ভারতে এসে ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে তোপ দাগল ঢাকা।
ভারত-পাক টানাপড়েনের মধ্যেই বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু দিল্লি এসেছেন। সন্ত্রাস ছড়াতে পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়ে আজ প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন তিনি। ইনুর মতে, সন্ত্রাস প্রশ্নে পাকিস্তানের ভূমিকা বরাবরই খুব খারাপ। ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের পঁয়তাল্লিশ বছর কেটে গেলেও তাদের আচরণ বদলায়নি। বাংলাদেশের সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলার জন্য পাক দূতাবাসের কয়েক জন কূটনীতিককে ফেরতও পাঠিয়েছে ঢাকা। সন্ত্রাস মোকাবিলা নিয়ে দিল্লিতে ইনু আজ আলোচনা করেছেন ভারতের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডুর সঙ্গে।
ভারত-পাক বাগ্যুদ্ধের জেরে ক্রমশ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে ইসলামাবাদে নভেম্বর মাসে নির্ধারিত সার্ক বৈঠক। আর এই সময়েই সার্কের অন্যতম সদস্য বাংলাদেশের মন্ত্রীর পাক সমালোচনা তাৎপর্যের। সন্ত্রাস প্রশ্নে ভারতের পাশে দাঁড়িয়ে ইনুর মন্তব্য, ‘‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বাধীনতা দিবসে যা বলেছেন, ব্যাপারটা ঠিক তাই। পাকিস্তান সর্বত্র মৌলবাদ ও জঙ্গি নাশকতাকে সহায়তা করে চলেছে।’’
গুলশন কাণ্ডের পর নয়াদিল্লি এসেছিলেন সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এ বার বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী তিন দিনের সফরে এসে ইসলামের নামে সন্ত্রাসের প্রচার বন্ধ করার জন্য ভারতের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার কথা বলে গেলেন। সেই সঙ্গে আক্রমণ করলেন পাক সেনা ও গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইকে। ইনুর কথায়, ‘‘সন্ত্রাস নিয়ে পাকিস্তানের ভূমিকা অত্যন্ত খারাপ। যদি গণতান্ত্রিক বিশ্ব ব্যবস্থার মধ্যে থাকতে হয়, তা হলে জবাবদিহি করতে হবে তাদের।’’ শেখ হাসিনা সরকারের তথ্যমন্ত্রীর তোপ, ‘‘বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছিল বলে কিছু পাকিস্তানি কূটনীতিককে ফেরত পাঠাতে হয়েছিল আমাদের।’’
গুলশন কাণ্ডের পর পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর দিকে আঙুল তুলেছিল ঢাকা। আজও ইনু বলেন, ‘‘জামাত পাকিস্তানের মৌলবাদী জঙ্গিদের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে নাশকতা চালাচ্ছে। বাংলাদেশের সন্ত্রাসবাদের শিকড় লুকিয়ে রয়েছে পাকিস্তানের আইএসআই–জামাত নেটওয়ার্ক-এর ভিতর।’’ ইনু বলেন, বাংলাদেশে ব্লগার, সুফি ভাবনার মানুষদের উপর আক্রমণের যে ঘটনাগুলি ঘটেছে, তার নব্বই শতাংশের ক্ষেত্রে আক্রমণকারীদের সঙ্গে পাক মদতপুষ্ট জামাত-ই-ইসলামির যোগ পাওয়া গিয়েছে। তবে গুলশন কাণ্ডের সঙ্গে আইএস-এর যোগ এখনও স্পষ্ট হয়নি বলেই জানান তিনি।
নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দীর্ঘদিন বাদে দু’দেশের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রীর মধ্যে আলাদা করে বৈঠক হল। এই বৈঠক যে সন্ত্রাসবাদ ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে প্রচার কৌশল তৈরি করার জন্যই, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন ইনু। জানিয়েছেন, বেঙ্কাইয়া নায়ডুর সঙ্গে আলোচনায় স্থির হয়েছে শীঘ্রই দু’দেশের মধ্যে তথ্যের আদানপ্রদান বাড়াতে একটি সমঝোতাপত্র সই হবে। ভারত এবং বাংলাদেশের সরকারি প্রচার মাধ্যম তথা দূরদর্শন ও আকাশবাণীর সঙ্গে বাংলাদেশের টিভি এবং রে়ডিও গাঁটছড়া বাঁধছে। বাংলাদেশের মন্ত্রী বলেন, ‘‘এর ফলে মগজ ধোলাইয়ের জন্য প্রচারিত মৌলবাদী ও জঙ্গি মতাদর্শের মোকাবিলা দু’দেশেই সহজ হবে।’’ দু’দেশের তথ্যমন্ত্রীর বৈঠকে বিতর্কিত ধর্মপ্রচারক জাকির নাইকের প্রসঙ্গও উঠেছিল। বাংলাদেশ জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই তারা পিস টিভি-র সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে। এখন ভারত কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা ঢাকাকে জানাক। দু’দেশের মধ্যে সিনেমার যৌথ প্রযোজনা, তথ্যচিত্র তৈরির মতো বিষয়গুলি নিয়ে কথা হয়েছে। ২৩ অগস্ট আকাশবাণী মৈত্রী পরিষেবা চালু হবে কলকাতার রাজভবনে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে।