কী সেই ইতিহাস?
বিতর্ক আসলে গোড়া থেকেই। সেই ১৯৪৯-এ প্রথম বার রামলালার বিগ্রহ স্থাপন করা হয়েছিল বিতর্কিত কাঠামো চত্বরে। সেটাও ডিসেম্বর মাস। এক রাতে হঠাৎ নাকি তীব্র আলো ঝলসে উঠেছিল! ‘ভগবান রামচন্দ্র’ নাকি আবির্ভূত হয়েছিলেন বিতর্কিত ‘রামজন্মভূমি’ চত্বরে। পর দিন সকালে দেখা যায় বিতর্কিত কাঠামো চত্বরে রামের মূর্তি। কেউ বা কারা রেখে গিয়েছেন। দেওয়ালে দেওয়ালে গেরুয়া এবং হলুদ রঙে রাম ও সীতার ছবি আঁকা। অযোধ্যা থানার ওসি পণ্ডিত রামদেও দুবে যে এফআইআর রুজু করেছিলেন, তাতে তিন জনের নাম ছিল— অভিরাম দাস, রামসকল দাস, সুদর্শন দাস। আরও ৫০-৬০ জন অজ্ঞাত পরিচয় অভিযুক্তের কথাও উল্লেখ করা হয়েছিল। মহন্ত অভিরাম দাসের নেতৃত্বেই গেটের তালা ভেঙে বিতর্কিত কাঠামো চত্বরে ঢুকেছিল জনতা। মূর্তি রেখে এসেছিল তথাকথিত রামজন্মভূমিতে। এফআইআর-এ অন্তত তেমন কথাই লেখা হয়েছিল।
ভারতীয় গণতন্ত্র তার শুরু থেকে একটা বৈশিষ্ট্য আজও ধরে রেখেছে। এ দেশের জনসংখ্যার বড় অংশই নিজেকে হিন্দু বলে পরিচয় দেয়। সেই হিন্দু সমাজের যে সংখ্যালঘু উচ্চবর্ণীয় অংশ, তারাই কিন্তু আজও গোটা দেশের রাজনীতিতে প্রায় একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তার করে আছে। আজকের মেরুকরণের রাজনীতির এই রমরমা অবস্থা যে হঠাত্ নয়, তার একটা বড় কারণ লুকিয়ে আছে ওখানেই।
স্বাধীনতার আগে থেকে, এ দেশে হিন্দু সমাজের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশকে, অর্থাত্ নিম্নবর্ণীয়দের, জনসংখ্যার অনুপাতে সুযোগ, সুবিধা, এমনকী ক্ষমতা দেওয়ার দাবি উত্থাপিত হয়েছে। আবার একই সঙ্গে চলেছে সেই ব্রাহ্মণ্যবাদী স্রোত, যা হিন্দু-মুসলিম স্বার্থের বিভাজনকেই বড় করে দেখিয়েছে। ঘটনা হল, নিম্নবর্ণীয়দের বেশির ভাগটা কিন্তু আজও উচ্চবর্ণীয়দের দ্বারাই প্রভাবিত। তাই নয়ের দশকের গোড়ায়, একই সঙ্গে মণ্ডল এবং কমণ্ডল— দুই রাজনীতির যে দ্বৈরথ দেখা যায়, কমণ্ডল সেখানে অনায়াসেই বাজিমাত্ করে।
১৯৯০ সালে মণ্ডল কমিশন রিপোর্ট কার্যকর করার মাধ্যমে দেশের এক বিরাট জনসংখ্যাকে সংরক্ষণের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেন ভিপি সিংহ। বিজেপি তার বিরোধিতা করে সরকারের উপর থেকে সমর্থন তুলে নেয়। ভিপি-র পতন। দেশ জুড়ে বর্ণহিন্দুরা ভিপি-র কুশপুতুল পোড়ালেন, জুতো পালিশ করে প্রতিবাদ জানালেন, কেউ কেউ গায়ে আগুনও দিলেন। কিন্তু যাঁদের জন্য এই সংরক্ষণ, তাঁরা সংখ্যায় অনেক অনেক বেশি হলেও, দলে দলে বেরিয়ে আসেননি ভিপি-র পক্ষে। অন্য দিকে বিজেপি এই উগ্র উচ্চবর্ণীয় হাওয়াকে উস্কে দিলেও, বেশি দিন ধরে রাখেনি। বরং দ্রুতই তার মোড় ঘুরিয়ে দিল হিন্দু-মুসলিম বিভাজনের রাজনীতির দিকে।
সামনেই গুজরাত নির্বাচন। বিজেপি-র গোটা প্রচারপর্ব জুড়েই ছিল হিন্দুত্ববাদী সুর। সেই পুরনো রাজনৈতিক ‘খেলা’র চিত্রনাট্য। ফের উঠল মন্দির জিগির। ঘরপোড়া বলেই আসলে ডরটা জাগে।
আরও পড়ুন: বাবরি-রাম মন্দির বিতর্কের ইতিবৃত্ত জানতে চান? দেখুন টাইমলাইন