যাত্রীদের প্রতি নজর রাখি। সব বিমান সংস্থার কাছেই এই বিষয়টি আমরা স্পষ্ট করে দিয়েছি। কী ভাবে কর্মীদের কাজের সময় স্থির করা হবে, সে ব্যাপারে সঠিক পদক্ষেপ করা উচিত ছিল ইন্ডিগোর। কিন্তু যাত্রীরা অনেক দুর্ভোগ সহ্য করলেন। সেই পরিস্থিতিকে আমরা সহজ ভাবে নিচ্ছি না।’’ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর আরও মন্তব্য, ‘‘আমরা কঠোর পদক্ষেপ নেব। যা অন্য বিমান সংস্থাগুলির কাছেও উদাহরণ হয়ে থাকবে। অবাধ্য হলে কড়া ব্যবস্থার মুখোমুখি হতে হবে।’’ গত কয়েকদিন ধরে চলা সঙ্কটের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে ভারতের বিমান পরিবহণ ব্যবস্থায় ইন্ডিগোর মতো সংস্থার কার্যত একাধিপত্য নিয়ে। আর আজ নায়ডু জানিয়েছেন, বিমান পরিবহণ ক্ষেত্রে আরও বিমান সংস্থার যোগদান চায় কেন্দ্রীয় সরকার। ভারতে পাঁচটি বড় বিমান সংস্থার কাজের সুযোগ রয়েছে বলেই দাবি করেছেন তিনি।
এই প্রেক্ষাপটে ইন্ডিগোর উড়ান বিভ্রাট নিয়ে আজ কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোচবিহারের রবীন্দ্রভবনে মমতা বলেন, ‘‘দীর্ঘ সাত দিন ধরে মানুষ বিমানের টিকিট কেটে যাতায়াত করতে পারছেন না। হঠাৎ করে সব বন্ধ। কোনও পরিকল্পনা না করে।...পাইলটদের উপর যদি অতিরিক্ত চাপ হয়, তা হলে নিশ্চয়ই বিকল্প পরিকল্পনা থাকা উচিত। দুর্ভাগ্যজনক যে পরিকল্পনা ছাড়াই বিমান বন্ধ করা হল। দেশ জুড়ে হাজার হাজার যাত্রী দুর্ভোগে পড়েছেন। ভারত সরকারের উচিত এই বিপর্যয় নিয়ে নিশ্চিত ভাবে পদক্ষেপ করা।’’
সাম্প্রতিক সঙ্কট নিয়ে আজ বিমান নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিজিসিএ-র কাছে কারণ দর্শানোর নোটিসের জবাব পাঠিয়েছে ইন্ডিগো। যাত্রীদের কাছে দুর্ভোগ নিয়ে ক্ষমা চেয়ে নেওয়ার পাশাপাশি ইন্ডিগো কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, প্রাথমিক ভাবে তাদের মনে হয়েছে, বিভিন্ন কারণের ফলশ্রুতিতে এমন সঙ্কট তৈরি হয়েছে। এই কারণগুলির মধ্যে রয়েছে, কিছু যান্ত্রিক ত্রুটি, শীতের সময়ে উড়ানের সময় পরিবর্তন, খারাপ আবহাওয়া, বিমান পরিবহণ ব্যবস্থায় জট বেড়ে যাওয়া এবং বিমানকর্মীদের কাজের সময়সূচির মতো বিষয়গুলি। তবে সঙ্কটের প্রকৃত কারণ এখনই খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়, এ ব্যাপারে আরও সময়ের প্রয়োজন বলেই সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে।
সঙ্কট শুরু হওয়ার আগে ইন্ডিগো রোজ ২২০০ উড়ানের ব্যবস্থা করত। গত কয়েকদিন ধরে টানাপড়েন চলার পর বাতিল করা উড়ানের ভাড়া যাত্রীদের হাতে তুলে দিতে হচ্ছে তাদের। বিমান পরিবহণ মন্ত্রক সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত প্রায়৮২৭ কোটি টাকা ফিরিয়েছে তারা। তবে এরই মধ্যে ইন্ডিগো যখন আরও পাইলটের ব্যবস্থা করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টায় রয়েছে, সেই সময়েই তাদের প্রতিযোগী সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়া পাইলট নিয়োগ করার জন্য বিজ্ঞাপন দিয়েছে। সমাজমাধ্যমে এয়ার ইন্ডিয়ার তরফে এয়ারবাস এ৩২০ ও বোয়িং ৭৩৭ বিমান চালানোয় অভিজ্ঞ পাইলটদের চাকরিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘আকাশই সীমা নয়, এই শুধু শুরু।’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)